রুহুল আমিননোয়াখালীর সুবর্ণচরে এক গৃহবধূকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ মামলার প্রধান আসামি রুহুল আমিনের জামিন নামঞ্জুর করেন বিচারিক আদালত। পরে হাইকোর্টে জামিন আবেদন করেন তার আইনজীবী আশেক-ই-রসুল। আবেদনের শুনানি শেষে রুহুল আমিনকে এক বছরের জামিন দেন হাইকোর্ট। কিন্তু ওই জামিন আবেদনে মামলার গুরুত্বপূর্ণ নথি সংযোজন না করা এবং আদালতকে বিভ্রান্ত করে জামিন নেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা। একইসঙ্গে জামিনের এ ঘটনাটিকে নজিরবিহীন বলেও মনে করছেন তারা।
মামলার নথি অনুযায়ী, ৩০ ডিসেম্বর ভোটের দিন আসামিরা ওই নারীকে তাদের পছন্দের প্রতীকে ভোট দিতে বলেন। কিন্তু ওই নারী তাতে রাজি না হলে এ নিয়ে তর্কাতর্কির একপর্যায়ে আসামিরা তাকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেয়। ওই দিন (৩০ ডিসেম্বর) রাতে আসামিরা ওই নারীকে মারধর ও ধর্ষণ করে। ৩১ ডিসেম্বর ওই নারীর স্বামী চরজব্বর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। তারা হলো, মো. সোহেল (৩৫), মো. হানিফ (৩০), মো. স্বপন (৩৫), মো. চৌধুরী (২৫), মো. বেচু (২৫), বাদশা আলম ওরফে কুড়াইল্যা বাসু (৪০), আবুল (৪০), মোশারফ (৩৫) ও ছালা উদ্দিনের (৩৫)। পরে এই ঘটনার ইন্ধনদাতা ও প্রধান আসামি রুহুল আমিনকে গত ২ জানুয়ারি গ্রেফতার করা হয়। তিনি স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য।
রুহুল আমিনের পক্ষে ২৯ জানুয়ারি জামিন চেয়ে নোয়াখালী দায়রা জজ আদালতে আবেদন জানায় তার আইনজীবী। ৪ মার্চ আবেদন নামঞ্জুর করেন নোয়াখালীর দায়রা জজ সালেহ উদ্দিন আহমদ। এরপর রুহুল আমিনের জামিন চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন জানান আইনজীবী আশেক-ই-রসুল। কিন্তু হাইকোর্টে করা জামিন আবেদনে প্রয়োজনীয় নথি সংযোজন না করায় আদালতকে বিভ্রান্ত করা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলী অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। তিনি বলেন, ‘এই মামলার আসামিদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানববন্দি ও ধর্ষণের স্বীকার নারীর জবানবন্দি সন্নিবেশিত না করে আদালতকে ভুল বুঝিয়ে ওই আইনজীবী রুহুল আমিনের জামিন করিয়েছেন।’
এছাড়াও আসামি রুহুল আমিনের আইনজীবী জামিন আবেদনটি বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মোস্তাফিজুর রহমানের আদালতে শুনানির জন্য ফাইল করলেও পরবর্তীতে প্রতারণার উদ্দেশ্যে বিচারপতি মামনুন রহমান ও বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চ শুনানি করে জামিন নেন বলেও জানিয়েছেন মাহবুবে আলম।
১৮ মার্চ রুহুল আমিন হাইকোর্ট থেকে জামিন পেলেও সে জামিন আদেশের অনুলিপি রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা হাতে পান ২১ মার্চ। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট আদালতের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ রায় বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘জামিন আবেদনে যে কোর্টে শুনানির কথা ছিল আইনজীবী সে কোর্টে শুনানি না করে অন্য আরেকটি কোর্টে শুনানি করে জামিন করান। আসামির আইনজীবীর এ ধরনের বিভ্রান্তির ফলে আমরা বুঝতে পারিনি যে সেদিন (১৮ মার্চ) কোনও আসামির জামিন হয়েছে।’
এরপর রুহুল আমিনের জামিন আদেশের অনুলিপি হাতে পেয়ে অসম্পূর্ণ জামিন আবেদন এবং ওই আবেদনে থাকা বিভ্রান্তির তথ্য সম্পর্কে বিচারপতি মামনুন রহমান ও বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চকে অবহিত করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ রায়।
মাহবুবে আলম বলেন, ‘আমাদের অ্যাটর্নি জেনারেল অফিস থেকে সংশ্লিষ্ট আদালতের বিচারপতিদের যখন বিষয়টি অবহিত করা হয় তখন শনিবার (২৩ মার্চ) সকাল বেলা বিচারপতিরা তাদের চেম্বারে বসে ওই জামিন আদেশটি রিকল করে বাতিল করেন। ফলে আগের জামিন আদেশটি বাতিল হয়ে গেলো। তার অন্তর্বর্তীকালীন জামিন আর কার্যকর থাকলো না।’
রুহুল আমিনের আইনজীবীর বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার রুল জারির আবেদন জানানো হবে বলে মন্তব্য করেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল। এছাড়াও ওই আইনজীবীর বিষয়টি প্রথমে প্রধান বিচারপতির নজরে আনা হবে। প্রয়োজনে বিষয়টিআইনজীবীদের নিয়ন্ত্রকারী সংস্থা বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের নজরে আনা হবে বলেও তিনি জানান।
আদালতকে বিভ্রান্ত করে জামিন নেওয়ার অভিযোগে রুহুল আমিনের আইনজীবীর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়ে মাহবুবে আলম বলেন, ‘এটা আদালতের সঙ্গে এক ধরনের প্রতারণা ও আদালত অবমাননার শামিল। এটা খুবই ঘৃণ্য তৎপরতা। আমরা বিষয়টি প্রধান বিচারপতি নজরে আনবো যে, কিছু কিছু আইনজীবী এক আদালতের কথা উল্লেখ করে অন্য আদালত থেকে আবেদনের শুনানি করছেন। আর বিচারপতিদের কাছেও আমাদের আবেদন তারা যখন মামলার পিটিশন দেখেন তখন তারা যেন লক্ষ্য রাখেন, এক আদালতের আবেদন অন্য আদালতে শুনানি হচ্ছে কিনা।’
যদি আদালতের সামনে সব তথ্য-প্রমাণ সংযুক্ত করা হতো তবে অবশ্যই হাইকোর্ট এ মামলায় রুহুল আমিনকে আদালত জামিন দিতেন না বলে মনে করেন মাহবুবে আলম। তিনি আরও বলেন, ‘আদালতকে ভুল বুঝিয়ে জামিন নেওয়া হয়েছিল। যা আদালত বুঝতে পেরে আদেশটি রিকল করে জামিন বাতিল করেছেন। তাছাড়া এমন ঘটনা নজিরবিহীন। যেখানে সমগ্র জাতি ধর্ষণ মামলার ব্যাপারে উদ্বিগ্ন এবং ভয়ঙ্কর ক্ষুব্ধ সেখানে ওই আসামির জামিন হওয়ায় সবাই হতবাক হয়ে গিয়েছিলেন। তবে আদালতের বন্ধের দিন হলেও জামিন আদেশটি বাতিল করায় আমরা হাইকোর্টের কাছে কৃতজ্ঞ।’
তবে আগের আদেশ নিয়ে আসামি যেন কারাগার থেকে বেরিয়ে যেতে না পারে সেজন্য জামিন বাতিলের আদেশ সম্পর্কে খুব শিগগিরউ কারা কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে বরে জানিয়েছেন তিনি।
আদালতকে বিভ্রান্ত করার অভিযোগ বিষয়ে আইনজীবী আশেক-ই-রসুলের সঙ্গে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন