আন্তর্জাতিক বাজারে দাম নেই। লোকসান। এর ওপর বর্ষাতেও টানা প্রচণ্ড গরম। এতে ঝাঁকে ঝাঁকে মরছে চিংড়ি। যেন মরার ওপর খাড়ার ঘা।
এতে চোখে অন্ধকার দেখছেন। কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করে সর্বশান্ত হতে বসেছেন সাতক্ষীরার চিংড়ি চাষিরা। বাধ্য হয়ে অনেকে স্থানীয় বাজারে কমমূল্যে চিংড়ি বিক্রি করছেন।
জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, গেল মৌসুমে জেলার ৬টি উপজেলায় বাগদার উৎপাদন লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল ২৬ হাজার ৫০০ মেট্রিকটন।
চলতি মৌসুমে ২৭ হাজার ৭৭০ মেট্রিকটন বাগদা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ১ হাজার ৫৪০, তালায় ১ হাজার ৩৫৫, দেবহাটায় ৩ হাজার ৫১৪, কালিগঞ্জে ৬ হাজার ১০, আশাশুনিতে ৮ হাজার ৪৪৫ এবং শ্যামনগরে ৬ হাজার ৮৩৬ মেট্রিকটন।
এ লক্ষ্যে ৬টি উপজেলার ৬৬ হাজার হেক্টর জমিতে ৫৫ হাজার ১২২টি নিবন্ধিত ঘেরে চিংড়ি উৎপাদন করছেন চাষিরা।
প্রায় দুই দশক চিংড়ি চাষ করছেন আশাশুনি উপজেলার সরাপপুর গ্রামের রাজেস্বর দাশ। চলতি মৌসুমে ২ হাজার ৫০০ বিঘা ঘেরে চিংড়ি রয়েছে তার।
শুরুতে ভাইরাসে ব্যাপকহারে চিংড়ি মারা যায়। এতে প্রায় দেড় কোটি টাকার মতো চিংড়ি নষ্ট হয়। সেই ধাক্কা সামলেও উঠলেও এখন চিংড়ির দাম পাচ্ছেন না তিনি।
রাজেস্বর দাশ বলেন, গেল বছর এই সময়ে যে চিংড়ি কেজিপ্রতি ৯০০-৯৫০ টাকা ছিল, এখন ৫৫০ টাকার বেশি বেচা সম্ভব হচ্ছে না। কিন্তু, উৎপাদন খরচ গেলবারের চেয়ে বেড়েছে। এতে করে ব্যাপক লোকসানের মুখে পড়েছেন তিনি।
কারণ হিসেবে এই চাষির দাবি, ‘আন্তর্জাতিক বাজারে চাহিদা কমে গেছে। দামও আগের মতো নেই।’
সদর উপজেলার ফিংড়ি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও ঘের ব্যবসায়ী সামছুর রহমান জানান, চলতি মৌসুমে তিনি ৩০০ বিঘা জমির ঘেরে চিংড়ি চাষ করেছেন। গরমে চিংড়ি মরে যাচ্ছে। বাজারেও দাম নেই। এতে উৎপাদন খরচ ওঠা দূরে থাক, লোকসান গুণতে হবে।
সাতক্ষীরার লক্ষাধিক চিংড়ি চাষির একই হাল। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত প্রান্তিক পর্যায়ের চাষিরা। কারণ, তারা ঋণের টাকায় চিংড়ি চাষ করেছেন। এখন দাম না পাওয়ায় সর্বশান্ত হতে বসেছেন।
সাতক্ষীরা মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আব্দুর রব বলেন, ‘বিগত দুই বছর ধরে রফতানিজাত চিংড়ি দেশি বাজারে বিক্রি করতে চাষিরা বাধ্য হচ্ছেন। এতে তারা ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না। ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন।’
রেণু সংকটে জেলায় চিংড়ির উৎপাদন কমার আশঙ্কা করেছেন সাতক্ষীরা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. শহিদুল ইসলাম সরদার।
তিনিও স্বীকার করেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারে চিংড়ির দাম কমে যাওয়ায় এবার চাষিরা বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হবেন।’
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন