জন্ম থেকে দুটি হাত নেই তামান্না আক্তারের। নেই ডান পা। আছে শুধু বাম পা। সেই পা দিয়েই লিখেই গতবছর এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়েছিল মেধাবী তামান্না নূরা। সে সময় অনেকেই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন এই মেয়েটির পাশে থাকার, লেখাপড়ায় সহযোগিতার। কিন্তু সময় যত গড়িয়েছে সরে গেছেন প্রতিশ্রুতি দেওয়া অনেকেই। তামান্না নূরার উচ্চ মাধ্যমিকের লেখাপড়া চালিয়ে নিতে সংগ্রাম করতে হচ্ছে তার পরিবারকে। কঠিন বাস্তবতায় মেধাবী এই মেয়েটির লেখাপড়ার ভবিষ্যৎ ক্রমেই আধারে ঢেকে যাচ্ছে।
তামান্নার বাবা যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার বাঁকড়া ইউনিয়নের আলিপুর গ্রামের রওশন আলী আশাবাদী মানুষ। তার পরও কষ্টের কথা বলতে গিয়ে একটু যেন হতাশার সুরও বাজলো তার অভিমাসি কণ্ঠে। আপনারা মেয়েটিকে ভালোবাসেন, খোঁজখবর ও রাখেন। কিন্তু অনেকেই খোঁজ রাখেনি। যারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তারাও পরে ফিরে তাকায়নি।
তামান্নার মা খাদিজা পারভীন একজন গৃহিণী। তিন ভাইবোনের মধ্যে তামান্না সবার বড়। ছোট বোন মুমতাহিনা রশ্মি চর্তর্থ শ্রেণিতে পড়ে। ভাই মুহিবুল্লা তাজের বয়স পাঁচ বছর।
তামান্নার মা খাদিজা পারভীন বলেন, ‘২০০৩ সালের ১২ ডিসেম্বর তামান্নার জন্ম। ওর জন্মের পর কষ্ট পেয়েছিলাম। পরে ভেবেছি, ওকে কারও বোঝা হতে দেওয়া ঠিক হবে না।’
তামান্নার পরিবার জানায়, যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার বাঁকড়া জেকে হাইস্কুল থেকে ২০১৯ সালে এসএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছিল মেয়েটি। এসএসসি পাসের পর তামান্না এখন বাঁকড়া ডিগ্রি কলেজে বিজ্ঞান বিভাগে একাদশ শ্রেণিতে লেখাপড়া করছে। এখানেও সে মেধার সাক্ষর রেখে চলেছে।
এ বিষয়ে কলেজের অধ্যক্ষ সামছুর রহমান জানান, তামান্না অর্ধবার্ষিক পরীক্ষায় কলেজে প্রথম স্থান অধিকার করেছে। কলেজে তার লেখাপড়ার দিকে বাড়তি নজর দেওয়া হচ্ছে।
তামান্নার বাবা রওশন আলী তিনি জানান, বিজ্ঞানের তিনটি বিষয়ে তাকে প্রাইভেট পড়তে হয়। কিন্তু এই শিক্ষকদের ন্যূনতম বেতন দেয়ার অবস্থাও তার নেই। সব মিলিয়ে মাসে অন্তত ১০ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে মেয়ের লেখাপড়ার পেছনে। তাই কোনো প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি যদি এ খরচের জন্য একটি মাসিক বৃত্তির ব্যবস্থা করতেন তাহলে হয়তো মেয়েটি তার মেধার বিকাশ ঘটাতে পারতো।
রওশন আলী আরও বলেন, সংবাদ প্রকাশ হওয়ার পর অনেকে তামান্নার উচ্চশিক্ষার বিষয়ে যাবতীয় খরচ বহনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। পরে তারা আর খোঁজ নেয়নি। সে সময় ঝিকরগাছা উপজেলা প্রশাসন থেকেও তামান্নার লেখাপড়ার দায়িত্ব নেয়ার কথা বলা হয়েছিল।
অবশ্য উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় একটি দুর্যোগ সহনীয় ঘর, উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা নির্মাণ, বাংলাদেশ ডিবেটিং সোসাইটি ও একজন কানাডা প্রবাসি আর্থিক সহযোগিতা করেছেন। কিন্তু নিয়মিত লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়ার জন্য তা অপ্রতুল।
এ প্রসঙ্গে ঝিকরগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাধন কুমার বিশ্বাস জানান, বিদায়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। আমরা উপজেলার পক্ষ থেকে দুর্যোগ সহনীয় ঘরসহ কিছু সহযোগিতা করেছি। সর্বশেষ ঝিকরগাছার একটি উন্নয়ন সংস্থা ‘জেডিও’ থেকে দেড় হাজার টাকা বৃত্তির ব্যবস্থা করা হয়েছে। যদিও তা অপ্রতুল। মেয়েটিকে কীভাবে একটু সহযোগিতা করা যায় তা আমাদের বিবেচনায় রয়েছে।
ব্রেকিংনিউজ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন