চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) কমিশনার মো. মাহাবুবর রহমান জানিয়েছেন, মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে পুলিশ-সাংবাদিক-রাজনীতিকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের ‘দহরম-মহরম’ অর্থাৎ সুসম্পর্ক রয়েছে।
মাদক নিয়ন্ত্রণ প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে গণমাধ্যমের সম্পাদক-প্রকাশকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনাদের মধ্যেও কেউ কেউ আছেন, যাদের মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে দহরম-মহরম। পুলিশের মধ্যে যেমন আছে, প্রত্যেক পেশার লোকদের মধ্যেও আছে যারা পরোক্ষভাবে মাদক ব্যবসায় সহযোগিতা করেন। সবাইকে যার যার অবস্থান থেকে মাদক নির্মূলে সহযোগিতা করতে হবে।’
বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) দুপুরে চট্টগ্রাম নগরীর আগ্রাবাদে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের বঙ্গবন্ধু মিলনায়তনে এক সুধী সমাবেশে সিএমপি কমিশনার এসব কথা বলেন। এদিন নগরীর ডবলমুরিং থানা এলাকায় ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা নেটওয়ার্ক কার্যক্রমের উদ্বোধন উপলক্ষে সুধী সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
বিজ্ঞাপন
মাদক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে সাংবাদিক ও পুলিশের ভূমিকা প্রসঙ্গে এসময় মো. মাহাবুবর রহমান আরও বলেন, আপনাদের প্রতি বিনীত অনুরোধ- মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে পুলিশ কোনো ভুল করলে, সেই ভুলটুকু দয়া করে লিখবেন না। ভালো কাজের স্বীকৃতি চাই, খারাপ কাজের সমালোচনা চাই।
কিছু ‘কলঙ্কিত’ পুলিশ সদস্যের মাদক ব্যবসায় সংশ্লিষ্টতা আছে মন্তব্য করে সিএমপি কমিশনার বলেন, ‘এই মাদক ব্যবসার সঙ্গে দেশের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার লোকের সঙ্গে আমাদের পুলিশ বাহিনীরও কিছু কলঙ্কিত লোকের সংশ্লিষ্টতা আছে। আমরা তাদেরকে শনাক্ত করতে চাই এবং তাদের বিরুদ্ধে আমাদের কঠোর অবস্থান অব্যাহত আছে। আমরা প্রতিবছর এমনকি প্রতিমাসে এরকম অসাধু কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অ্যাকশন নিয়ে থাকি। তারা চাকরিচ্যুত হয় অথবা জেলখানায় যায়।
পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, আমি আশা করব, যারা আড়ালে-আবডালে, পরোক্ষভাবে মাদক ব্যবসায় সহযোগিতা করছেন, তারা এই পথ থেকে সরে আসবেন। কোন পুলিশ সদস্য মাদক নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হবেন না।
রাজনীতিবিদদের উদ্দেশে সিএমপি কমিশনার বলেন, ‘মাদক ব্যবসায়ী বা মাদকের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা আছে এমন কাউকে আপনাদের রাজনৈতিক সংগঠনের নেতৃত্বে বসাবেন না। দয়া করে আপনারা মাদক ব্যবসায়ীদের জনপ্রতিনিধি বানাবেন না। পুলিশ মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে দহরম-মহরম রাখলে পুলিশ যেমন পরিত্যাজ্য তেমনি মাদক ব্যবসায়ীর সঙ্গে যোগাযোগ রাখা ও পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়া জনপ্রতিনিধিও পরিত্যাজ্য। সবাই মিলে এগিয়ে না এলে এই সমাজ রক্ষা করা যাবে না।’
সমাবেশে সিএমপি কমিশনার আগামী একমাসের মধ্যে পুরো নগরীকে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার আওতায় আনার ঘোষণা দেন।
সুধী সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন সিএমপি’র উপ-কমিশনার (পশ্চিম) ফারুক উল হক। অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (পশ্চিম) মো.কামরুল ইসলামের সঞ্চালনায় এতে আরও বক্তব্য রাখেন নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার আমেনা বেগম, মহানগর কমিউনিটি পুলিশিং কমিটির আহ্বায়ক ও দৈনিক আজাদীর সম্পাদক এমএ মালেক, চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম, কমিউনিটি পুলিশিং কমিটির সদস্য সচিব অহিদ সিরাজ চৌধুরী স্বপন। সমাবেশে নগর পুলিশের ডবলমুরিং জোনের সহকারি কমিশনার আশিকুর রহমান, ডবলমুরিং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সদীপ কুমার দাশসহ ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা ছিলেন।
সারাবাংলা
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন