হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার আউশকান্দি সিএনজি গ্যাস পাস্প এলাকায় থেকে লন্ডনি কন্যা সরিফা নুসরাত তাইবার স্বামী ও গাড়ির চালককে অপহরণের ঘটনার দুই সপ্তাহ অতিবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ।
এ ঘটনায় পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা এবং সাধারণ ডায়েরি না নেয়ার অভিযোগ অপহৃত মাইমুনের পরিবারের। দুই সপ্তাহে উদ্ধার না হওয়ায় অপহৃতদের পরিবারের মধ্যে আতংক ও উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে।
এদিকে গত ১৪ মার্চ অপহৃতদের সন্ধান ও পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা না নেয়ার অভিযোগ তুলে সিলেট রেঞ্জের ডিআইজির বরাবর অভিযোগ দায়ের করেছেন অপহৃত মাওলানা আবদুল্লাহ আল মাইমুনের বড় ভাই মাওলানা আবদুল্লাহ আল মুস্তাফিজ। এর আগে ১১ মার্চ অপহরণকারীরা মোবাইলের মাধ্যমে অপহৃতদের পেতে হলে ১০ লাখ টাকা দেয়ার দাবি করে।
গত ৫ মার্চ রাত ১০টার দিকে সিলেটের দক্ষিণ সুরমা উপজেলার লতিফপুর গ্রামের মাওলানা মাহমুদ হোসাইনের ছেলে মাওলানা আবদুল্লাহ আল মাইমুন তার স্ত্রী জগন্নাথপুর উপজেলার শ্রীধরা পাশা গ্রামের মাওলানা সালাউদ্দিন মনসুরের ব্রিটিশ কন্যা সরিফা নুসরাত তাইবাকে নিয়ে সিলেট থেকে প্রাইভেটকারযোগে মামার বাড়ি মৌলভীবাজারে যাওয়ার পথিমধ্যে প্রাইভেটকারে গ্যাস নেয়ার জন্য রাতেই নবীগঞ্জ উপজেলার আউশকান্দি গ্যাস পাম্পে আসে।
গ্যাস নিয়ে মৌলভীবাজার যাওয়ার পথিমধ্যে গ্যাস পাম্পের কিছু দূরে যাওয়ার পর হঠাৎ করে একটি মাইক্রোবাস এসে প্রাইভেটকারের গতিরোধ করে। কার ভাঙচুর করে লন্ডনি কন্যার স্বামী ও গাড়িচালককে জিম্মি করে নিয়ে যায়। তখন কৌশলে লন্ডনি কন্যা পালিয়ে গিয়ে স্থানীয় আউশকান্দি বাজারের একটি বাসায় আশ্রয় নেয়। জিম্মি করে নিয়ে যাওয়ার ১০ দিন অতিবাহিত হলেও অপহৃত ব্রিটিশ কন্যার স্বামী মাওলানা আব্দুল্লাহ আল মাইমুন ও গাড়িচালক আবদুর রহিমের কোনো সন্ধান পায়নি পুলিশ।
অপহৃত হওয়ার ১০ দিনেও কোনো সন্ধান দিতে না পারায় মাওলানা আবদুল্লাহ আল মাইমুনের পরিবারের মধ্যে আতংক ও উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। এ ঘটনায় মামলা এবং সাধারণ ডায়েরি করতে গেলে পুলিশ মামলা এবং সাধারণ ডায়েরি না নেয়ার অভিযোগ করে দ্রুত অপহৃত আব্দুল্লাহ আল মাইমুনকে উদ্ধার করার জন্য প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ জানান তার পরিবার।
পরিবারিক সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালের এপ্রিল মাসে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন সিলেটের দক্ষিণ সুরমা উপজেলার লতিফপুর গ্রামের মাওলানা মাহমুদ হোসাইনের পুত্র মাওলানা আব্দুল্লাহ আল মাইমুন ও জগন্নাথপুর উপজেলার শ্রীধরা পাশা গ্রামের মাওলানা সালাউদ্দিন মনসুরের ব্রিটিশ কন্যা সরিফা নুসরাত তাইবা। বিয়ের পর তাইবা যুক্তরাজ্যে চলে যান।
স্বদেশের টানে ১৯ জানুয়ারি যুক্তরাজ্য থেকে বাংলাদেশে আসেন সরিফা নুসরাত তাইবা। তার স্বামী মাওলানা আবদুল্লাহ আল মাইমুন নারায়গঞ্জ জেলায় জামেয়া করিমিয়া মাদ্রাসায় মুফতি হিসেবে কর্মরত ছিলেন। স্ত্রী দেশে আসায় অপহৃত হওয়ার কয়েক দিন আগে নিজ বাড়িতে আসেন। এরপর তিনি ও তার গাড়িচালক অপহরণের শিকার হন।
এ ব্যাপারে অপহৃত আবদুল্লাহ আল মাইমুনের বড় ভাই আবদুল্লাহ আল মুস্তাফিজ যুগান্তরকে বলেন, দুই সপ্তাহ হয়ে গেছে এখন পর্যন্ত পুলিশ আমার ভাই এবং গাড়িচালকের কোনো সন্ধান দিতে পারেনি। এমনকি বারবার নবীগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করতে গেলে পুলিশ বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে মামলা বা সাধারণ ডায়েরি নিচ্ছে না।
মামলার ব্যাপারে অপহৃত গাড়িচালক আবদুর রহিমের চাচাতো ভাই মোহাম্মদ আলা উদ্দিন জানান, বেশ কয়েকবার নবীগঞ্জ থানায় আসছি কিন্তু মামলা দায়ের করতে গেলে পুলিশ নানা কথা বলছে।
নবীগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) গোলাম দস্তগীর জানান, অপহৃতদের উদ্ধারে আমাদের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। এ ব্যাপারে অপহৃতদের পরিবার কোনো মামলা দায়ের করেনি।
এ ব্যাপারে নবীগঞ্জ থানার ওসি মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন মামলা না নেয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, শিগগিরই এ ঘটনার রহস্য এবং অপহৃতদের উদ্ধার করা হবে। আমাদের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা মাঠে কাজ করছে, গুপ্তচর নিয়োগ করা হয়েছে আশা করি ভালো রেজাল্ট আসবে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন