বয়ান, জিকির-আসকার, ইবাদত-বন্দেগি, আখেরি মোনাজাত শেষে ফিরছেন মুসল্লিরা। তবে ইজতেমা উপলক্ষে রাস্তায় যানচলাচলে নিয়ন্ত্রণ থাকায় সবাই পায়ে হেঁটেই ফিরছেন। তুরাগ তীর থেকে পায়ে হেঁটে আসার পর উত্তরা হাউজ বিল্ডিং থেকে কিছু কিছু বাস চলছে। তবে বাসগুলো অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে মুসল্লিদের কাছে থেকে।
হাউস বিল্ডিং থেকে গুলিস্তান বা যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত বাসগুলো ১০০-১২০ টাকা চুক্তিতে যাত্রীদের ডাকছে। কিছু কিছু পিকআপ গাড়ি কুড়িল বা মহাখালী পর্যন্ত ৫০ টাকায় যাত্রী পরিবহন করছে। অন্যদিকে সিরিয়াল করে দাঁড়িয়ে আছে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, যারা অল্প দূরত্বে চারজন করে যাত্রীদের পৌঁছে দিচ্ছেন জনপ্রতি ১০০ টাকা ভাড়া আদায়ের মাধ্যেমে। বাকি মুসল্লিরা পায়ে হেঁটেই কুড়িল বিশ্বরোড বা মহাখালী পর্যন্ত যেতে বাধ্য হচ্ছেন। ফলে ইজতেমায় অংশ গ্রহণ শেষে ফিরতি পথে বিড়ম্বনায় পড়েছেন মুসল্লিরা।
তুরাগ তীরে ইজতেমায় অংশ নিয়ে হাউস বিল্ডিং পর্যন্ত হেঁটে এসেছেন যাত্রাবাড়ীর বাসিন্দা আফছার আলী। তিনি বলেন, এ পর্যন্ত হেঁটে আসার পর এখান থেকে কিছু কিছু বাস যাত্রাবাড়ীর দিকে যাচ্ছে। কিন্তু তারা ভাড়া নির্ধারণ করেছে ১০০-১২০ টাকা। তারা মানুষকে জিম্মি করে ভাড়া আদায় করছে। বাসের সংখ্যাও কম। অসহায় যাত্রীরা অনেকেই বাধ্য হয়ে যাচ্ছেন। আর যাদের কাছে ভাড়া বেশি মনে হচ্ছে তারা পায়ে হেঁটেই চলেছেন কুড়িল বিশ্বরোড বা মহাখালীর দিকে। এরপর সেখান থেকে বাসে উঠছেন।
ইজতেমা থেকে ফেরা আরেক মুসল্লি মুকিদুর রহমান বলেন, ‘আমরা ৮ জন মিলে ইজতেমায় এসেছিলাম। হাউস বিল্ডিং থেকে এখন যাব গুলিস্তান। কিন্তু অল্প সংখ্যক বাস আছে, যারা অতিরিক্ত ভাড়া চাচ্ছে। ভাড়া ১০০ টাকা দিতে চাইলেই কেবল তারা বাসে যাত্রী তুলছে। যে কারণে আমরা হেঁটেই কুড়িল বিশ্বরোড পর্যন্ত যাচ্ছি। এরপর ওখানে গিয়ে কোনো বাস পেলে গুলিস্তানের দিকে যাব।’
হাউস বিল্ডিং থেকে গুলিস্তান যাওয়া আকাশ সুপ্রভাত বাসের চালক হাবিবুর রহমান বলেন, ‘আমরা এখান থেকে যাত্রী নিয়ে বের হয়ে গেলে যানচলাচল স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত আর এদিকে আসতে পারব না। সারাদিনের ট্রিপ কমে যাবে। এছাড়া রয়েছে তীব্র যানজট। যে কারণে একটু বেশি ভাড়া নিতে হচ্ছে।’
তিনি বলেন, কিছু পরে যখন গণপরিবহন চলাচল স্বাভাবিক হয়ে যাবে তখন আবার ভাড়া কমে যাবে। তারপরও আমরা খুব বেশি যাত্রী পাচ্ছি না। মুসল্লিরা পায়ে হেঁটেই বেশি যাচ্ছেন।
দ্বিতীয় পর্বের আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে ৫৫তম বিশ্ব ইজতেমার সমাপ্তি হলো আজ। আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করেন দিল্লির মাওলানা জমশেদ। আখেরি মোনাজাত উপলক্ষে ইজতেমায় অংশগ্রহণকারীদের সুবিধার্থে ১৬টি বিশেষ ট্রেন চলাচল করছে। সব আন্তঃনগর ট্রেন টঙ্গীতে যাত্রা বিরতি করবে।
বিআরটিসির শতাধিক বিশেষ বাস সার্ভিস চালু আছে। মোনাজাত উপলক্ষে টঙ্গী ও আশপাশ এলাকায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
বিশ্ব ইজতেমার আখেরি মোনাজাতে অংশ নেয়ার জন্য রোববার সকাল থেকে ১৬টি বিশেষ ট্রেন যাতায়াত করছে। সকল ট্রেন টঙ্গী রেলস্টেশনে যাত্রা বিরতি করবে। ইজতেমাস্থল থেকে চৌরাস্তামুখী ৩০টি এবং মহাখালীমুখী ৩০টি বাস চলাচল করছে। মোনাজাত শেষে এ বাসের সংখ্যা আরও বেড়ে যায়।
বিশ্ব ইজতেমা সূত্র জানায়, ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বে ৩৫টি রাষ্ট্রের প্রায় আড়াই হাজার মুসল্লি যোগ দিয়েছেন। এ বছর বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব শুরু হয় ১০ জানুয়ারি। আর ১২ জানুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে মাওলানা জুবায়ের অনুসারীদের প্রথম পর্ব শেষ হয়। প্রথম পর্বে ৬৪টি জেলার মুসল্লিরা অংশ নেন। দ্বিতীয় পর্বের ইজতেমাতেও দিল্লির মাওলানা সা’দ অনুসারী ৬৪ জেলার মুসল্লিরা অংশ নিয়েছিলেন।
উল্লেখ্য, ১৯৬৭ সাল থেকে তুরাগ তীরে বিশ্ব ইজতেমা নিয়মিত অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ১৯৯৬ সালে একই বছর দুবার বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। স্থান সংকুলান না হওয়ায় এবং মুসল্লিদের চাপ ও দুর্ভোগ কমাতে ২০১১ সাল থেকে দুই পর্বে ইজতেমা আয়োজন করা হচ্ছে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন