নতুন সড়ক পরিবহন আইন বাস্তবায়নের প্রতিবাদে খুলনা থেকে সব রুটে বাস চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সোমবার সকাল থেকে পরিবহন শ্রমিকরা এ ধর্মঘট শুরু করেন।
পরিবহন শ্রমিক নেতারা বলছেন, দুর্ঘটনার মামলায় জামিনসহ সড়ক আইনের কয়েকটি ধারায় সংশোধন চান তারা।
তাদের দাবি, আইন সংশোধনের পরই এটি কার্যকর করা হোক। এটা না করা পর্যন্ত আমাদের এ কর্মসূচি চলবে। সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে বারবার অনুরোধ সত্ত্বে আইনটি সংশোধন ছাড়া বাস্তবায়নের ঘোষণা দেওয়া হয়। এতে শ্রমিকদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে খুলনায় সব রুটের বাস চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
তারা জানান, বিষয়টি নিয়ে ২১ ও ২২ নভেম্বর শ্রমিক ফেডারেশন বর্ধিত সভা ডেকেছে। ওই সভার এজেন্ডাগুলোর মধ্যে এক নম্বরে রয়েছে সড়ক পরিবহন আইন নিয়ে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ।
এ দিকে হঠাৎ করে খুলনা থেকে সব রুটে বাস চলাচল বন্ধ করে দেওয়ায় যাত্রীরা চরম দুর্ভোগে পড়েছেন।
সরেজমিনে সোমবার দেখা যায়, শহরের রয়্যালের মোড়ে ঢাকায় যাওয়ার জন্য দুপুর ২টার দিকে আসেন লবণচোরা এলাকার বাসিন্দা হাফিজুর রহমান।
তিনি বলেন, ঢাকায় যাওয়ার জন্য এসেছি এখন শুনছি বাস বন্ধ। কোনো ঘোষণা না দিয়ে এভাবে বাস বন্ধ করায় বেশ ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।
সোনাডাঙ্গা বাস স্ট্যান্ডে আড়াইটার দিকে এসেছেন খালিশপুর এলাকার বাসিন্দা প্রদীপ সরকার। তিনি বলেন, গত রাতে (রবিবার) খোঁজ নিলাম তখন বলল বাস যাবে আজ (সোমবার) সকালে। এখন এসে দেখি বাস ধর্মঘট চলছে। কোনো ঘোষণা ছাড়া এমন হঠকারী সিদ্ধান্ত যাত্রীদের বিপদে ফেলা ছাড়া আর কিছু নয়।
খুলনা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. নুরুল ইসলাম বেবী বলেন, নতুন সড়ক পরিবহন আইন কার্যকরের প্রতিবাদে শ্রমিকরা বাস চালাচ্ছেন না। তারা অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতি শুরু করেছেন। নতুন পরিবহন আইনে কোনো কারণে দুর্ঘটনায় কেউ মারা গেলে নতুন আইনে চালকদের সর্বোচ্চ মৃত্যুদণ্ড এবং আহত হলে পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা দিতে হবে। আমাদের এত টাকা দেওয়ার সামর্থ্য নেই এবং বাস চালিয়ে আমরা জেলখানায় যেতে চাই না। বাংলাদেশে এমন কোনো চালক নেই যে পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা দিতে পারবে। কারণ একজন চালকের বেতন ১৫-২০ হাজার টাকা। এই বাজারে যা দিয়ে সংসার চালানো, ছেলেমেয়ের লেখাপড়ার খরচ চালানো দায়। সেখানে এত জরিমানা কী করে দেওয়া যাবে?
তিনি বলেন, এ কারণেই নতুন পরিবহন আইন সংস্কারের দাবি জানান শ্রমিকরা। নইলে তারা বাস চালাবেন না। সড়কে অবৈধ নসিমন-করিমন চলে তাদের কারণেই দুর্ঘটনা ঘটে। এসব যানবাহন বন্ধ ও চালকদের জরিমানা করা হয় না। সব জেল-জরিমানা হয় বাসচালকের।
খুলনা জেলা বাস-মিনিবাস ও কোচ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. আনোয়ার হোসেন সোনা বলেন, শ্রমিকরা ফাঁসি ও যাবজ্জীবন দণ্ডের ভয়ে গাড়ি চালানো বন্ধ করে দিয়েছেন। আমাদের সঙ্গে আলোচনা না করেই তারা এসব করছেন।
জানা গেছে, ভোরে ঈগল পরিবহনসহ বেশ কয়েকটি পরিবহনের বাস নগরীর রয়্যাল কাউন্টার থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। তবে সকাল ৯টার পর থেকে সব বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন