যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে আজ মঙ্গলবার ভোরে দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ১২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন দুই নম্বর ইউনিটটি বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে ওই ইউনিট থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনও বন্ধ রয়েছে।
এদিকে এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ১২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন এক নম্বর ইউনিটটি ওভারহোলিং কাজের জন্য প্রায় ১৮ মাস ধরে বন্ধ রয়েছে।
ফলে ঐ ইউনিট থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনও হচ্ছে না।
বর্তমানে এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ২৭৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন তিন নম্বর ইউনিট সচল রয়েছে। বর্তমানে এই ইউনিট থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে ২৩০ মেগাওয়াট।
জানা যায় ১ ও ২নং ইউনিট দুটির গড়ে সর্বোচ্চ উৎপাদন ৭০-৮০ মেগাওয়াটে নেমে আসে। এগুলোকে ওভারহোলিং করে পূর্ণ ১২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য জন বিউবো এবং চাইনিজ কোম্পানির (CMC-SEC Consortium) মধ্যে ২০১৭ সালে পেরায় ১৯০ কোটি মূল্যের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
পরবর্তীতে একই কাজের জন্য আরও পেরায় ১৪.৫০ কোটি টাকা মূল্যের বয়লার টিউব জরুরী বিবেচনায় সরাসরি কেনা পদ্ধতিতে কেনা হয়।
চুক্তির শর্তাবলীতে ওভারহোলিং কাজ পর্যায়ক্রমে ১নং ইউনিট ৩ মাস, common system ১ মাস ও ২নং ইউনিট ৩ মাস অর্থাৎ মোট ৭ মাসের মধ্যে সমুদয় ওভারহোলিং কাজ সমাপ্ত করার কথা।
বাস্তবে ১নং ইউনিটের ওভারহোলিং পেরার ১৮ মাস অতিবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত বড়পুকুরিয়া কর্তৃপক্ষ ওই ইউনিটটি চালু করতে পারেনি।
আজ ২নং ইউনিটটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এই প্রচণ্ড গরমে সর্ব উত্তরে বসবাসরত সাধারণ মানুষের মধ্যে কোয়ালিটি বিদ্যুৎ সরবরাহে অনিশ্চয়তা তৈরি হল।
এদিকে, ৩টি ইউনিটের মধ্যে দুটি ইউনিট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এখন ৫২৫ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র হতে এখন উৎপন্ন হচ্ছে মাত্র ২৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ।
বড়পুকুরিয়া কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র সূত্রে জানা যায়, আজ ভোরে যান্ত্রিক সমস্যার কারণে ২নং ইউনিটটি বন্ধ করে দেয় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এর আগে রাত থেকেই ওই ইউনিটটির টারবাইনে বেশ সমস্যা দেখা দেয়।
বড়পুকুরিয়া তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সংরক্ষণ শাখার ব্যবস্থাপক মো. মাহবুবুর রহমান ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, ভোরের দিকে সমস্যা হওয়ার কারণে কেন্দ্রের ২নং ইউনিটটি বন্ধ হয়ে গেছে। বর্তমানে সেটি চালু করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
তিনি জানান, কেন্দ্রের ১নং ইউনিটটি ওভার হোলিংয়ের জন্য প্রায় দেড় বছর ধরে বন্ধ রয়েছে। তবে, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সেটি চালু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
ইউনিটের উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কিছুটা লোডশেডিং হতে পারে, তবে অন্য স্থান থেকে বিদ্যুৎ নিয়ে এসে লোডশেডিংয়ের সমস্যা মোকাবেলা করার চেষ্টা হচ্ছে, যোগ করেন তিনি।
বর্তমানে বিদ্যুৎ কেন্দ্রে কয়লার কোন ঘাটতি নেই জানিয়ে মাহবুবুর রহমান বলেন, প্রতিদিন এই কেন্দ্রে প্রায় ৪ হাজার মে. টন কয়লা সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে। বর্তমানে ৩নং ইউনিটির জন্য প্রতিদিন প্রায় ২ হাজার থেকে ২২শ’ মে. টন কয়লার প্রয়োজন হয়।
তিনি জানান, আর ১নং ও ২নং ইউনিটের জন্য প্রতিদিন প্রয়োজন হয় প্রায় ১২শ’ মে. টন কয়লা। তবে, ১নং ও ২নং ইউনিটি বন্ধ থাকায় বাড়তি কয়লা মজুদ রাখা হচ্ছে। যাতে করে বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির কয়লা উৎপাদনে সমস্যা হলেও তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিদ্যুৎ উৎপাদনে কয়লা সংকটের মত সমস্যার মধ্যে পড়তে না হয়।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন