সৌদি আরবে যাওয়ার জন্য বিমানের ফ্লাইটের সময় ছিল সন্ধ্যা ৬টা ২০ মিনিট। কিন্তু ফ্লাইটের উঠার পূর্বেই বাঁধসাধে পুলিশ।
যৌতুক নিরোধ আইনে দায়ের করা মামলায় ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি আবদুল গনিকে বিমানবন্দরে গিয়ে ধরিয়ে দেন স্ত্রী। পরে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে চাঁদপুর পাঠিয়ে দেয়।
এদিকে প্রবাসী পুত্র আবদুল গনি পুলিশের হাতে গ্রেফতারের কথা শুনে পিতা গোফরান মিয়া (৭৫) হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন।
অন্যদিকে স্ত্রীকে না জানিয়ে ফেসবুক প্রেমে অন্ধ হয়ে দ্বিতীয় বিয়ে করা আবদুল গনিরও বিদেশ যাওয়া হল না মামলার কারণে।
সোমবার সন্ধ্যায় ঢাকা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে আবদুল গনি গ্রেফতার করা হয়।
এ গ্রেফতারের খবর পেয়ে মঙ্গলবার সকালে চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার গাব্দেরগাঁও গ্রামে গোফরান মিয়ার মৃত্যু হয়।
জানা গেছে, উপজেলার ১৫নং রূপসা উত্তর ইউনিয়নের গাব্দেরগাঁও গ্রামের গোফরান মিয়ার ছেলে আবদুল গনি ২০০৩ সালের ২৬ অক্টোবর ইসলামী শরিয়াহ মোতাবেক একই উপজেলার ৭নং পাইকপাড়া উত্তর ইউনিয়নের বিষুরবন্দ গ্রামের আবদুর রাজ্জাকের মেয়ে রাবেয়া বেগমকে বিয়ে করে। তাদের দাম্পত্য জীবনে ২ মেয়ে ও ১ ছেলে রয়েছে।
রাবেয়া বেগম জানান, ২০০৬ সালে কর্মের সন্ধানে সৌদি আরবে পাড়ি জমায় তার স্বামী আবদুল গনি। এরই মাঝে-মধ্যে ছুটি নিয়ে সে বাড়ি আসলেও তার তৃতীয় সন্তানটিকে মাতৃগর্ভে রেখে ২০১৫ সালে সে সর্বশেষ সৌদি আরবে ফিরে যায়। এরই মধ্যে সে বিদেশে থাকাকালে ফেসবুকে খুলনা জেলার শারমিন ইসলাম মিথিলা নামে এক নারীর সঙ্গে পরকিয়ায় জড়িয়ে পড়ে।
চলতি বছরের ২১ জুলাই আবদুল গনি সৌদি আরব থেকে দেশে আসলেও নিজ বাড়ি ফরিদগঞ্জে না এসে খুলনা চলে যায়। সেখানে সে প্রথম স্ত্রীর অনুমতি ছাড়াই শারমিন ইসলাম মিথিলাকে বিয়ে করে।
বিয়ের সংবাদ জানতে পেরে রাবেয়া বেগম চাঁদপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতে ২৮ জুলাই যৌতুক নিরোধ আইনে মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় ২৩ আগস্ট আবদুল গনির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত।
রাবেয়া এরই মধ্যে জানতে পারে ১৬ সেপ্টেম্বর সোমবার সন্ধ্যা ৬টা ২০ মিনিটে একটি এয়ারলাইন্সে করে পুনরায় সৌদি আরবে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে আবদুল গনি। সেই অনুযায়ী রাবেয়া পূর্বেই ঢাকা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবস্থান গ্রহণ করে।
আবদুল গনি যথাসময়ে বিমানবন্দরে পৌঁছার সঙ্গে সঙ্গে রাবেয়া বেগম তাকে ঝাঁপটে ধরেন ও ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি হিসেবে নিশ্চিত করে স্বামীকে ইমিগ্রেশন পুলিশের হাতে সোর্পদ করেন।
ফরিদগঞ্জ থানার ওসি আবদুর রকিব জানান, সংবাদ পেয়ে ফরিদগঞ্জ থানা পুলিশ রাতেই বিমানবন্দর থেকে আবদুল গনিকে গ্রেফতার করে। মঙ্গলবার সকালে তাকে চাঁদপুর আদলতে প্রেরণ করা হয়।
তিনি জানান, পুত্রবধূ রাবেয়া বেগমের মামলায় প্রবাসী পুত্র আবদুল গনি পুলিশের হাতে আটকের কথা শুনে মঙ্গলবার সকালে পিতা গোফরান মিয়া হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। বাদ জোহর তার জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন