ফাগুনের প্রথম সপ্তাহে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলার ওপর দিয়ে বয়ে গেছে ঝড়ো হাওয়া। সেই সঙ্গে ছিল ব্যাপক শিলাবৃষ্টি। এতে শিলাবৃষ্টি যেন তাণ্ডব চালিয়েছে ফসলি ক্ষেতে।
শনিবার (১৬) ফেব্রুয়ারি দিনগত রাত থেকে রোববার (১৭ ফেব্রুযারি) সকাল পর্যন্ত থেমে থেমে বিভিন্ন জেলায় বৃষ্টি হচ্ছে। রোববার ভোরে রাজশাহী ও নাটোরে এবং সকালে সিলেট ও হবিগঞ্জসহ কয়েকটি জেলায় ব্যাপক শিলাবৃষ্টি হয়। শিলার আঘাতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ফসলের।
বাংলানিউজের করেসপন্ডেন্টদের পাঠানো রিপোর্ট
নাটোর ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট মামুনার রশিদ জানান, নাটোরের নলডাঙ্গা ও সিংড়া উপজেলায় ব্যাপক ঝড়সহ শিলাবৃষ্টি হয়েছে। ভোর সাড়ে ৫টার দিকে এ শিলাবৃষ্টি হয়। প্রায় ১০ মিনিট স্থায়ী এ শিলাবৃষ্টিতে ঘরবাড়ির টিনের চালাসহ ফসল ও গাছপালার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
ক’দিন আগে ধানের চারা রোপণ করেছেন, শিলাবৃষ্টির পর সেই জমির পাশে মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লেন এক কৃষক। ছবি: বাংলানিউজনলডাঙ্গা উপজেলার পিপরুল ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান বাংলানিউজকে জানান, তার ইউনিয়নের পিপরুল, পাটুল, হাপানিয়া, ভুষণগাছা, আচড়াখালি, কালিগঞ্জ, ঠাকুরলক্ষ্মীকোলসহ বেশ কয়েকটি গ্রামে শিলাবৃষ্টি হয়েছে। শিলায় ঘরের চালা ফুটো হয়ে গেছে, ভুট্টা, পেয়াজ, রসুন, গম, ধানসহ রবি ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। কৃষকরা কীভাবে এ ক্ষতি কাটিয়ে উঠবেন সেটা এখন চিন্তার বিষয়।
খাজুরা ইউপি চেয়ারম্যান জানান, তার ইউনিয়ের করেরগ্রাম, গোয়ালঘাট, বামুনগ্রাম,হাটবিলা, পারবিশাসহ বেশ কয়েকটি গ্রামে শিলাবৃষ্টিতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। গত ২০ বছরের মধ্যে এতো শিলাবৃষ্টি হয়নি।
পাটুল গ্রামের কৃষক ফরিদুল ইসলাম, আকতার হোসেন জানান, শিলাবৃষ্টিতে তাদের পেয়াজ, রসুন, গম, পেয়াজ বীজ, আর ভুট্টার সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে। কারো কারো ফসল ঘরে তোলাই যাবে না। এতো শিলা পড়েছে যে গাছের পাতা পর্যন্ত ঝড়ে গেছে, মাটিতে শিলার স্তূপ পড়ে আছে।
সিংড়া এলাকার স্থানীয় সাংবাদিক রাজু আহমেদ বাংলানিউজকে জানান, এ উপজেলার চৌগ্রাম, হুলহুলিয়া, ভাগনগরকান্দি,খরমকুড়ি, কলম, কালিনগর, দাজপুর, লালোর, ডাকমণ্ডপ, বারইহাটিসহ অন্তত ২০টি গ্রামে ব্যাপক শিলাবৃষ্টি হয়েছে। ঘরবাড়ি থেকে শুরু করে রবি ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
নাটোর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক কৃষিবিদ মো. রফিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, শিলাবৃষ্টিতে গম, ভুট্টা, পেয়াজ বেশ আক্রান্ত হয়েছে। তবে ধানের কোনো ক্ষতি হবে না। ফসলের ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে কৃষি কর্মকর্তারা মাঠে খোঁজ খবর নিচ্ছেন। বিস্তারিত পরে জানানো সম্ভব হবে।শিলাখণ্ড যেন বরফের চাদরের মতো ঢেকে দিয়েছে ফসলের মাঠ। ছবি: বাংলানিউজরাজশাহীর স্টাফ করেসপন্ডেন্ট শরীফ সুমন জানান, রাজশাহীতে ভোর ৪টা ৪০ মিনিট থেকে ৫টা ১৮ মিনিট পর্যন্ত শিলাবৃষ্টি হয়। এসময় বজ্রপাতও হয়।
শিলায় আমের মুকুলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। আর বৃষ্টি শুরুর পর থেকেই পুরো মহানগর এলাকার বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। যা স্বাভাবিক হতে সকাল সাড়ে ৯টা পর্যন্ত সময় লাগে।
ভোরে শিলাবৃষ্টির পর বিদ্যুৎহীন মহানগরে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। বিশেষ করে বিদ্যুৎ না থাকায় স্থানীয় পত্রিকাগুলো প্রকাশে সকাল হয়ে যায়।
শিলাবৃষ্টির আঘাতে রাজশাহীর গোদাগাড়ী, তানোর, পবা, পুঠিয়া, চারঘাট ও বাঘা উপজেলায় আমের মুকুলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। গাছ থেকে প্রচুর পরিমাণে মুকুল ঝরে পড়েছে। তবে আমের মুকুলের ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করা না গেলেও এ ক্ষতি পুষিয়ে ওঠা সম্ভব নয় বলে দাবি করেছেন স্থানীয় আম চাষি ও ব্যবসায়ীরা।
রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার ভায়ালক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের রায়পুর এলাকার আম ব্যবসায়ী শামসুল হক জানান, আজকের শিলাবৃষ্টির আঘাতে আমের মুকুল ঝরে পড়ায় চরম লোকসান গুণতে হবে তাদের। আম গাছে মুকুল যে পরিমাণ এসেছিল, তাতে অন্যান্য বছরের লোকসান অনেকটা পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব হতো। কিন্তু আজকের শিলাবৃষ্টিতে তাদের অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে।
রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক নজরুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, ভোরের এ ৩৮ মিনিটে রাজশাহী মহানগরে ১৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অফিস। আকাশে এখনও মেঘ রয়েছে। তাই আবারও বৃষ্টি হতে পারে।
এদিকে, আবহাওয়া অধিদফতরের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আগামী ২৪ ঘণ্টায় লঘুচাপের প্রভাবে রাজশাহী, রংপুর, ময়মনসিংহ, ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং খুলনা ও বরিশাল বিভাগের দু’এক জায়গায় অস্থায়ী দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন