মরহুম মো. মজিবুল হক। মৃত্যুর পরও স্থানীয়দের কাছে ‘নয়া ভাই’ নামে পরিচিত তিনি। বঙ্গবন্ধুর সহপাঠী ও বন্ধু ছিলেন মজিবুল হক। দীর্ঘ ৪০ বছর ছিলেন বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। ছিলেন মুক্তি সংগ্রাম পরিষদের সভাপতিও।
এরপরও সদ্য প্রকাশিত রাজাকারের তালিকায় নাম এসেছে তার। এতে ক্ষুব্ধ হয়েছেন স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা। রোববার (১৫ ডিসেম্বর) সচিবালয়সংলগ্ন সরকারি পরিবহন পুল ভবনের ছয়তলায় মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে সংবাদ সম্মেলনে রাজাকারের তালিকা ঘোষণা করা হয়।
Sun
00:00
Previous
PauseNext
00:00 / 00:00
Unmute
Fullscreen
Copy video url
Play / Pause
Mute / Unmute
Report a problem
Language
Mox Player
পারিবারিক সূত্র ও স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা জানিয়েছেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহচর ছিলেন মো. মজিবুল হক নয়া ভাই। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে কলকাতার ইসলামিয়া কলেজে পড়াশোনা করেছেন তিনি। বেকার হোস্টেলে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে থেকেছেন মজিবুল হক। মুক্তি সংগ্রাম পরিষদ গঠন থেকে শুরু করে ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত পাথরঘাটা সংগঠনের সভাপতি ছিলেন নয়া ভাই। পাথরঘাটা উপজেলা আওয়ামী লীগের টানা ৪০ বছর সভাপতি ছিলেন তিনি, ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আস্থাভাজন।
মুক্তিযুদ্ধ শুরুর পর পাথরঘাটার প্রত্যন্ত গ্রামে নয়া ভাইয়ের বাড়িতে আশ্রয় ও প্রশিক্ষণ নিয়েছেন মুক্তিযোদ্ধারা। আশ্রয় নিয়েছেন মুক্তিকামী মানুষও। স্বাধীনতার স্বপক্ষের সংগঠক ও মুক্তিকামী মানুষ এবং মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতাকারী মজিবুল হক নয়া ভাইয়ের নাম সদ্য প্রকাশিত রাজাকারের তালিকায় আসায় ক্ষুব্ধ পরিবারের সদস্যরাও।
এ বিষয়ে মজিবুল হকের স্ত্রী নুরজাহান বেগম (৮৭) বলেন, আমার স্বামী ২০০৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর মারা গেছেন। তিনি বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে রাজনীতি করেছেন। সংগ্রাম পরিষদ পরিচালনা করেছেন। যুদ্ধের সময় আমাদের বাড়িতে আশ্রয় নেয়া মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিকামী মানুষের ভরণ-পোষণ দিয়েছেন। আজ সেই মানুষটা কি করে রাজাকার হয়? এর বিচার হবে। এর বিচার করবেন শেখ হাসিনা।
নুরজাহান বেগম বলেন, বঙ্গবন্ধু আমার স্বামীর কাঁধে হাত দিয়ে হাঁটতেন। শেখ হাসিনা আমার স্বামীর পায়ে হাত দিয়ে সালাম করতেন। দূরে বসলে তাকে কাছে টেনে বসাতেন শেখ হাসিনা। সেই মানুষটা কি করে রাজাকার হলো, তা আমি জানতে চাই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমি এর বিচার চাই।
বরগুনা জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ডেপুটি কমান্ডার আবদুল মোতালেব মৃধা বলেন, মারা যাওয়ার এত বছর পর আবার ষড়যন্ত্রের শিকার হলেন মজিবুল হক নয়া ভাই। তিনি কখনও রাজাকার ছিলেন না। ছিলেন বঙ্গবন্ধুর সহপাঠী ও বন্ধু। ছিলেন স্বাধীনতার সংগঠক। দীর্ঘ ৪০ বছর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন নয়া ভাই। ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত ছিলেন মুক্তি সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি। রাজাকারের তালিকা থেকে তার নাম বাদ দিতে হবে। তার নাম কি করে রাজাকারের তালিকায় এসেছে তা খতিয়ে দেখতে হবে। এই তালিকা কারা করেছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। নয়তো আন্দোলনে নামবে মুক্তিযোদ্ধারা।
এ বিষয়ে বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক সাংগঠনিক কমান্ডার ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, মজিবুল হক নয়া ভাই মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ছিলেন। ছিলেন আওয়ামী লীগের একনিষ্ঠ কর্মী ও নেতা। তার বাড়িতে মুক্তিযোদ্ধারা আশ্রয় নিয়েছেন, প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। তারমতো একজন মানুষের নাম রাজাকারের তালিকায় আসায় মুক্তিযোদ্ধারা ক্ষুব্ধ এবং লজ্জিত। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানিয়ে প্রতিবাদ শুরু করেছি। আমরা চাই নয়া ভাইয়ের নাম দ্রুত সময়ের মধ্যে রাজাকারের তালিকা থেকে বাদ দেয়া হোক।
দেশের বিভিন্ন স্থানে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়া মো. আবদুল হালিম ওরফে কমরেড হালিম জাগো নিউজকে বলেন, মুক্তিযুদ্ধ শুরুর পর মজিবুল হক নয়া ভাই তার বাড়িতে মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় দেয়ার পাশাপাশি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছেন। পরে পাকিস্তানি বাহিনীর মেজর নাদের পারভেজ নয়া ভাইকে আটক করেন। এরপর মুক্তিকামী মানুষদের সহযোগিতা না করার শর্তে প্রাণভিক্ষা পান নয়া ভাই। এরপরও তিনি থেমে থাকেননি। গোপনে মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিকামী মানুষের সহযোগিতায় করেছেন নয়া ভাই।
এ বিষয়ে বরগুনার জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. মোস্তাইন বিল্লাহ বলেন, বরগুনা জেলা প্রশাসন বিষয়টি জেনেছে। রাজাকারের তালিকাটি কেবল প্রকাশিত হয়েছে। মজিবুল হক নয়া ভাই রাজাকার ছিলেন না। বিষয়টি তদন্ত করে আমরা যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন