নিজের প্রতিষ্ঠানের এক কর্মীর বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগের প্রমাণ পাওয়ার পরও তাকে প্রশ্রয় দেয়ার অভিযোগে ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন টেন মিনিট স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা আয়মান সাদিক।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে যৌন হয়রানির কথা উঠার পরও তাকে বরখাস্ত করার পরিবর্তে বরং আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়েছিলেন বলে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠে। এনিয়ে ঢাবির ওই ছাত্রী সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেইসবুকে পোস্ট দিয়েছিলেন।
সেখানে তিনি টেন মিনিট স্কুলের শাওন নামে একজনের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ করেন। তিনি অভিযোগ করেন আয়মান সাদিক শাওনকে প্রশ্রয় দিচ্ছেন। এমনকি তার নামে
বইও উৎসর্গ করেন। যৌন নিপীড়কের পক্ষাবলম্বন করায় তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
এদিকে ওই ছাত্রীর কাছে ক্ষমা চেয়ে পোস্ট করছেন আয়মান। তাতে তিনি দাবি করেছেন, পুরো বিষয়টিতে তিনি এবং তার প্রতিষ্ঠান সঠিক ভূমিকা নিতে এবং স্বচ্ছতা বজায় রাখতে ব্যর্থ হয়েছে। ভবিষ্যতে এমনটি আর হবে না সেই আশ্বাসও দিয়েছেন তিনি।
ওই ছাত্রী জানান, ২০১৬ সালে এক বিতর্ক অনুষ্ঠানে বিচারকের দায়িত্বে ছিলেন তিনি এবং তার বন্ধু বিতার্কিক শাওন চৌধুরী। এর আগে দীর্ঘদিন ধরে শাওন তাকে নানাভাবে প্ররোচিত করার চেষ্টা করলেও তিনি সাড়া দেননি। স্কুল শিক্ষার্থীদের ওই বিতর্ক প্রতিযোগিতা চলাকালীন শাওন তার শরীরের স্পর্শকাতর জায়গা জোর করে হাত দেন।
নভোলি বারবার বাধা দিলে শাওন বেশ সহিংস হয়ে ওঠেন বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীর। পরে আয়োজক ও বিতার্কিকদের সংগঠনের নেতাদের কাছে অভিযোগ করে বিচার পাননি। বরং তাদের পরামর্শে বিষয়টি চেপে যান তিনি।
এরপর শাওন চৌধুরী টেন মিনিট স্কুলে যোগ দিয়ে সেখানে ওই ছাত্রীর ঘনিষ্ঠ বন্ধু বিশ্ববিদ্যালয়ের জুনিয়রদের কাছে তার বিষয়ে কুৎসা ছড়ান। বিতার্কিকদের বিভিন্ন ফোরামে ইতোমধ্যে শাওনের বিরুদ্ধে ওই ছাত্রীর অভিযোগ নিয়ে নানা আলোচনা হয়েছে। সেসব অভিযোগকে বানোয়াট বলে প্রচার চালিয়ে শাওন দাবি করতে থাকেন, ওই ছাত্রী শাওনের প্রেমে পড়েছিলেন, এবং তাতে সাড়া না দেয়ায় শাওনের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ তুলেছেন।
ওই ছাত্রী তার ফেসবুক পোস্টে বলেন, এমন প্রচারণার প্রেক্ষিতে তিনি শাওনের অপকর্মের বিষয়ে টেন মিনিট স্কুল কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেন। বেশ কয়েকবারের চেষ্টার পর স্কুল কর্তৃপক্ষ বিষয়টি গুরুত্বসহকারে নেয় এবং সেখানকার কর্মকর্তা সাকিব বিন রশিদকে বিষয়টি তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়।
বিতার্কিকদের কয়েকজন এবং নিপীড়নের ঘটনা ঘটেছিল যেই অনুষ্ঠানে সেটির আয়োজকদের সহায়তায় তদন্ত শেষে আয়মান সাদিকের অবগতিতে টেন মিনিট স্কুলের সব বিভাগের প্রধানদের এক বৈঠকে শাওনকে দোষীয় সাব্যস্ত করা হয়। তখন টেন মিনিট স্কুল কর্তৃপক্ষ শাওনকে তাদের প্রতিষ্ঠান থেকে বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত হয়।
কিন্তু এরপর আর অভিযুক্ত বহিষ্কার করা হয়নি। এমনকি তদন্তে যৌন নিপীড়নকারী হিসেবে প্রমাণিত হওয়ার পরও স্কুলের নারী কর্মীদেরকে শাওনের ব্যাপারে সর্তক করা হয়নি- এমনটি দাবি ওই ছাত্রীর। উল্টো আয়মান সাদিক তাকে প্রশ্রয় দিয়েছেন এবং তার ঘনিষ্ঠ হিসেবে আগের মতোই চলেছেন।
এমনকি বিগত বইমেলায় (বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত হওয়ার পর) শাওনের নামে নিজের একটি বই উৎসর্গ করেছেন আয়মান সাদিক। যৌন নিপীড়নের অভিযোগের প্রমাণ পাওয়ার পর গত কয়েক মাসে শাওন টেন মিনিট স্কুলে ও আয়মান সাদিকের সাথে আগের মতোই কাজ করছেন বলে অভিযোগ ওই ছাত্রীর।
ক্যাম্পাসলাইভ২৪
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন