নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা মেয়রের আশ্বাসে আস্থা পাচ্ছেন না বলেই জানিয়েছেন। শিক্ষার্থীরা দুই অংশে ভাগ হয়ে কৌশলী অবস্থান নিয়েছেন। বুধবার একটি অংশ আন্দোলন স্থগিত করলেও অপর অংশ বৃহস্পতিবার মানববন্ধন করেছেন। পুলিশের নিষেধ মান্য করে তারা সড়ক অবরোধের দিকে যাননি।
আন্দোলনকারীরা মনে করছে অতীতেও সরকার দাবি আদায়ের আশ্বাস দিয়ে তা বাস্তবায়ন করেনি। এবারও আশ্বাসের প্রেক্ষিতে চলমান একেবারে স্থগিত হলে নতুন করে আন্দোলন কঠিন হয়ে যাবে। তাই আন্দোলন জিইয়ে রাখার কৌশল হিসেবে শিক্ষার্থীদের একটি অংশ তা অব্যাহত রেখেছে।
মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর প্রগতি সরণির যমুনা ফিউচার পার্কের সামনে সুপ্রভাত বাসের নিচে চাপা পড়ে নিহত হন বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের (বিইউপি) আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ছাত্র আবরার আহমেদ চৌধুরী।
এ দুর্ঘটনার পর নিরাপদ সড়কের জন্য ৮ দফা দাবিতে আন্দোলনে নামে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বুধবার রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে অবরোধ করে তারা। এদিন আট দফার মধ্যে তিন দফা দাবি আদায়ে সরকারকে ২৪ ঘণ্টার সময় বেঁধে দেয় আন্দোলনকারীরা।
দাবি গুলো হচ্ছে, ৩০২ ধারার অধীনে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে চার্জশিট গঠন করে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের অধীনে বিচার শেষ করা, সুপ্রভাত ও জাবালে নূর বাসের রুট পারমিট বাতিল করা ও আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ, জনগুরুত্বপূর্ণ স্থান চিহ্নিত করে ও আন্ডারপাস, ওভারব্রিজ, জেব্রা ক্রসিং নির্মাণের পরিকল্পনা ঘোষণা ও গেজেট আকারে প্রকাশ।
বুধবার আন্দোলনকারীদের ১০ জনের এক প্রতিনিধি দল ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলামের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। মেয়র তাৎক্ষণিক তিন দফা দাবি মেনে নিলে ২৮ মার্চ পর্যন্ত সাত দিনের জন্য আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণা দেয় আন্দোলনকারীদের ওই প্রতিনিধি দল।
তবে আন্দোলনকারীদের অপর একটি অংশ তা অব্যাহত রেখেছেন।
আন্দোলন স্থগিতকারী অংশের বিইউপির ছাত্র রাহাত দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বৃহস্পতিবারও যারা আন্দোলন করেছে সেখানেও আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রী অংশ নেয়। তারা শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করেছে। তবে আমরা সরকারকে সাত দিনের সময় দিয়েছি। সরকারের কর্মকাণ্ডের ওপরই নির্ভর করবে আমাদের পরবর্তী কর্মসূচি।’
বৃহস্পতিবারের মানববন্ধনে অংশ নেওয়া বিইউপির ছাত্র জাবিদ হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সরকারের পক্ষ থেকে আট দফা দাবি বাস্তবায়নের আশ্বাস দিলেও আমাদের অনেকে এই আশ্বাসে আস্থা পাচ্ছে না। এর আগে শহীদ রমিজউদ্দিন স্কুল অ্যান্ড কলেজের দুই শিক্ষার্থীকে জাবালে নূর পরিবহন চাপা দিয়ে মারলে নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়। সরকার দাবি বাস্তবায়নের ঘোষণাও দেয়। কিন্তু পরে দাবি বাস্তবায়ন করেনি।’
দুপুর আড়াইটার দিকে এক সংবাদ সম্মেলনে বিইউপির শিক্ষার্থী ফাহমিন চৌধুরী বলেন, ‘আমরা সম্পূর্ণ অহিংস উপায়ে কর্মসূচি পালন করেছি। বুধবার আমরা সড়ক অবরোধ করেছিলাম। আজ (বৃহস্পতিবার) আমরা কোনো অবরোধে যাইনি। আমরা চাই না কোনো জনদুর্ভোগ তৈরি হোক। দাবি আদায়ে সরকার সাত দিন সময় চেয়েছে, আমরা সময় দিয়েছি। তবে আমরা রাস্তায় থাকব। শুক্র ও শনিবার আমাদের আন্দোলন বন্ধ থাকবে। রবিবার থেকে আবারও আমরা রাস্তায় থাকব।’
সংবাদ সম্মেলনের পর বিকেল ৪টার দিকে শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন শেষ করে ফিরে যান।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন