গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার হরিনাবাড়ী পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের সাবেক ইনর্চাজ (পরিদর্শক) কামাল হোসেনের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, সাধারণ মানুষকে হয়রানি, অন্যায়ভাবে আটক করে তদন্ত কেন্দ্রে নিয়ে নির্যাতন করে মোটা অঙ্কের অর্থ আদায়, টাকার বিনিময়ে আসামি ধরা-ছাড়াসহ উদ্ধারকৃত মালামাল আদালতকে না জানিয়ে গোপনে বিক্রির অভিযোগ পাওয়া গেছে।
পুলিশ পরিদর্শক কামাল হোসেন মাস দেড়েক আগে সেখান থেকে বদলি হয়ে বর্তমানে গাইবান্ধা এ সার্কেল অফিসে কর্মরত আছেন। সেখানে কর্মরত থাকাকালে তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা আদালতে দায়ের করেছেন ভুক্তভোগীরা। এর মধ্য সম্প্রতি একটি মামলার বাদী উপজেলার ঘোড়াবান্দা এলাকার আলতাব মহুরীর স্ত্রী মাহানুর বেগমের সাথে দফারফা করে আপোষ-মিমাংসা করেছেন তিনি।
মামলায় উল্লেখ করা হয়, ২০১৮ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার বিকেলে তদন্ত কেন্দ্রের ইনর্চাজ কামাল হোসেনের নির্দেশে এসআই মিজান সঙ্গীয় ফোর্সসহ বাদীনীর বাড়িতে হানা দেয়। এসময় মাহানুর বেগমের বাড়িতে বেড়াতে আসা আত্মীয় দিনাজপুর জেলার ঘোড়াঘাট থানার রানীগঞ্জ বাজার কুটিপাড়া এলাকার মৃত আব্দুল জোব্বারের ছেলে ড্রাইভার আব্দুর রউফকে কোনো কারণ ছাড়াই আটক করে ফাঁড়িতে নিয়ে যায়।
এর ঘণ্টাখানেক পরে মাহানুর ও তার স্বামী আলতাব হোসেন ফাঁড়িতে গিয়ে ইনর্চাজ কামাল হোসেনের কাছে তার আত্মীয়কে আটকের কারণ জানতে চান। এসময় পরির্দশক কামাল হোসেন এই দম্পতির সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ ও ভয়-ভীতি দেখিয়ে আলতাব মহুরীকেও আটক করে হাজতে রাখেন। পরে আটককৃত দু’জনকে ছেড়ে দিতে মাহানুরের কাছে ২০ হাজার টাকা দাবি করেন এসআই মিজান। এরপর ওই রাতেই মাহানুরের কাছে ১৭ হাজার টাকা নিয়ে তাদের হাজতখানা থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
এই ঘটনায় মাহানুর বেগম বাদী হয়ে ২৫ ফেব্রুয়ারি দন্ডবিধির ৩৪২/৩৮৫ ধারায় (অন্যায়ভাবে আটকে রেখে চাঁদা দাবির) অভিযোগে ফাঁড়ির ইনচার্জ কামাল হোসেন ও এসআই মিজানের বিরুদ্ধে পলাশবাড়ী আমলী আদালতে মামলা করেন। নম্বর সিআর ৪৭/১৮। পরে মোটা অঙ্কের টাকায় দফারফা করে মিমাংসা হয়। এসআই মিজান বর্তমানে রংপুর জেলার তারাগঞ্জ থানায় কর্মরত আছেন। ওই ঘটনার পর পরই ফেব্রুয়ারি মাসেই বদলি হন তিনি।
এবিষয়ে পুলিশ পরিদর্শক ও এসআই মিজান বলেন, ভুল বোঝাবোঝির কারণে মামলাটি হয়। পরে বাদীনী নিজ উদ্যোগে মামলাটি প্রত্যাহার করে নেন।
এদিকে আরও একটি মামলার বাদীকে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য বিভিন্ন ভাবে চাপ প্রয়োগ করছেন পুলিশ কর্মকর্তা কামাল হোসেন। মামলার বাদী হরিনাথপুর ইউনিয়নের মরাদাতেয়া গ্রামের মৃত মজিবর রহমানের ছেলে কৃষক আমজাদ হোসেন। তিনি বলেন, গাইবান্ধা সদর উপজেলার বাদিয়াখালী ইউনিয়নের গোয়াইলবাড়ী গ্রামের মধু মিয়ার মেয়ে মিনির সাথে আমার ভাতিজা আপেল মিয়ার বিয়ে হয়। তাদের অভাব অনটনের সংসারে স্বামী-স্ত্রীর মধ্য প্রায় ঝগড়া বিবাদ হতো। এলাকায় কাজ না থাকায় আপেল মিয়া টাকা রোজগারের জন্য ঢাকায় যায়। কয়েক মাসেও বাড়িতে ফিরে না আসায় মিনি বেগম হরিনাবাড়ী পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে অভিযোগ করলে ফাঁড়ির ইনর্চাজ কামাল হোসেন আপেলকে বাড়িতে ফিরিয়ে আনতে আমাকে চাপ দেন। আমি অনেক খোঁজাখুঁজি করে আপেলের সাথে যোগাযোগ করতে ব্যর্থ হই। পরে আপেলকে পাওয়া যায়নি এই বিষয়টি ইনর্চাজ কামাল হোসেনকে অবগত করি। এরপর ২০১৯ সালের ২৫ আগস্ট রাত আটটার দিকে মিনি বেগম একদল পুলিশ সাথে নিয়ে আমার বাড়িতে হানা দেয় এবং আপেলকে তাদের সামনে হাজির করতে বলে। এতে আমি অপারগতা প্রকাশ করলে নানা ধরনের ভয়-ভীতি ও হুমকি দেন পুলিশ কর্মকর্তা ( ইনর্চাজ) কামাল হোসেন। এসময় ফাঁড়ি ইনচার্জ কামাল হোসেন আমার কাছে দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। আমি রাজি না হওয়ায় ইনর্চাজ কামালের নির্দেশে এসআই কামাল উদ্দিন ও কনস্টেবল আনোয়ার হোসেন আমার ঘরের দরজা লাথি মেরে ভেঙে ফেলে। তখন অপরিচিত অন্যান্য পুলিশ সদস্য ও মিনি বেগমের লোকজন আমার ঘরে থাকা সোনার গহনা, নগদ টাকা, আসবাবপত্র সহ বিভিন্ন মালামাল লুট করে তিনটি অটোরিকশাযোগে নিয়ে যায়। এই ঘটনার তিনদিনপর ২৮ আগস্ট পুলিশ কর্মকর্তা (ক্যাম্প ইনচার্জ) কামাল হোসেন, এসআই কামাল উদ্দিন ও কনস্টেবল আনোয়ার হোসেন ও মিনি বেগম সহ ১০ জনের বিরুদ্ধে পলাশবাড়ী আমলী আদালতে একটি মামলা দায়ের করি। নম্বর সিআর ২০৩/১৯। এসআই কামাল উদ্দিন বর্তমানে পলাশবাড়ী থানায় কর্মরত আছেন।
আমজাদ হোসেন অভিযোগ করেন, মামলা করার পর থেকেই ইনচার্জ কামাল তাকে মামলা তুলে নিতে বিভিন্নভাবে চাপ প্রয়োগ করে আসছেন। নানা ধরনের ভয়-ভীতি ও হুমকি অব্যাহত রেখেছেন। হুমকি দিচ্ছেন, যেখানেই পাবে সেখান থেকেই তুলে নিয়ে ডাকাতি সহ বিভিন্ন মামলায় চালান দিবে, মাদক মামলায় জেলে পাঠাবে, জামাত-শিবির কর্মী বানিয়ে ক্রসফায়ার দেবে।
আমজাদ হোসেন বলেন, আমি পুলিশের এই অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে গিয়ে তাদের বিচার দাবি করে আদালতের স্মরণাপন্ন হয়েছি। এখন তাদের ভয়ে দিনে বাড়িতে ও এলাকায় ক্ষেতে খামারে কাজ করলেও রাতে বাড়িতে থাকার সাহস পাই না। এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত পুলিশ পরির্দশক কামাল হোসেন ও এসআই কামাল উদ্দিন কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
ব্রেকিংনিউজ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন