জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৪তম শাহাদাৎ বার্ষিকী এবং জাতীয় শোক দিবসের অনুষ্ঠানে বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে গান পরিবেশন করা হয়েছে জাতিসংঘে। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখা এসব গান পরিবেশনে বাদ্যযন্ত্রের ব্যবহার দেখে হতবাক হয়েছেন অনেকেই।
স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনের আয়োজনে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে প্রথমবারের মতো বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৪তম শাহাদাৎ বার্ষিকী এবং জাতীয় শোক দিবস পালন করা হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের সচেতন প্রবাসী রাজনীতিবিদরা মনে করছেন দেশ-বিদেশে সকলেই তাদের পিতামাতার মৃত্যু দিবসে দোয়া মাহফিলের ব্যবস্থা করে থাকেন। কেউই পিতামাতার মৃত্যু দিবসে গান বাজনার আয়োজন করেন না। কিন্তু জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন আকস্মিকভাবে বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৪তম শাহাদাৎ বার্ষিকী এবং জাতীয় শোক দিবসের অনুষ্ঠানে বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে গান পরিবেশন ব্যবস্থা করেন। যা নিন্দনীয় ঘটনা বলে অনেকেই মত প্রকাশ করেছেন।
এভাবে জাতীয় শোক দিবস পালন করা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে প্রবাসীরা বাংলাদেশিদের মাঝে।
নিউইয়র্কের একজন প্রবীণ রাজনীতিবিদ এ প্রতিবেদককে জানান, জাতিসংঘে বাংলাদেশ শান্তি মিশন ও নিউইয়র্কস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসে এ ঘটনা নতুন নয়।
প্রায় প্রতিবছরই বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে জাতীয় শোক দিবস পালন করেন বাংলাদেশ শান্তি মিশন ও নিউ ইয়র্কস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস। যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের প্রায় ২০ জন নেতাকর্মিসহ কয়েকজন প্রবাসী মুক্তিযোদ্ধাকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে কেউ এর সঠিক উত্তর দিতে পারেননি।
তবে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক ও স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের কন্ঠযোদ্ধা শহীদ হাসান জানান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাহাদাৎ বার্ষিকী এবং জাতীয় শোক দিবসে গান পরিবেশনের বিষয়টি নির্ভর করবে পরিবেশ ও পরিস্থিতির ওপর। যেহেতু বিষয়টি শাহাদাৎবার্ষিকী বা মৃত্যু দিবস তাই গান পরিবেশনের সময় কোন বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার না করাই ভালো বলে উল্লেখ করেন শিল্পী শহীদ হাসান।
জাতীয় শোক দিবসের অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে বাদ্যযন্ত্র বিহীন বা খালি গলায় গান গাওয়া যেতে পারে বলে উল্লেখ করেছেন আরও অনেক রাজনীতিবিদ। যুক্তরাষ্ট্রের আওয়ামী লীগ নেতাকর্মিদের সামনেই জাতিসংঘে বাংলাদেশ শান্তি মিশন ও বাংলাদেশ দূতাবাসে প্রায় প্রতিবছরই বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে গান বাজনা করলেও কেউ কখনো প্রতিবাদ না করে হাতে তালি দিয়ে বাহবা দিয়ে থাকেন। বিষয়টি অনেকটা দৃষ্টিকটুও বটে।
যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বেশ কয়েকজন সচেতন বাংলাদেশি এ বিষয়ে আলাপকালে বলেন, জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন কিংবা নিউইয়র্কস্থ বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেলের কনসাল জেনারেল সাদিয়া ফয়জুনেচ্ছা তাদের বাবা মার মৃত্যু দিবসে কি কখনো গান বাজনা করেছেন বা করবেন?
তাহলে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাহাদাৎ বার্ষিকী এবং জাতীয় শোক দিবসে কেন তারা গান বাজনার ব্যবস্থা করেন। কেউ কেউ এর কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন প্রবাসী শিল্পীদের ডাকলেই বিনা সম্মানীতেই গান গাইতে ছুটে আসেন। কিন্তু তারা জানেন না পরে তা খরচ দেখিয়ে সরকারি অর্থ আত্মসাত করা হয়। আর কারনেই প্রায় প্রতিবছরই বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে জাতীয় শোক দিবস পালন করেন বাংলাদেশ শান্তি মিশন ও নিউইয়র্কস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস।
অনুষ্ঠানে জাতিসংঘের সদস্যদেশসমূহের স্থায়ী প্রতিনিধি, কূটনীতিক, জাতিসংঘের কর্মকর্তা, নিউইয়র্কস্থ যুক্তরাষ্ট্রের মূল ধারার মানবাধিকার কর্মী, লেখক, চলচিত্র শিল্পী, টিভি উপস্থাপক, ফটোগ্রাফার এবং প্রকৌশলীসহ বিভিন্ন পেশার বিশিষ্টজনেরা অংশগ্রহণ করেন।
এর আগে সকাল ৯ টায় স্থায়ী মিশনে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখার মাধ্যমে জাতির পিতার ৪৪তম শাহাদাৎ বার্ষিকী এবং জাতীয় শোক দিবস পালনের কর্মসূচি শুরু করা হয়।
এসময় ১৫ আগস্টের শহীদদের উদ্দেশ্যে মিশনের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারি একমিনিট নিরবতা পালন করেন। জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী প্রদত্ত বাণী পাঠ এবং ১৫ আগস্টের শহীদদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করে দোয়া করা হয়।
বিকেলে জাতিসংঘ সদরদপ্তরে আয়োজিত শোক দিবসের মূল অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন।
এ সময় দেশী-বিদেশি অতিথিরা জাতির পিতার স্মৃতির প্রতি সম্মান জানিয়ে একমিনিট নিরবতা পালন করেন। এরপর জাতির পিতার জীবন ও কর্ম এবং বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা সংগ্রাম বিশেষ করে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা তুলে ধরে একটি ভিডিওচিত্র প্রদর্শন করা হয়।
আলোচনা অনুষ্ঠানটিতে ‘বঙ্গবন্ধু ও বহুপাক্ষিকতাবাদ’ বিষয়ে কী-নোট স্পীচ প্রদান করেন জাতিসংঘের সাবেক আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল ও জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের সাবেক স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত আনোয়ারুল করিম চৌধুরী।
এদিকে, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৪তম শাহাদাৎবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস পালন উপলক্ষে যুক্তরাষ্ট্র শাখা আওয়ামী লীগের আলোচনাসভার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম তথা ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। ভিডিওতে দেখা গেছে, অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামীলীগের মহিলা সদস্য সংগঠনের সভাপতি সিদ্দিকুর রহমানের স্ত্রী শাহানারা রহমান তার বক্তব্য দেওয়ার আগেই অকারণে অট্টহাসি দেন। তার এই হাসি দেখে উপস্থিত অনেকেই হাসতে থাকে সেখানে চরম হাস্যরসের সৃষ্টি হয়। এ ভিডিও ফেইসবুকে ছড়িয়ে পড়ায় দলের নেতাকর্মিসহ প্রবাসীদের মাঝে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
বৃহস্পতিবার জ্যাকসন হাইটসের ডাইভার সিটি প্লাজায় বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও আলোচনাসভাসহ নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ। জাতীয় শোক দিবসের শুরুতেই আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা ডা. ফেরদৌস খন্দকারের সহযোগিতায় এল্মহার্স্ট হাপাতালে রক্তদান কর্মসূচির অনুষ্ঠিত হয়। পরে জ্যাকসন হাইটসের ডাইভার সিটি প্লাজায় আলোচনাসভার আয়োজন করা হয়।
এতে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান। সভাটি পরিচালনা করেন ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সামাদ আজাদ। অনুষ্ঠানে জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি মাসুদ বিন মোমেন প্রধান অতিথি ও নিউইয়র্কস্থ কনসাল জেনারেল সাদিয়া ফয়জুন্নেসা বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন