কেরানীগঞ্জের প্রাইম প্লেট অ্যান্ড প্লাস্টিক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের পাশেই প্রোডাকশন কর্মী আব্দুর রাজ্জাকের (৪৫) বাসা। দুপুরে নিয়মিত পরিবারের সঙ্গে খেতে আসেন তিনি। কারখানায় আগুন লাগার দিনও জোহরের নামাজ শেষে স্ত্রী গুলশানা ও মেয়ে আয়েশা আক্তার টুম্পার সঙ্গে দুপুরের খাবার খেয়ে কারখানায় ফিরে যান। এরপর আছরের নামাজের বিরতিতে মসজিদে নামাজ পড়ে কারখানায় ঢোকার কিছুক্ষণের মধ্যেই আগুনের ঘটনা ঘটে।
আরও অনেকের মতো দগ্ধ হন আব্দুর রাজ্জাকও। খবর পেয়ে কারখানায় ছুটে যান স্ত্রী-কন্যা। দগ্ধ রাজ্জাককে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করানো হয়। অবস্থার অবনতি হলে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে নেয়া হয়।
আব্দুর রাজ্জাকের শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের প্রধান সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, ‘ইনস্টিটিউটের আইসিইউতে লাইফ সাপোর্টে আগুনে পোড়া এমন রোগী রয়েছে যাদের মুখ চেনা যাচ্ছে না, শ্বাসনালী খুব খারাপভাবে পুড়ে গেছে। যে ১০ জন রোগী এখনও রয়েছে তাদের সকলের শরীরের ৬০-৮০ ভাগ পোড়া এবং আব্দুর রাজ্জাক নামের একজনের শতভাগ পোড়া।’
সার্জারি ইনস্টিটিউটে এখন ১০ জন রোগী ভর্তি রয়েছেন। এদের কেউই শঙ্কামুক্ত নন। প্রত্যেকেই লাইফ সাপোর্টে আছেন। সবার ইনহ্যালেশন বার্ন।
সামন্ত বলেন, ‘আব্দুর রাজ্জাকের শরীরের শতভাগ পুড়ে গেছে। তিনি অত্যন্ত ঝুঁকিতে রয়েছেন। যেকোনো সময় তার অবস্থার আরও অবনতি হতে পারে।’
শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে গিয়ে কথা হয় আব্দুর রাজ্জাকের স্ত্রীর বড় বোন হাসিনা ও রোখসানার সঙ্গে।
তারা জানান, আব্দুর রাজ্জাকের বাসা কারখানার পাশেই। দীর্ঘদিন ধরে ওই কারখানায় কর্মরত আছেন তিনি। আব্দুর রাজ্জাকের একমাত্র সন্তান আয়েশা আক্তার টুম্পা অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী।
আয়েশা আক্তার টুম্পা জাগো নিউজকে বলেন, ‘আব্বু নিয়মিতই বাসায় দুপুরে খেতে আসত। গত ১১ ডিসেম্বর দুপুরে বাসায় এক সঙ্গে খেয়েছি। জোহরের নামাজ শেষ করে কাজে ফিরে যান। বাবা যে আর আগুনে পুড়ে যাবেন তা কখনও ভাবিনি।’
স্ত্রী গুলশানা বলেন, ‘আল্লাহ আমাকে পরীক্ষায় ফেলছেন। আমার এবং ওর (আব্দুর রাজ্জাক) বাবা মা কেউই বেঁচে নেই। টুম্পার জন্মের আগে আমাদের দুই সন্তান মারা গেছে। এরপর টুম্পার জন্ম। ভালোই দিন যাচ্ছিল। পরিবারের একমাত্র কর্মক্ষম মানুষটিই দগ্ধ হলো। ডাক্তাররা বলেছে বাঁচার আশা নেই। পুরো মানুষটা আগুনে পুড়ছে। আমি এখন আমার মেয়েকে নিয়ে কই যাব, কি করব? ভেবে কূল পাচ্ছি না।’
তিনি বলেন, ‘এ আগুনে আমাদের আরেক সদস্যও মারা গেছেন। আমার দেবর রাজ্জাকের ছোট ভাই আলমগীর (৪০)। সেও একই কারখানায় কাজ করত। চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন গেছে আলমগীর। এ কষ্ট সইতে পারছি না।’
গুলশান আরা আরও বলেন, ‘রাজ্জাকের সঙ্গে কথা হয়েছে। ওর খুব কষ্ট হচ্ছে। বারবার আমাকে কাছে ডাকছে। পাইপ খুলে দিতে বলে। কিন্তু বাঁচানোর আশায় আমি ধৈর্য ধরতে বলছি। বাকিটা আল্লাহর ইচ্ছে।’
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন