মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের প্রাক্কালে একটি শহীদ মিনারের নামফলক ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে সাতটার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার কালীকচ্ছ বাজারে স্থাপিত কালীকচ্ছ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এ ঘটনা ঘটে। দুই বছর আগে উপজেলা প্রশাসনের সহায়তায় ওই বাজারের আশপাশের ১০ জন যুবকের একটি কমিটি শহীদ মিনারটি নির্মাণ করেন। শহীদ মিনারের নাম ফলকটিতে ওই ১০ জন নির্মাতার নাম লিখা ছিল। এ ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, ২০১৭ সালের মার্চ মাসে কালীকচ্ছ ইউনিয়ন পরিষদ সংলগ্ন ছয় শতাংশ জমির ওপর একটি শহীদ মিনার নির্মিত হয়। এর জন্য ২০১৭ সালের ২১ ফেব্রুয়ারিতে স্থানীয় সাংবাদিক মোহাম্মদ মাসুদকে সভাপতি এবং কালীকচ্ছ ইউনিয়ন শাখা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছলিম উদ্দিনকে সাধারণ সম্পাদক করে ১০ সদস্যের একটি শহীদ মিনার নির্মাণ কমিটি গঠন করা হয়।
ওই কমিটি উপজেলা প্রশাসনের সহায়তায় কালীকচ্ছ ইউনিয়ন পরিষদ সংলগ্ন জায়গাটি দখলমুক্ত করেন। এর আগে জায়গাটি দীর্ঘদিন ধরে একটি চক্র দখলে রেখেছিলেন। পরে ওই বছরের ১০মার্চ ওই কমিটি শহীদ মিনার নির্মাণ কাজ শুরু করেন। এ নিয়ে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আবু মুসা মৃধার সাথে শহীদ মিনার নির্মাণ কমিটির বিরোধ দেখা দেয়।
২০১৮ সালের মার্চের প্রথম দিকে ওই কমিটি নিজেদের প্রচেষ্টায় শহীদ মিনার নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করেন। তারা শহীদ মিনারের পাশে কমিটির ১০ সদস্যের নামে একটি নামফলক স্থাপন করেন। এতে আরও ক্ষিপ্ত হন আবু মুসা মৃধা। ২০১৮ সালে তার হুমকিতে এই শহীদ মিনারে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের অনুষ্ঠান করতে পারেনি স্থানীয় লোকজন।
মোহাম্মদ মাসুদ বলেন,‘গত বছর ২৬ মার্চের অনুষ্ঠান করতে পারিনি। এ ছাড়া ওই দিন সন্ধ্যায় আবু মুসার লোকজন আমাদের কমিটির সদস্য আবদুর রাজ্জাককে মারধর করে তার হাত পা ভেঙ্গে দিয়েছিলেন। অন্য সদস্যদের হুমকি-ধমকি দিচ্ছিলেন। এ ব্যাপারে গত বছরের ২৮ মার্চ সরাইল থানায় মামলা হয়। এর প্রধান আসামী ছিলেন আবু মুসা মৃধার ছেলে রাসেল মৃধা।
মামলাটি গত বছরের ৭ এপ্রিল স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সম্পৃক্ততায় সালিস বৈঠকের মাধ্যমে নিস্পত্তি হয়। ওই সালিসে আবু মুসার ছেলে ও তার লোকজনকে এক লাখ ২০ হাজার টাকা জরিমানা করেন সালিসকারকরা। এর পরও আবু মুসা মৃধার লোকজন শহীদ মিনারের পাশের নামফলকটি ভাঙচুরের চেষ্টা চালায়।’
ছলিম উদ্দিন বলেন, মঙ্গলবার সকালে আবু মুসা মৃধার উপস্থিতিতে তার ছেলে রাসেল মৃধা ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আলী মিয়ার নেতৃত্বে শহীদ মিনারের নামফলকটি ভাঙ্গা হয়। এতে আমরা কেউ আজ শহীদ মিনারে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের অনুষ্ঠান করতে যায়নি। তারাই শহীদ মিনার দখলে রেখে কয়েকটি সংগঠনের নামে পুস্পমাল্য অর্পণ করেছেন। আশপাশের কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা সংগঠন এতে অংশ নেননি।’
অভিযুক্ত আওয়ামী লীগ নেতা আবু মুসা মৃধা বলেন, মঙ্গলবার জাতীয় দিবসের সব অনুষ্ঠান ওই শহীদ মিনারে হয়েছে। সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য উম্মে ফাতেমা নাজমা বেগমের নামেও পুস্পমাল্য দেয়া হয়েছে। এখানে কোনো সমস্যা নেই। তবে শুনেছি ওই শহীদ মিনারের পাশে বিতর্কিত ব্যক্তিদের নাম লেখা ছিল। কে বা কারা সকালে ভেঙ্গে দিয়েছে। এর সাথে আমি বা আমার কোনো লোক জড়িত নয়।
এ বিষয়ে সরাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বলেন,‘শহীদ মিনারের পাশে থাকা নামফলকটি ভাঙ্গার ঘটনাটি জেনেছি। বিষয়টি নিস্পত্তির জন্য চেষ্টা চালাবো। সমাধান না হলে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন