‘শুধু টাকার জন্য নয়, পতাকা বিক্রি করে গৌরব বোধ করি। মনের টানেই এই ডিসেম্বর মাসে পতাকা বিক্রি করি।’ এভাবে কথাগুলো বলছিলেন শফিকুল ইসলাম।
শফিকুল ইসলামের বাড়ি মাদারীপুরের শিবচর থানায়। তিনি দুই ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে ঢাকায় থাকেন। পুরো ডিসেম্বর জুড়ে রাজধানীর গুলিস্তান, পল্টন, মতিঝিল, শাহবাগ এলাকায় পতাকা বিক্রি করেন তিনি।
শফিকুল ইসলাম ব্রেকিংনিউজকে বলেন, ‘আমি সারা বছর অন্য ব্যবসা করি। এই ডিসেম্বর মাস আসলেই প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত শুধু পতাকা বিক্রি করি। এ মাসে অন্য কোনও কাজ করি না।’
তিনি বলেন, ‘পতাকা বিক্রি শুধু টাকার জন্য করি না। এটা আমাদের বিজয়ের মাস, গৌরবের মাস। তাই এই মাসে পতাকা বিক্রিকে আমি সম্মানের মনে করি এবং গৌরবের মনে করি। তাছাড়া যদি টাকা উপার্জনের জন্য বিক্রি করতাম তাহলে তো অন্য কোনও কিছু বিক্রি করলেও টাকা রোজগার করতে পারতাম।’
শফিকুল ইসলাম আরও বলেন, ‘ডিসেম্বর মাসে পতাকা বিক্রি করা আমার একটা নেশায় পরিণত হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ দেখিনি। এ পতাকা নিয়ে রাস্তায় রাস্তায় বিক্রি করলে আমি যেন মুক্তিযুদ্ধের সুখ পাই। নিজের ভেতর একাত্তরকে অনুভব করি।’
আরেক মৌসুমী হকার সাহা আলী ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে শুধু পতাকা বিক্রির জন্য ঢাকায় এসেছেন। তার সঙ্গে কথা হলে তিনি ব্রেকিংনিউজকে বলেন, ‘আমার মামা গুলিস্তান হকারি করে। আমি প্রতিবছর শুধু ডিসেম্বর মাসে পতাকা বিক্রির জন্য ঢাকায় আসি। মামার সাথে থেকে সারা মাস পতাকা বিক্রি করি।’
তিনি বলেন, ‘ডিসেম্বরের শুরু থেকে পতাকা বিক্রি শুরু করেছি। প্রথম সপ্তাহে আয় কম ছিল। তবে ১০ তারিখের পর থেকে বিক্রি বেড়েছে। দিনে সব খরচ বাদে ১০০০ টাকার মতো থাকে।’
ডিসেম্বর মানেই নতুন করে জাতীয়তাবোধের জাগরণ। এ মাসের শুরু থেকেই ছোট, মাঝারি ও বড় পতাকা, কাগজ,কাপড় ও প্লাস্টিক এর পতাকায় ভরে যায় রাজধানীসহ সারা দেশ। এছাড়াও প্রাইভেট কার, বাস, ট্রাক, রিকশা, মোটরসাইকেল থেকে শুরু করে রাস্তার সবখানে পতাকার মিছিল। পতাকা মেলে অফিসের ডেস্কে, কারো কারো হাতে, কেউবা রাবার ব্যান্ডের মত মাথায়ও পরেন।
আর সবার হাতে লাল সবুজের পতাকা তুলে দেন সাইফুল ইসলাম, সাহা আলীরা। তাদের মত হাজারো হকার রাস্তায় নামেন জাতীয় পতাকা বিক্রি করতে।
রাজধানীতে পতাকা বিক্রিতে নামা হকাররা জানান, মোটের উপর দশটি সাইজের পতাকা মিলে তাদের কাছে। দাম রয়েছে তারতম্য। সবচেয়ে বড় পতাকার দাম ২০০ টাকা, সর্বনিম্ন ১০ টাকা। এরমধ্যে রয়েছে বাসার ছাদের জন্য বড় পতাকা ও গাড়িতে বা হাতে করে নেয়ার জন্য মাঝারি থেকে ছোট পতাকা। মাথায় কিংবা হাতে নেয়ার জন্য ছোট পতাকাও পাওয়া যায়।
বিক্রেতারা আরো জানান, রাজধানীতে যেসব পতাকা বিক্রি হয় সেগুলোর বেশিরভাগই যোগান দেন গুলিস্তানের আশেপাশের দর্জিরা। তবে পতাকার পাইকারি বাজার কেরানীগঞ্জের জিঞ্জিরা। আর এসব পতাকার পাইকারি বাজার বসে শাঁখারীবাজার, যাত্রাবাড়ী, ফার্মগেট নিউমার্কেটে। খুচরা বিক্রেতারা এসব জায়গা থেকেই পতাকা কিনে রাস্তা রাস্তা বিক্রি করে বিজয়ের মাস পুরো ডিসেম্বর জুড়ে।
ব্রেকিংনিউজ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন