রোহিঙ্গাদের গণহত্যা-ধর্ষণসহ নানা নির্যাতনের বিষয়ে গাম্বিয়ার মামলা করার মিয়ানমারের বিরুদ্ধে তদন্ত করার অনুমতি দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি)। এর ফলে আইসিসি যদি রায় দেয় তাহলে স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চিসহ দেশটির ২০ নেতা পালিয়েও বাঁচতে পারবেন না।
সোমবার (১৮ নভেম্বর) রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের প্রয়োজনীয়তা’ বিষয়ক গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এ কথা বলেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘মিয়ানমার আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) বা ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসের (আইসিজে) সদস্য হোক বা না হোক; বিচারে রোহিঙ্গা ইস্যুতে সু চিসহ ঊর্ধ্বতন ২০ জনের বিরুদ্ধে রায় হলে তা মানতে বাধ্য হবে বিশ্বের সব দেশ। তারা অন্য দেশে গেলেও তাদের গ্রেফতার করতে বাধ্য হবে।’
তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গা নিধনের বিরুদ্ধে আইসিসির রায় হওয়ার পর মিয়ানমার ছাড়াও অনেক দেশের ওপর চাপ সৃষ্টি হবে এ সংকট সমাধানে। তখন মিয়ানমারের শাসকরা বাঁচতে পারবেন না।’
শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘রোহিঙ্গা ইস্যুতে বিশ্বের অনেক দেশে নিজেদের মধ্যেই দ্বন্দ্ব রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মানবতাকে বড় করে দেখেছেন, তাই রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছেন। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন হতেই হবে। তবে রাতারাতি এ সংকটের সমাধান হবে না।’
তিনি বলেন, ‘আইসিসির নির্দেশ হওয়ার পর মিয়ানমার ছাড়াও অনেক দেশের ওপর চাপ সৃষ্টি হবে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে। সবচেয়ে বড় কথা হলো ভারতের প্রধানমন্ত্রী ও জাপানের প্রধানমন্ত্রী অং সান সু চিকে বলেছেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন না হলে এ অঞ্চল অস্থিতিশীল হবে।’
আলোচনা সভায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. শাহ্ কামাল বলেন, ‘উখিয়া এবং টেকনাফে আমাদের নিজস্ব লোক মাত্র সাড়ে ৪ লাখ এবং রোহিঙ্গারা ১১ লক্ষ। এই সমস্যা একদিনের না, এটা ৪১ বছরের সমস্যা। আমরা যদি ভাবি ৪১ বছরের সমস্যা একদিনের সমস্যা সমাধান করব সেটা সম্ভব না। এজন্য আমাদেরকে একটু ধৈর্য ধরতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের বন্ধু দেশগুলো যারা আমাদের সাহায্য করছেন তারা যদি প্রতিটি দেশ ৯ হাজার করে রোহিঙ্গা নেয়, তাহলে এই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।’
আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন, অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শমসের মবিন চৌধুরী, মেজর (অব.) এমদাদ, অভিবাসী বিশেষজ্ঞ আসিফ মুনির, সাবেক রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জমির এবং দৈনিক ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত প্রমুখ।
দশকের পর দশক ধরের সংখ্যালঘু মুসলিম রোহিঙ্গাদের ওপর অমানবিক অত্যাচার করে আসছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও সংখ্যাগুরু বৌদ্ধ ভিক্ষুরা। তবে সম্প্রতি সময়ে রোহিঙ্গাদের গণধর্ষণ ও গণহত্যার মারাত্মক আকার ধারণ করে। ২০১৭ সালের এই ঘটনায় লাখ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়।
নির্মম এই অত্যাচারের ঘটনায় চাপে রয়েছে মিয়ানমার সরকার। কিছু আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞাও পেয়েছে দেশটি। তবে চীনসহ কিছু পরাশক্তির সাহায্যে পাশ কাটিয়ে যাচ্ছে সু চির সরকার।
গত ১১ নভেম্বর (সোমবার) জাতিসংঘের সর্বোচ্চ আদালতে মিয়ানমার সরকারের বিরুদ্ধে গাম্বিয়ার মামলা করার পর ১৪ নভেম্বর বিবৃতি দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত। বিবৃতিতে রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমার সেনাবাহিনীর দমন অভিযানে মানবতা অপরাধ সংগঠিত হয়েছে কি না তা তদন্তের অনুমতি দেয়া হয়।
যদিও এই তদন্ত প্রত্যাখ্যান করেছে মিয়ানমার। মিয়ানমার সরকারের মুখপাত্র জাও তেই বলেন, ‘মিয়ানমারের ওপর আইসিসির এই তদন্ত আন্তর্জাতিক আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।’
ব্রেকিংনিউজ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন