এলজিএসপি-৩ প্রকল্পের অর্থায়নে সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার তালম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্বাস-উজ-জামানের বাড়িতে পাকা পুকুর ঘাট নির্মাণের চাঞ্চল্যকর অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এ বিষয়ে তালম ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড সদস্য নাজির উদ্দিন অভিযোগ করে বলেন, স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন, ২০০৯ লঙ্ঘন করে শুধুমাত্র ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহারের জন্য ইউপি চেয়ারম্যান ওই পাকা ঘাট নির্মাণ করেছেন।
তিনি জানান, ২০১৮-১৯ অর্থ বছরের জন্য এলজিএসপি-৩ থেকে সাধারণ মানুষের ব্যবহারের লক্ষে পুকুর ঘাট ও সিঁড়ি নির্মাণের জন্য ২ লাখ ৩২ হাজার ১৫৭ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। ওই অর্থ দিয়ে উপজেলার তালম ইউনিয়নের তারাটিয়া গ্রামে চেয়ারম্যানের নিজ বাড়ির পুকুরে এ পাকা ঘাট নির্মাণ করেছেন। অথচ ওই চেয়ারম্যানের বাড়ি বা পুকুরের আশপাশে কোন বসতি নেই। তিনি জানান, নিতান্তই ব্যক্তিগত প্রয়োজন আর বাড়ির সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য চেয়ারম্যান আব্বাস-উজ-জামান তার মায়ের নামে দলিলকৃত পুকুরে এ পাকা ঘাট নির্মাণ করেছেন। এ বিষয়ে তদন্ত হলে ওই ইউনিয়নের ৬ জন মেম্বর ও তারাটিয়া গ্রামবাসীর সবাই একবাক্যে এ বিষয়ে কথা বলবে।
হারিসোনা গ্রামের হাফিজুল ইসলাম, তারাটিয়া গ্রামের আব্দুল আজিজ, আব্দুস সামাদ, সদু চন্দ্র দাস, সুশান্ত কুমার দাস, মন্টু চন্দ্র দাস, পানেস চন্দ্র দাস, শামসুল আলম এ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, চেয়ারম্যান শুধু নিজ বাড়ির পুকুরের পাকা ঘাটই নির্মাণ ও খননের কাজও করিয়েছেন প্রকল্পের লেবার দিয়ে। তারপরেও তিনি এ পুকুরে গ্রামের কাউকে গোসল করা বা দৈনন্দিন কাজ করা পছন্দ করেন না।
এ বিষয়ে তালম ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ড সদস্য আশরাফুল ইসলাম বলেন, চেয়ারম্যান আব্বাস উজ জামান শুধু এলজিএসপির অর্থায়নের তার বাড়ির পুকুরের পাকা ঘাট নির্মাণ ও প্রকল্পের শ্রমিক দিয়ে ওই পুকুর খনন কাজও করিয়েছেন। স্বাধীনতা যুদ্ধকালে ওনার বাবা একজন রাজাকার ছিলেন। বিএনপি সরকার আমলে আব্বাস চেয়ারম্যান তালম ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ছিলেন। এখন আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে তালম ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি হয়েছেন। তার অপকর্মের শেষ নেই। তিনি এক মহিলা গ্রাম পুলিশকে কুপ্রস্তাব দিয়েছেন। ওই মহিলা গ্রামপুলিশ স্থানীয় এমপি ডা. আব্দুল আজিজের কাছে এ বিষয়ে অভিযোগ করেছেন। এ অভিযোগের সময় আমি সেখানে উপস্থিত ছিলাম।
এ বিষয়ে তালম ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ড সদস্য আবু তাহের এ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, শুধু এটাই নয়, নবতা পাকা সড়ক থেকে তালম ইউনিয়ন পরিষদ পর্যন্ত আধা কিলোমিটার রাস্তা পাকা করণের কাজ না করেই এ কাজ বাবদ এলজিএসপি-৩ এর বরাদ্দকৃত ১ লাখ ২০ হাজার টাকার পুরোটাই চেয়ারম্যান আব্বাস আত্মসাৎ করেছেন।
এ বিষয়ে তালম ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল খালেক এলজিএসপি-৩ প্রকল্পের অর্থায়নে নিজ বাড়ির পুকুরের পাকা ঘাট নির্মাণের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, চেয়ারম্যান আব্বাস উজ জামানের অপকর্মেও শেষ নেই। তার এ সব অপকর্মে স্থানীয় এমপি ডা. আব্দুল আজিজ ও তাড়াশ উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ মনিরুজ্জামান মনিরও চরম বিরক্ত। জেলা নেতৃবৃন্দের আশ্রয় প্রশ্রয়ে তিনি একের পর এক এ সব অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছেন।
এ বিষয়ে তালম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্বাস-উজ-জামান তার বিরুদ্ধে আনীত সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, পুকুরটি আমার বাড়ির পাশের। আর এতে বরাদ্দ পেয়েছি তাই কাজ করেছি।
তাড়াশ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা নূর মামুন বলেন, এ প্রকল্পটি আমার অধীনে নয়। এটি ইউএনও মহোদয় নিজে ও উপজেলা ইঞ্জিনিয়ার দেখেন। তারাই এ সম্পর্কে বলতে পারবেন। আমি এর কিছুই জানি না।
তাড়াশ উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ মনিরুজ্জামান মনির ও উপজেলা এলজিইডি বিভাগের প্রকৌশলী আহাম্মদ আলীর মোবাইল ফোনে একাধিক বার কল দিয়ে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তারা কেউ ফোন রিসিভ না করায় তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
উপজেলার ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা ও এলজিএসপি প্রকল্পের সভাপতি মো. ওবায়দুল্লাহ বলেন, এলজিএসপি প্রকল্পের অর্থায়নে তালম ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের বাড়িতে পাকা পুকুর ঘাট নির্মাণের বিষয়ে তদন্ত চলছে। তদন্তে বিষয়টি প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ বিষয়ে সিরাজগঞ্জ-৩ (তাড়াশ-রায়গঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য ডা. আব্দুল আজিজ বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। তিনি আরও বলেন, তালম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্বাস-উজ-জামান যদি কোন অনৈতিক কর্মকাণ্ড করে থাকেন তবে সংশ্লিষ্ট বিভাগের মাধ্যমে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন