গরমকাল আসতে না আসতেই শুরু হয়ে গেছে লোডশেডিংয়ের প্রকোপ। অন্যদিকে মেরামতের কাজ বা মেট্রোরেলের কাজের জন্যও প্রায়ই রাজধানীর অনেক এলাকাতে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকছে। ফলে দীর্ঘ ৭/৮ ঘণ্টার লোডশেডিংয়ে ভুগতে হচ্ছে নগরবাসী অনেককেই। একে তো প্রচণ্ড গরম। অন্যদিকে বিদ্যুৎ না থাকলে পানির সমস্যাসহ নানা রকমের সমস্যার উদ্ভব হয়। জেনে নিন, এমন পরিস্থিতিতে কী করতে পারেন।
১। বিদ্যুৎ না থাকার সবচাইতে বড় অসুবিধা হচ্ছে পানি না থাকা। লোডশেডিং হবে জানা থাকলে নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বেই ট্যাংকিতে পানি ভরে রাখুন। এতে বিদ্যুৎ না থাকা সময়টিতে পানির অভাব হবে না। অন্যদিকে হুট করে বিদ্যুৎ চলে গেলে প্রথমেই বাথরুমের বালতিগুলো ভরে রাখুন। রান্নাঘরের কাজের জন্যও কিছু পানি ধরে রাখুন। যেসব এলাকায় বিদ্যুতের সমস্যা বেশি, তারা ছোট পানির ড্রাম কিনে রাখতে পারেন। এতে হুট করে বিনা নোটিশে বিদ্যুৎ গেলেও পানির সমস্যা হবে না।
২। জেনারেটরে তেল আছে কিনা সবসময় খেয়াল রাখুন। আইপিএসে চার্জ আছে কিনা লক্ষ্য রাখুন। এই লোডশেডিংয়ের মৌসুমে এই যন্ত্রগুলো একবার সার্ভিসিং করিয়ে নিন। এতে পুরো গরমকাল ভালো সার্ভিস পাবেন। এই যন্ত্রগুলো না থাকলে বাড়িতে চার্জার লাইট, মোমবাতি ইত্যাদি মজুদ রাখুন। মোমবাতি ফ্রিজে রাখলে অধিক সময় জ্বলবে।
৩। প্রচণ্ড গরম, বলাই বাহুল্য যে বিদ্যুৎ না থাকলে প্রচুর ঘাম হবে। তাই পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করুন।
৪। জানালা-দরজা বন্ধ রেখে গুমোট পরিবেশে থাকবেন না। এতে গরম অনেক বেশি লাগবে, দমবন্ধ পরিবেশে অসুস্থ হয়ে পড়বেন। সারাক্ষণ এসিতে থাকা অভ্যাস হলেও বিদ্যুৎ গেলে জানালা-দরজা মেলে দিন। এতে বায়ু সঞ্চালন হবে, ঘরে অক্সিজেন প্রবেশ করবে।
৫। গরমে অসুস্থ বোধ করলে গোসল সেরে নিতে পারেন। হালকা ও খোলামেলা পোশাক পরিধান করুন। এতে শরীর একটু ভালো বোধ করবেন।
৬। প্রচুর ঘাম হলে অনেক সময়ই ইলেক্ট্রোলাইট ইমব্যাল্যান্স দেখা দেয়। তাই পান করতে পারেন ডাবের পানি। যদি গরমের কারণে মাথা ঘোরায়, গা গুলায়, তীব্র মাথা ব্যথা হয় কিংবা চোখে ঝাপসা দেখেন, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন।
৭। অনেক বাড়িতেই জেনারেটর বা আইপিএস নেই। লোডশেডিংয়ে সবচাইতে বেশি ঝামেলায় তারা পড়েন। প্রচণ্ড গরমের মাঝে ভারী কিছু খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। এতে আরও খারাপ বোধ করবেন। খুব হালকা সহজপাচ্য খাবার দিয়ে সেরে নিন। ভাজা পোড়া একেবারেই খাবেন না।
৮। বিদ্যুতের লাইনে মেরামতের কাজ হলে অনেক সময়ই হুট করে ভোল্টেজ ওঠা-নামা করতে পারে। ফলে ইলেক্ট্রনিক যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে যায়। তাই বিদ্যুৎ না থাকলে একটি ফ্যান বা লাইট বাদে বাকি সবকিছুর সুইচ বন্ধ রাখুন। বিশেষ করে স্মার্ট টিভি, ফ্রিজ, ওভেন ইত্যাদি।
৯। লোডশেডিংয়ের সময়টা অগ্রিম জানা থাকলে মনে করে সময়ের আগেই ফোন চার্জ করে নিন। চার্জার লাইট ও ল্যাপটপেও চার্জ দিয়ে রাখুন। ঘনঘন বিদ্যুতের সমস্যা হলে পাওয়ার ব্যাংক ব্যবহার শুরু করুন। এতে পৃথিবীর সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হবেন না।
১০। দীর্ঘ সময় বিদ্যুৎ না থাকলে ফ্রিজে রাখা খাবার পচে যাওয়া খুবই স্বাভাবিক। এই সময়ে যতটা সম্ভব ফ্রিজ না খুলতে চেষ্টা করবেন। এতে ভেতরটা ঠান্ডা থাকবে। ডিপ ফ্রিজ মোটেও খুলবেন না, এতে ২/৩ দিন পর্যন্ত ভেতরের বরফ গলবে না। আর ৪/৫ ঘণ্টার বেশি বিদ্যুৎ না থাকলে ফ্রিজে রাখা ভাত-তরকারি বা অন্যান্য পচনশীল খাবার বের করে চুলায় গরম করে নিন। না হলে খাবারগুলো নষ্ট হয়ে যাবে। ফ্রিজে রাখা ফল বা সবজি বের করে ধুয়ে বাতাসে মেলে দিন। শাকপাতা থাকলে রান্না করে ফেলুন।
নগরজীবনে নানা রকমের উটকো ঝামেলা থাকবেই। তাই এইসব ঝামেলার জন্য একটু সচেতন হলেই প্রস্তুত থাকা সম্ভব।
প্রিয়
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন