জন্মের একদিন পর বাবা-মা পালিয়ে গেছেন। এখন হাসপাতালেই রয়েছে কন্যা নবজাতকটি। চিকিৎসকরা নবজাতকের নাম দিয়েছেন ‘সারা’। গেল শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) ভোরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে শিশুটির জন্ম হয়।
মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) তাকে হস্তান্তর করা হবে সমাজসেবা অধিদফতরের অধীনে আজিমপুরের ছোটমনি নিবাসে। সেখান থেকে কেউ তাকে দত্তক নিলে পাবে নতুন ঠিকানা। নতুন পরিচয়।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, নবজাতক সারার বয়স ৪ দিন। জন্মের ২ দিনের মাথায় হাসপাতালে নবজাতককে ফেলে পালিয়ে যায় তার বাবা-মা। ধারণা করা হচ্ছে, জন্মপরিচয় সংকটের কারণে বাবা-মা দুজনেই ফেলে গেছে ফুটফুটে এই কন্যা শিশুটিকে। সারার মায়ের বিয়ের ছয় মাসের মাথায় তার জন্ম। এটা নিয়েই মূলত বাবা-মায়ের দ্বন্দ্বের শুরু।
ঢামেক হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. নাছির উদ্দিন ব্রেকিংনিউজকে বলেন, ‘নবজাতক সুস্থ রয়েছে। তাকে নবজাতক বিভাগে রাখা হয়েছে। তাকে কৌটার দুধ খাওয়ানো হচ্ছে। এখনো পর্যন্ত তাকে ফেলে যাওয়া বাবা-মা হাসপাতালে এসে যোগাযোগ করেনি। এজন্য তাকে আজিমপুরের ছোটমনি নিবাসে দেয়ার জন্য সব কাগজপত্র পাঠিয়েছি।’
শারীরিক অবস্থার বিষয়ে জানতে চাইলে ডা. নাছির উদ্দিন বলেন, ‘শিশুটি সুস্থ রয়েছে। আমরা তার কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছি। তার শারীরিক কোনও সমস্যা নেই।’
সূত্র জানায়, ঢাকা মেডিকেলের ১০৬ নম্বর ওয়ার্ডে জন্ম নেয় নবজাতকটি। ওই সময় এ ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন ছন্দার মা ফরিদা বেগম ব্রেকিংনিউজকে জানান, ম্যাট-০৪ এর ২৪ নম্বর বেডে নবজাতককে ফেলে যায় তার বাবা-মা। ঘটনার দিন দুপুরে নবজাতক মা নাহারের সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয় নবজাতকের বাবা রাসেলের। রাসেল তার স্ত্রীকে বলেন, ‘তোমাকে বিয়ে করেছি মাত্র ৬ মাস। এরইমধ্যে তুমি সন্তান জন্ম দিলে। এটা তো আমার বাচ্চা না। তাহলে এই বাচ্চার দায়িত্ব আমি কেনো নেবো? বায়োলজিল্যালি আমি এই বাচ্চার বাবা না। এটা কার বাচ্চা?’
এসময় শিশুটির মা বলেন, ‘তুমি তো আগের স্বামীর কাছ থেকে আমাকে নিয়ে এসেছো। এখন খারাপ ব্যবহার করছো কেন? পরে রাসেল তার মুঠোফোনে শিশুটির ছবি তোলেন। পরবর্তীতে সে ওয়ার্ড থেকে বেরিয়ে যান।’
এরপর নবজাতকের মা নাহার তার মাকে ফোন দিয়ে বলেন, ‘গাড়ি নিয়ে এসে আমাকে নিয়ে যাও। কিছুক্ষণ পর তার মা একটি মাইক্রোবাস নিয়ে এসে তাকে নিয়ে যায়। আমি নাহারের হাত ধরে অনুরোধ করে বলি, শিশুটিকে ফেলে যাবেন না।’
এরইমধ্যে সারাকে দত্তক নেয়ার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছেন অনেকেই। তারা হাসপাতালে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কোনও ধরনের এখতিয়ার নেই নবজাতকটিকে কাউকে দত্তক দেয়ার।
ঢামেক হাসপাতাল পুলিশ ক্যাম্পের ইনর্চাজ পরিদর্শক (এসআই) মো. বাচ্চু মিয়া ব্রেকিংনিউজকে বলেন, ‘হাসপাতালে ফেলে যাওয়া কন্যা নবজাতককে দত্তক নিতে অনেকেই আমাদের ক্যাম্পে যোগাযোগ করেছেন। এদের মধ্যে অনেকেই নিঃসন্তান দম্পতি।’
শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হাসান ব্রেকিংনিউজকে বলেন, ‘ঢামেক হাসপাতালে ফেলে যাওয়া নবজাতকের মা-বাবার সন্ধান এখনও পাওয়া যায়নি। বাবা-মা পালিয়ে যাওয়ার পর আমাদের থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। আমরা এ ব্যাপারে কাজ করছি। ওই নবজাতককে দত্তক নিতে অনেকেই আমাদের সঙ্গেও যোগাযোগ করেছেন।’
ব্রেকিংনিউজ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন