গাজীপুরের রওজা হাইটেক লাক্সারি ফ্যান কারখানাটির কোনো ধরনের অনুমোদন ছিল না বলে জানিয়েছেন কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। আজ সোমবার সকালে তারা কারখানা পরিদর্শন করে এমন তথ্য দেন।
গতকাল রোববার সন্ধ্যায় কারখানাটিতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এতে দশজন নিহত ও বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।
সোমবার কারখানাটি পরিদর্শন শেষে কর্মকর্তারা জানান, স্থানীয় একটি দোতলা আবাসিক ভবন ভাড়া নিয়ে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণভাবে উপরে টিনের শেড নির্মাণ করে ফ্যান তৈরির কারখানা গড়ে তোলা হয়। তৃতীয় তলায় আগুনের সূত্রপাত হলেও নিচে নামার জন্য বিকল্প পথ (সিড়ি) না থাকায় ভেতরে আটকে দগ্ধ হয়ে মারা যান শ্রমিকরা। কারখানা স্থাপনে কোনো ধরনের নিয়ম মানা হয়নি, তাদের কাছে কারখানা স্থাপনের জন্য কোনো ধরনের আবেদনও করেনি এই কারখানা কর্তৃপক্ষ।
কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদপ্তরের যুগ্ম মহাপরিদর্শক (সেফটি) প্রকৌশলী ফরিদ আহমেদ আমাদের সময়কে বলেন, ‘পরিদর্শন করে দেখা যায়, অপরিকল্পিতভাবে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় কারখানাটি পরিচালিত হয়েছিল। এতে অগ্নিকাণ্ডের পর কারখানায় থাকা বিভিন্ন ধরনের দাহ্য পদার্থের মাধ্যমে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। নিচে নামার জন্য বিকল্প পথ না থাকায় শ্রমিকরা আটকে পড়ে। এতে তৃতীয় তলায় থাকা অধিকাংশ শ্রমিক মারা যায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘এ ঘটনায় কারখানা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে শ্রম আদালতে মামলা দায়ের করা হবে। এ ছাড়া আইন অনুযায়ী নিহত ও আহতদের কারখানার মালিকের পক্ষ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এদিকে শনাক্ত হওয়ার পর নিহত ১০ জনের লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে। তারা হলেন গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার মার্তা গ্রামের কামাল হোসেনের ছেলে রাশেদ (৩৪), নজরুল ইসলামের ছেলে শামীম (২২), সদরের কেশরিতা গ্রামের বীরবল চন্দ্র দাসের ছেলে উত্তম চন্দ্র দাস (১৮), একই উপজেলার কালনী গ্রামের সাইফুল ইসলামের ছেলে ফয়সাল খান (২০), গাজীপুর নগরীর নোয়াগাঁও এলাকার লালমিয়ার ছেলে পারভেজ (১৯), ময়মনসিংহের কোতোয়ালি থানার রাঘবপুর গ্রামের সেলিমের ছেলে তরিকুল ইসলাম (১৯), রংপুরের হারাগাছের কাচু বকুলতলা গ্রামের তাজুল ইসলামের ছেলে ফরিদুল (২৩), নরসিংদীর বেলাবের চর কাশিনগর গ্রামের মাজু মিয়ার ছেলে সজল (২০), ব্রাক্ষণবাড়ীয়ার বাঞ্জারামপুরের মোরশেদ মিয়ার ছেলে ইউসুফ (৩০) এবং দিনাজপুরের কাহারোলের বারপাইটা গ্রামের আব্দুল হামিদের ছেলে লিমন (১৯)।
গাজীপুরের জেলা প্রশাসক এস এম তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘সোমবার লাশ হস্তান্তরের সময় জেলা প্রশাসন ঘোষিত ২৫ হাজার টাকা এবং মালিকের পক্ষ থেকে আরও ২০ হাজার টাকা প্রতিলাশের স্বজনদের দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আরও ৫০ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে।’
প্রসঙ্গত, রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৫টার দিকে আগুনের সূত্রপাত হলেও ফায়ার সার্ভিস সন্ধ্যা ৫টা ৫২ মিনিটে ওই কারখানার তিনতলা ভবনের তৃতীয় তলায় আগুন লাগার খবর পায়। পরে তাদের স্টেশনের চারটি ইউনিটের কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে আগুন নিভে যায়।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন