আলোহীন স্যাঁতসেঁতে ছোট্ট একটি ঘর। এখানেই খাওয়া-ঘুম। এই ঘরের মেঝেতে শিকলবাঁধা অবস্থায় জীবনের ২৫টি বছর কেটে গেছে রতন মিয়ার।
বিষয়টি জানাজানি হলে পাকুন্দিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাহিদ হাসান মঙ্গলবার রতনকে বন্দিদশা থেকে মুক্ত করেন। ব্যবস্থা করেন তার চিকিৎসার।
রতন মিয়া কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার পাটুয়াভাঙ্গা ইউনিয়নের দক্ষিণ সাটিয়াদী গ্রামের মৃত আবদুল মোমেনের ছেলে।
রতনের শিকলবন্দি হওয়ার ঘটনাটি দু'দিন আগে সংবাদকর্মীরা জানতে পারেন। পরে তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্নভাবে জানাজানি হয়। এর পরই উপজেলা প্রশাসন রতনের মুক্তির জন্য মানবিক উদ্যোগ গ্রহণ করে।
রতনের সমবয়সী কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আর দশজনের মতো রতনও সুস্থ ও স্বাভাবিক ছিল। ২৫ বছর আগে তাদের জমিতে পাশের বাড়ির হযরত আলীর একটি গরু ধান খাচ্ছিল। এ সময় রতন মিয়া গরুটি ধরে বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার সময় হযরত আলী দৌড়ে এসে গরু নেওয়ার চেষ্টা করলে তাদের মধ্যে হাতাহাতি হয়। একপর্যায়ে হযরত আলী লাঠি দিয়ে রতন মিয়ার মাথায় আঘাত করলে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়। এর কিছুদিন পর থেকে রতন মিয়া অস্বাভাবিক আচরণ শুরু করে। র
তনের পরিবারের দাবি- ওই সময় তাকে মানসিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছিল। তাতে কাজ না হওয়ায় সেই থেকেই চলছে তার এই বন্দিদশা।
এলাকাবাসী কেউ কেউ ধারণা করেন, পৈতৃক সম্পত্তি থেকে রতনকে বঞ্চিত করতে কৌশলে তাকে 'পাগল' বলে শিকলবন্দি করে রাখা হয়েছে।
এ অভিযোগ অস্বীকার করে তার বড় ভাই আঙ্গুর মিয়া বলেন, রতন মানসিক ভারসাম্যহীন। এলাকার লোকজনও তা জানেন। লোকজনের ক্ষতি করতে পারে এই ভয়ে তাকে বেঁধে রাখা হয়েছে।
এলাকাবাসী জানায়, রতন অনেকের সঙ্গে ভালো আচরণও করেন। ২৫ বছরে আগে যে প্রতিবেশী তাকে মাথায় আঘাত করেছিলেন, তাকে পাল্টা আঘাত করতে যাওয়ার পরই তার ভাগ্যে জুটেছে এমন নির্মমতা।
ইউএনও নাহিদ হাসান বলেন, বিষয়টি খুবই অমানবিক। সাংবাদিকদের মাধ্যমে রতনের বন্দিদশার কথা জানতে পেরে তাৎক্ষণিক তাকে উদ্ধারে উদ্যোগ নেওয়া হয়। পরে তাকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন