ভাগ্য পরিবর্তনের আশায় এক বুক স্বপ্ন নিয়ে ২০১৮ সালের নভেম্বর মাসে গৃহকর্মী হিসেবে সৌদি আরবে গিয়েছিলেন নারায়ণগঞ্জের শাহনাজ। সৌদিতে যাওয়ার আট মাস পর তাকে দেশে ফিরতে হয়েছে লাশ হয়ে।
মঙ্গলবার (২০ আগস্ট) সকালে তার নিথর দেহ এমিরেটস এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইটে করে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছায়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিমানবন্দরের প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কের উপসহকারী পরিচালক (ডিএডি) আনিসুজ্জামান।
তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘শাহনাজের মৃতদেহ তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ সময় ওয়েজ আর্নার্স ওয়েলফেয়ার বোর্ডের পক্ষ থেকে দাফন খরচ বাবদ তাদের ৩৫ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। আর মৃত্যু বাবদ ক্ষতিপূরণের টাকা পরবর্তী সময়ে দেওয়া হবে।’
শাহনাজের পরিবার জানায়, গৃহকর্মীর কাজ নিয়ে তিনি সৌদি আরবে গিয়েছিলেন। শাহনাজ অসুস্থ হলেও তাকে কোনও প্রকার চিকিৎসা দেওয়া হয়নি। সৌদিতে যাওয়ার পর শাহনাজ আট মাসে মাত্র সাতবার দেশে ফোন করেন। কিন্তু সেই নম্বরে আবার যোগাযোগ করলে তাকে পাওয়া যেতো না। পরিবারের সদস্যরা জানান, সৌদি আরবে শাহনাজের নিয়োগকর্তার পরিবারের দাবি, শাহনাজ আত্মহত্যা করেছেন। কিন্তু বিভিন্ন নির্যাতনেই শাহনাজের মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা পরিবারের।
শাহনাজের এভাবে চলে যাওয়া কিছুতেই মানতে পারছিলেন না তার ছেলে সজীব। তিনি জানান, তার মায়ের সঙ্গে সর্বশেষ কথা হয় রমজানের ঈদের আগে। তখন বলেছিলেন তিনি খুব অসুস্থ। সৌদি আরবের ওষুধ তার শরীরে কাজ করছিল না। তাই তাকে যেন প্রেসারের ওষুধ পাঠানো হয়।
প্রসঙ্গত, গত ১৫ বছরে বিদেশে মৃত্যু হয়েছে তিন হাজার ৮০০ নারী শ্রমিকের। সৌদি আরব, জর্ডান, লেবানন, ওমান ও আরব আমিরাত—এই পাঁচ দেশে নারী শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনা বেশি। বিগত ১০ বছরে প্রবাসী শ্রমিকদের মধ্যে উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে নারী কর্মীর মৃত্যুর সংখ্যা। ওয়েজ আর্নার্স ওয়েলফেয়ার ডেস্ক থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ২০০৫ সাল থেকে এ পর্যন্ত তিন হাজার ৭৯৩ জন নারী শ্রমিক প্রবাসে মারা গেছেন। ২০১৬ সাল থেকে এ বছরের জুন মাস পর্যন্ত অর্থাৎ সাড়ে তিন বছরে মৃত্যু হয়েছে মোট ৩৩১ জনের। আত্মহত্যা, দুর্ঘটনা, স্ট্রোকসহ নানা কারণে ২০১৬ সালে নারী কর্মী মারা গেছেন মোট ৫৭ জন। ২০১৭ সালে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১০২ জনে। গেলো বছর এই সংখ্যা ছিল ১১২ জন। আর এ বছরের জুন মাস পর্যন্ত ছয় মাসে ৬০ জনের লাশ এসেছে দেশে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন