সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারি শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁসের প্রতিবাদে এবং পরীক্ষা বাতিলের দাবিতে মানববন্ধন করেছে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ। ১৬জুন রবিবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পাদদেশে কেন্দ্রীয়ভাবে এবং সারাদেশে মানবন্ধন করেছে সংগঠনটি।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, যাদের মাধ্যমে প্রাইমারী স্কুলের ছোট্ট শিশুরা নৈতিকতা শিখবে সেই সেক্টরেই যদি অনিয়মের মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগ হয় তাহলে শিক্ষার্থীরা কি শিখবে এই শিক্ষকদের কাছ থেকে? তারাই তো পরবর্তীতে খুন, ধর্ষণ, নানারকম রাহাজানির সাথে জড়িত হবে। কারণ তাদের শিক্ষক আদর্শ না। মানববন্ধনে উক্ত পরীক্ষায় অংশ নেয়া পরীক্ষার্থীরাও অংশ নেন।
পরীক্ষায় অংশ নেয়া মিল্টন বলেন,‘একটা শিশুর প্রাথমিক স্তরটাই যদি দুর্নীতি দিয়ে শুরু হয় তবে বড় হয়ে সে কি হবে? নিশ্চয় দুর্নীতিবাজই হবে। কারণ দুর্নীতির মাধ্যমে যদি শিক্ষক হয় তবে সে কি শিখাবে? তিনি বলেন, আমি একটি ভিডিও দেখেছি যেখানে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষিকা নেচারকে পড়াচ্ছে নাটুরে। তারা (জালিয়াতির মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকরা) তো নাটুরেই শিক্ষা দিবে। মানববন্ধনে পরীক্ষায় অংশ নেয়াদের মধ্য থেকে আরো বক্তব্য রাখেন শাহাবুদ্দিন, জয়নাল।
সংগঠনটির যুগ্ম আহ্বায়ক ফারুক হাসান বলেন,‘আজ শিক্ষাব্যবস্থার প্রতিটি ক্ষেত্রে দুনীর্তি হচ্ছে। আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলব- আপনার নামকে ব্যবহার করে একটি স্বার্থশীল গোষ্ঠী বাংলাদেশকে একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করতে চাচ্ছে। প্রশ্নফাঁসের মাধ্যমে যেসকল পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে অনতিবিলম্বে সেসকল পরীক্ষা বাতিল করে স্বচ্ছ পরীক্ষা এবং স্বচ্ছ প্রশ্নপত্রের মাধ্যমে সেসকল পরীক্ষা নিন এবং এই ছাত্রসমাজকে বাঁচান। পরীক্ষার সিস্টেমকে বাঁচান।’
সংগঠনটির যুগ্ম আহ্বায়ক মুহাম্মদ রাশেদ খাঁন বলেন,‘প্রশ্নফাঁসের মাধ্যমে বাংলাদেশকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আজকে আমরা এমন একটি রাষ্ট্রে বসবাস করছি যেখানে আমরা নিরাপদ নই।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের(ডাকসু) ভিপি ও সংগঠনটির যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল হক নুর বলেন,‘সরকারি সকল ক্ষেত্রের নিয়োগ আজ টাকার বিনিময় ক্ষমতসীনদের হাতে জিম্মি হয়ে আছে। খুব কম মেধাবীরা আজকে নিয়োগ পায়। আজকে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশুনা করে ছাত্ররা হতাশ। কারণ ছাত্রদের কর্মসংস্থান নেই। সরকারি দলের বিভিন্ন ব্যক্তিরা যখন বিভিন্ন সভা সেমিনার করেন তখন আমরা দেখি তারা বলেন যে দেশ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হচ্ছে, প্রবৃদ্ধি বাড়ছে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে কোনো কর্মসংস্থান বাড়ছে না এবং বেকারত্ব বাড়ছে। শিক্ষামন্ত্রণালয়ের সাথে জড়িত সকলের কাছে আমরা আহ্বান জানাবো যে আপনারা প্রশ্নফাঁসের বিরুদ্ধে কার্যকরী পদক্ষেপ নিন। নইলে সবাই চুপ থাকলেও বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ চুপ থাকবে না।
তিনি আরো বলেন, আইয়ুব-মোনায়েম খানের স্বৈরাচারী ছাত্র সংগঠনের মতো ছাত্রলীগ একাধিকবার আমাদের উপর হামলা করেছে। বগুড়ায়(২৬ মে) আমাদের উপর জঙ্গিদের মতো হামলা করেছে ছাত্রলীগ। ন্যায়বিচার জাদুঘরে চলে যাওয়ার উপক্রম হচ্ছে। সুশাসন কোথায় তা আপনারা ভালো করেই জানেন। সুশাসন ক্ষমতাসীনদের জন্য সুশাসন, অন্য মানুষদের জন্য সুশাসন নাই। ন্যায়বিচার ক্ষমতাসীনদের পকেটে বন্দি।
এসময়ে তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের সকল ছাত্র সমাজের প্রতি আহ্বান জানিয়ে আমি বলব- আজকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো বলেন, সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো বলেন সকল মানুষই আজকে দুবৃত্তয়ান ও অপরাজানীতির যে শাসন ব্যবস্থা আমাদের দেশে চলছে তার ভয়ে মানুষ কথা বলতে পারছে না। কথা বলতে সাহস করছে না। আমরা তাদের একটা কথাই বলব আমরা আপনাদের সামনে থাকব। আপনারা এই সকল অন্যায়, অনিয়ম, অবিচারের বিরুদ্ধে কথা বলুন। অন্যথায় এই রাষ্ট্র ধ্বংশ হয়ে যাবে। ত্রিশ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে আমরা যে স্বাধীন বাংলাদেশ পেয়েছি, ২লক্ষ মা বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে আমরা যে রাষ্ট্র পেয়েছি তাদের সাথে বেঈমানী করা হবে। তারা আমাদেরকে স্বাধীনতা এনে দিয়েছে মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা, বৈষম্য নিরসনে, ন্যায়ভিত্তিক সমাজ বিনিমার্ণের লক্ষ্যে।
সংগঠনটির আহ্বায়ক হাসান আল মামুন গত ২৪ মে ও ৩১ মে অনুষ্ঠিত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁসের প্রমাণস্বরূপ জাতীয় দৈনিকের শিরোনাম- ‘প্রশ্নফাঁসের সাথে জড়িত জেলায় আটক ৫৬জন’ ও ‘প্রশ্নফাঁসের দায়ে পটুয়াখালীতে আটক ৪৬’ উল্লেখ করে উক্ত দুটি পরীক্ষা বাতিল, পুনঃরায় স্বচ্ছ পরীক্ষা নেয়া ও জড়িতদের শাস্তির দাবি জানান। একই সাথে তিনি সকল পাবলিক পরীক্ষা সরকারি কর্ম কমিশনের মাধ্যমে নেয়ার দাবি জানান।
আস
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন