লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে ছিনিয়ে এনেছিল স্বাধীনতা। বিশ্বের মানচিত্রে যোগ হয়েছে স্বাধীন বাংলাদেশ ও লাল-সবুজ পতাকা। আর এ দেশ পরাধীনতার শৃঙ্খলমুক্ত করতে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণে উজ্জীবিত হয়ে বাঙালি জাতির মুক্তির সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল লাখো লাখো বাঙালির বীর দামালেরা। বীর দামালদের মধ্যে বগুড়ার কাহালু উপজেলার উলট্ট গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা আ. হামিদও ঝাঁপিয়ে পড়ে এদেশ স্বাধীন করতে সহায়ক ছিল। দেশ পরাধীনতার হাত থেকে মুক্ত করলেও রোগমুক্ত করতে পারেনি শরীর থেকে। তার ফুসফুসে বাসা বেঁধেছে ক্যানসার। রোগে-শোকে কাতর এই মুক্তিযোদ্ধা বর্তমানে জরাজীর্ণ মাটির ভাঙা বাড়িতেই পরিবার পরিজন নিয়ে বসবাস করে নানা কষ্টে মধ্যেই জীবন যাপন করছেন।
কাহালু পৌরসভার উলট্ট গ্রামে আ. হামিদ ১৯৫২ সালের ১২ জুন এক মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭১ সালে দশম শ্রেণির ছাত্র ছিলেন তিনি। ২৫ মার্চের কালো রাতে পাকিস্থানি হানাদার বাহিনী গণহত্যা শুরু করলে ওই সময় আ. হামিদ দেশের নিরীহ মানুষের কথা বিবেচনা করে ঘরে বসে থাকতে পারেননি। ১৯৭১ সালের এপ্রিল মাস থেকে যখন এ দেশের সূর্য-সন্তানেরা মুক্তিযুদ্ধের জন্য প্রশিক্ষণ নিতে ভারতে যান তখন আ. হামিদও প্রশিক্ষণ নেওয়ার জন্য ভারতের বোয়ালদা ক্যাম্পে যান। তিনি তৃতীয় ব্যাচে ট্রেনিং নিয়ে দেশকে শত্রুমুক্ত করতে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন।
আ. হামিদ ন্যাপ ছাত্র ইউনিয়ন ও সিপিবি যৌথ গেরিলা বাহিনীর সদস্য হিসেবে পাঁচবিবি, জয়পুরহাট এলাকায় পাকিস্থানি বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ করেছেন। ৭ নম্বর সেক্টরে নুরুল আনোয়ার বাদশার নেতৃত্বে তিনি যুদ্ধ করেছেন বলে এই প্রতিবেদককে জানান।
মুক্তিযোদ্ধা সনদপত্র ও মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রকাশিত গেজেট থেকে দেখা গেছে, আ. হামিদের মুক্তিবার্তা নম্বর ০৩০৬১১০০৩৩ ও গেজেট নম্বর ১৯১৮।
জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডর সূত্রে জানা গেছে, তিনি মুক্তিযুদ্ধের সময় একজন গেরিলা যোদ্ধা ছিলেন। বর্তমানে এই গেরিলা যোদ্ধা অসুখ-বিসুখ আর আর্থিক অভাব-অনটনে একেবারে ভেঙে পড়েছেন। পরিবারে তার ৪ ছেলে ও ২ কন্যা সন্তানের থাকলেও ২ কন্যাকে বিয়ে দিয়েছেন। ৪ ছেলের মধ্যে বড় ছেলে আরিফুল বলতে গেলে বেকার। দ্বিতীয় ছেলে আশিকুল মাস্টার্স পাস করে কাহালু মুক্তিযোদ্ধা টেকনিক্যাল অ্যান্ড স্কুলে চাকরিতে যোগদান করলেও তার কোনো বেতন হয়নি। তৃতীয় ছেলে আসাদুজ্জামান অর্থ কষ্টে লেবার হিসেবে কাজ করছে। ৪র্থ ছেলে আয়ুব আলী অনার্সে পড়ছে।
এই বীর যোদ্ধার নেই তেমন সম্পত্তি ও আয়-রোজগার। মুক্তিযোদ্ধা ভাতা পাচ্ছেন ১২ হাজার টাকা। এই ভাতার টাকা দিয়ে ঠিকমতো চলছে না সংসার। তিনি ক্যানসারের চিকিৎসার জন্য মানুষের কাছ ঋণ নিয়ে ভারতেও গিয়েছিলেন। সেখানে চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরলেও অর্থাভাবে ওষুধ কিনতে পারছেন না। ওষুধ বিহীন অবস্থায় মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে কোনোমতে বেঁচে আছেন।
এ দিকে তার পূর্ব-পুরুষের আমলে নির্মাণ করা একটি মাটির ভাঙা বাড়িতে স্ত্রী ও সন্তান নিয়ে বসবাস করছেন মুক্তিযোদ্ধা আ. হামিদ। মাটির দেয়ালে ফাটল ধরে খসে খসে পড়ছে মাটি। পুরো বাড়িটি জরাজীর্ণ অবস্থায়। অর্থাভাবে সেই বাড়িতেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছেন ক্যানসার রোগী মুক্তিযোদ্ধা আ. হামিদ।
এ ব্যাপারে কাহালু মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার নজিবর রহমান জানান, আব্দুল হামিদ একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা। কলকাতায় তিনি চিকিৎসা করতে গিয়েছিলেন। সেখানে ফুসফুসে ক্যানসার ধরা পড়েছে।
ডাক্তার জানিয়েছে, প্রতি মাসে তাকে একটি কেমোথেরাপি দিতে হবে। সেই কেমোথেরাপির দাম প্রায় ৬০ হাজার টাকা। টাকার অভাবে গত মাস থেকে কেমোথেরাপি দিতে পারেননি তিনি।
এ প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাছুদুর রহমান জানান, ওই মুক্তিযোদ্ধা আবেদন করলে বাড়ির বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা হবে। তবে চিকিৎসার জন্য সমাজসেবা অফিসের মাধ্যমে আবেদন করতে হবে।
ব্রেকিংনিউজ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন