ধবধবে সাদা রঙের একটি ছোট্ট বিড়ালছানা। সেটির শরীরের মাঝ বরাবর ধারালো ছুরি বসিয়ে আস্তে আস্তে তার শরীর দুই টুকরো করে ফেলা হয়। এরপর একে একে বিড়ালটির শরীর থেকে আলাদা করা হয় তার চামড়া, চোখ, জিহবা, কিডনি, হৃদপিণ্ড, মগজ ও নাড়িভুড়ি।
এটি কোনো ভৌতিক থ্রিলার সিনেমার দৃশ্য নয়, ঘটনাটি ঘটেছে ঢাকায়। আর নির্দ্বিধায় এই কাজটি করে তার ভিডিও নিজের ফেসবুক মেসেঞ্জারের মাই-ডে তে আপলোড করেছে উচ্চ-মাধ্যমিক পড়ুয়া এক ছাত্রী।
মেয়েটি যখন ছুরি দিয়ে জ্যান্ত বিড়ালটি কাটছিল আর ভিডিও ধারণ করছিল, তখন ব্যাকগ্রাউন্ডে বাজছিল মিউজিক। বিড়াল কাটার এক পর্যায়ে মেয়েটি বলে উঠে “I LOVE BLOOD”।
ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে মানুষের তীব্র সমালোচনার এক পর্যায়ে ভিডিওটি সরিয়ে নিয়ে ফেসবুক আইডি ডিএকটিভেট করে দেয় মেয়েটি।
বুধবার ভিডিওটি দেখার পরই মেয়েটির সন্ধানে নেমে পড়েন কেয়ার ফর পাওস (Care For Paws) নামের একটি প্রাণী সংরক্ষণ বিষয়ক সংগঠনের সেক্রেটারি জাহিদ হোসাইন। এক পর্যায়ে তিনি জানতে পারেন মেয়েটির বাড়ি মুগদা এলাকায়। পরে তিনি মুগদা থানা পুলিশের সহায়তা নিয়ে মেয়েটির বাসায় যান।
মেয়েটি খিলগাঁও আইডিয়াল কলেজের উচ্চ মাধ্যমিকের ছাত্রী। জাহিদ ও মুগদা থানার পুলিশ কর্মকর্তারা মেয়েটির বাড়িতে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে। জিজ্ঞাসাবাদের সময়কার একটি ভিডিও এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে ছড়িয়ে পড়েছে।
ভিডিওতে মেয়েটি তার অপরাধ স্বীকার করে বলে, আমার ভুল হয়েছে, আমি বুঝতে পারিনি বিষয়টি এই পর্যন্ত গড়াবে। আসলে আমি এক্সাইটমেন্ট (উত্তেজনা) থেকে এই কাজটা করে ফেলেছি। আমি দু:খিত। আসলে সাইন্স এক্সপেরিমেন্টের উপর আমার আগে থেকেই এক্সাইটমেন্ট ছিল। আর আমার বিড়ালটা এমনিতেই আধমরা অবস্থায় ছিল, যে কারণে উত্তেজনা থেকে আমি এই কাজ করে ফেলি।
মেয়েটির মা একজন আইনজীবী। তিনি বলেন, আমাদের ঘরের বিড়ালটা এই বাচ্চা দিয়েছিল। বাচ্চাটা আধমরা ছিল। একটা সামান্য বিড়ালের বাচ্চার জন্য আপনারা এমন করছেন, মানুষের বাচ্চা যে মেরে রাস্তায় ফেলে রাখে তখন আপনারা কি করেন? বাচ্চা মেয়ে ভুল করে ফেলছে।
ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়ার পর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জাহিদের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করে পরিবর্তন ডটকম। তিনি বলেন, পুলিশসহ আমরা মেয়েটির বাসায় গিয়েছিলাম। তাকে এখন মুগদা থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। গতকালের থেকেও ভয়াবহ ভিডিও মেয়েটির মোবাইল থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। মেয়েটির বিরুদ্ধে প্রাণী কল্যাণ আইনে আমরা মামলা করছি।
মুগদা থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) সুশীল কুমার বর্মণ পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, মেয়েটিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ওই ঘটনায় মামলার প্রক্রিয়া চলছে। পরবর্তীতে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানানো যাবে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন