চুল ও দাড়ির ‘বখাটে কাট’ বন্ধ করতে সেলুন মালিক ও নরসুন্দরদের সচেতন করার প্রচারে নেমেছে মাগুরা পুলিশ।
বুধবার মাগুরা সদর থানার ওসি সিরাজুল ইসলাম জানান, এক সপ্তাহ আগে সদর থানা পুলিশ এ বিষয়ে সেলুন মালিকদের সঙ্গে সচেতনতামূলক সভা করেছে। একইসঙ্গে পুলিশ শহরে প্রচারপত্র বিলি ও মাইকিং করেছে।
পুলিশ সুপারের পক্ষ থেকে প্রচারপত্র ও মাইকে সেলুন মালিকদের আহ্বান জানানো হচ্ছে যাতে কোনো সেলুনকর্মী কারো চুল কিম্বা দাড়ি যেন বখাটে স্টাইলে না কাটেন।
ওসি সিরাজুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, মাগুরা পুলিশ সুপার খান মুহাম্মদ রেজোয়ানের নির্দেশে এক সপ্তাহ আগে স্থানীয় সেলুন মালিক ও কর্মীদের নিয়ে তিনি থানা চত্বরে বৈঠক করেছেন।
“পাশাপাশি এ বিষয়ে গোটা শহরে মাইকিং করে সর্বসাধারণকে সচেতন করা হচ্ছে। বিলি করা হয়েছে প্রচারপত্র।”
ওসি বলেন, এর উদ্দেশ্য হচ্ছে বিশেষ করে উঠতি বয়সের যুবকদের সংযত আচরণ ও স্বাভাবিক জীবনযাপনে উদ্বুদ্ধ করা। সম্প্রতি মাগুরায় কিশোর ও উঠতি বয়সের যুবকদের হাতে খুনসহ নানা অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। যেটির পেছনে তাদের অস্বাভাবিক জীবনযাপন ও আচরণের যোগসূত্র পেয়েছে পুলিশ।
এ কারণে এ শ্রেণির নতুন প্রজন্মকে সচেতন করতে এ প্রচারণা চালানো হচ্ছে, বলেন ওসি।
ওসি আরও বলেন, মানুষের লাইফ স্টাইলের সঙ্গে তার আচরণের নানা যোগসূত্র রয়েছে। কেউ যদি উদ্ভট পোশাক পরে, উদ্ভট স্টাইলে চুল কাটে, যা দৃষ্টিকটূ ও অস্বাভাবিক, সেটি তার জীবনযাত্রায় নেতিবাচক প্রভাব অবশ্যই ফেলে। এ কারণে এটি প্রতিরোধ করা প্রয়োজন। সেক্ষেত্রে সবার আগে দরকার সচেতনতা।
সে কাজটিই মাগুরা পুলিশের পক্ষ থেকে তারা করছেন বলে জানান।
শুধু সেলুন মালিক নয়, যুব সমাজকে সামাজিক অবক্ষয়ের হাত থেকে রক্ষা করতে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে পুলিশ সুপার মহোদয় বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ ও অভিভাবকদের সঙ্গেও একাধিক সচেতনতামূলক সভা করেছেন বলে ওসি জানান।
ওসি আরও বলেন, শুধু হেয়ার স্টাইল নয়, সম্প্রতি এক শ্রেণির যুবক ও কিশোর শহরে বেপরোয়াভাবে মোটরসাইকেল নিয়ে ঘোরাঘুরি করে আসছিল। বিশেষ করে স্কুল, কলেজগামী কিছু কিশোর ও যুবককে তিনজন করে এক মোটরসাইকেলে চেপে শহরে আঁকা-বাঁকা স্টাইলে চলাফেরা করতে দেখা গেছে। পুলিশ এ সকল অপ্রাপ্তবয়স্ক বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালকদের বিরুদ্ধে আইগত ব্যবস্থা নিয়েছে।
অনেককে আটক করে তাদের অভিভাবকদের থানায় ডেকে সর্তক করার পাশাপাশি মুচলেকা নিয়ে ছাড়া হয়েছে বলে ওসি জানান।
হেয়ার স্টাইলের ব্যাপারে মাগুরা শহরের এক সেলুন মালিক অসিত শীল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এক শ্রেণীর যুবক আছে যারা তাদের নিজস্ব স্টাইলে চুল কাটাতে পছন্দ করে। এরা একেকজন একেক ধরনের স্টাইলে চুল কাটে। যেখানে আমাদের নিজস্ব কোনো মতামত থাকে না।”
তিনি বলেন, কেউ দুই কানের উপর দিয়ে চুল পুরো চেঁছে ফেলতে বলে। আবার কেউ কপালের দুই পাশ থেকে ঘাড়ের পেছন পর্যন্ত চুল ছেঁটে শুধু মাথার মাঝখানে উপরে চুল বড় রাখে। আবার অনেকে আছে ছোট করে চুল কাটিয়ে মাথার বিভিন্ন স্থানে চেঁছে রাস্তা বানিয়ে দিতে বলে।
দাড়ির ক্ষেত্রেও নানা ধরনের স্টাইল করে বলে অসিত জানান।
তিনি বলেন, বিভিন্ন সিনেমা, নাটক, মিউজিক ভিডিও কিম্বা বিভিন্ন নামি-দামি ফুটবলার কিংবা ক্রিকেটারের মতোও অনেকে হেয়ার স্টাইল করে চুল কাটতে বলে।
“শুধু চুলের স্টাইল বা দাড়ির ডিজাইন পরিবর্ত নয়, অনেকে আছে চুল দাড়িতে নানা রঙ করতেও পছন্দ করে।”
অসিত বলেন, যে যেমন বলে তারা তাদের সেভাবেই চুল দাড়ি কেটে দেন। কারণ এটা তাদের পেশা। রুটি, রুজির কারণেই তারা কাস্টমারকে খুশি রাখার চেষ্টা করেন। তবে চুল, দাড়ি কাটার বিষয়ে পুলিশী উদ্যোগের ফলে বর্তমানে এ ধরনের হেয়ার স্টাইলে চুলকাটার সংখ্যা অনেকটা কমে গেছে। পুলিশের গৃহীত এ উদ্যোগ সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন