এখন থেকে আর ‘ঘুষ খাবেন না’ বলে শপথ নিয়েছেন সোনালী ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। রীতিমতো হাত তুলে তারা অর্থমন্ত্রীর কাছে এই প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। গতকাল বিকেলে রাজধানীর কাকরাইলে অবস্থিত আইডিবিইবি ভবনে এই ব্যাংকের বার্ষিক সম্মেলনে উপস্থিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের এ শপথ পড়ান অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী পবিত্র কুরআন থেকে তিলাওয়াত করে ঘুষ না খাওয়ার প্রতিশ্রুতি নেন সোনালী ব্যাংকের কর্মকর্তাদের কাছ থেকে। কর্মীরা এ সময় ঘুষ না খাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে সশব্দে শপথ পড়েন। এ সময় উপস্থিত কর্মকর্তাদের প্রতি অর্থমন্ত্রী বলেন, আপনারা কী ঘুষ খান? কিভাবে খান? আমাকে তো কেউ ইনজেকশন পুশ করেও ঘুষ খাওয়াতে পারবে না। ঘুষ দেয়া এবং নেয়া সমান অপরাধ।
অনুষ্ঠানে সোনালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান আশরাফুল মকবুল, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির, অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব মো: আসাদুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী বলেন, আমি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব থাকা অবস্থায় সেই মন্ত্রণালয়ের ট্যাগ লাইন দিয়েছিলাম, ‘এখানে আপনার একটি স্বপ্ন আছে’। আর অর্থ মন্ত্রণালয়ে আসার পর আমি ট্যাগ লাইন দিয়েছি ‘আমরা আপনার সততায় বিশ্বাসী’। আমি বিশ্বাস করি, সততার সাথে কাজ করলে কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে আমরা অবশ্যই পৌঁছাব।’
মন্ত্রী বলেন, আমরা একে অপরের সততায় বিশ্বাস করি না। সৎ মানুষের বড়ই অভাব। তারপরও বলব সৎ মানুষ অনেক বেশি। সৎ মানুষদের কারণেই দেশ ও পৃথিবী টিকে আছে। আমি বিশ্বাস করি আপনারা সৎভাবে কাজ করবেন। অর্থমন্ত্রী বলেন, চলতি অর্থবছরে জিডিপির প্রাক্কলন করা হয়েছে ৮ দশমিক ১৩ শতাংশ। মাথাপিছু আয় হয়েছে ১ হাজার ৯০৯ ডলার। আগামী চার বছরের মধ্যে আমাদের প্রবৃদ্ধি ডাবল ডিজিটে উন্নীত হবে ও ১০ শতাংশে দাঁড়াবে।
অনুষ্ঠানে গভর্নর ফজলে কবির বলেন, সোনালী ব্যাংক অনেক সেক্টরে ভালো করলেও প্রভিশন ঘাটতি অনেক বেশি। অবলোপনকৃত ঋণের পরিমাণ খুব একটা কমেনি এবং শ্রেণিকৃত ঋণেরও (খেলাপি ঋণ) উন্নতি দেখা যাচ্ছে না। শ্রেণিকৃত ঋণের আবার ৯০ শতাংশই মন্দ। এ বিষয়গুলো মাথায় রেখে আপনাদের কাজ করতে হবে।
তিনি বলেন, শ্রেণিকৃত ঋণ আদায়ে প্রথমেই মামলা না করে আলোচনার মাধ্যমে টাকা আদায়ের চেষ্টা করুন। একই সাথে একক খাতে ঋণ না দিয়ে তা সমন্বয়ের পরামর্শ দেন গভর্নর। তিনি বলেন, বিশেষ গোষ্ঠী বা অঞ্চলে ঋণ কেন্দ্রীভূত করা যাবে না। এলসির দায় যেন ফোর্স লোনে পরিণত না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। সর্বোপরি সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
অনুষ্ঠানে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব মো: আসাদুল ইসলাম বলেন, বিদেশে সব গ্রাহকদের সমান গুরুত্ব দেয়া হয়। আমাদেরও সেই চর্চা করতে হবে। তবেই ব্যাংকের প্রতি গ্রাহকের আস্থা বাড়বে। বর্তমান যুগের চাহিদা অনুযায়ী তথ্য ও প্রযুক্তি সংবলিত সেবা দিতে না পারলে সোনালী ব্যাংক পিছিয়ে পড়বে বলেন আসাদুল ইসলাম।
সোনালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান আশরাফুল মকবুল বলেন, হলমার্ক থেকে শিক্ষা নিয়ে আমরা বড় বড় ঋণ দেয়ার বিলাসিতা থেকে সরে এসেছি। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে নজর দিয়েছি। সোনালী ব্যাংক ৫১টি সেবা দিয়ে আসছে। এর মধ্যে ১৬টি নামমাত্র মূল্যে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের ৯৫ হাজার কোটি টাকার এলসি খুলেছি। এতে কমিশন পাওয়ার কথা ৫ হাজার কোটি টাকা। পেয়েছি মাত্র ২০ কোটি টাকা।
ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ বলেন, আগামী ১৬ ডিসেম্বরের মধ্যে সোনালী ব্যাংক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাবো। আমি যখন দায়িত্ব গ্রহণ করি তখন প্রভিশন, মূলধন ঘাটতি ও জনবল সঙ্কট ছিল প্রকট। এখন সেটি অনেক অংশে কমেছে। ২০১৯ সাল আমাদের অর্জন সুসংহত করার বছর।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন