অবৈধ অর্থ আর ক্ষমতার দাপটে গত এক দশক ধরে ধরা ছোঁয়ার বাইরে থাকা ইয়াবা ব্যবসায়ী ও গডফাদারদের ডানা ভেঙ্গে মাটিতে নামালো বাংলাদেশ পুলিশ। গত কয়েক মাসে পুলিশের তৎপরতায় আজ আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়েছে টেকনাফের প্রভাবশালী ইয়াবা ব্যবসায়ীরা।
আত্মসমর্পণ করা ইয়াবা ব্যবসায়ীদের মধ্যে রয়েছে সীমান্তবর্তী টেকনাফের সবচেয়ে প্রভাবশালী সরকার দলীয় সাবেক সংসদ আব্দুর রহমান বদির ৪ ভাই সহ পরিবারের এক ডজন সদস্য ও টেকনাফের রাজনৈতিক বিভিন্ন প্রভাবশালী পরিবারের সদস্যরা।
মাদক নির্মূলে গতবছর থেকে শুরু হয় বিশেষ অভিযান। অভিযানের পরও থামছিল না মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে ইয়াবা পাচার। টেকনাফ থেকে ইয়াবা পাচার বন্ধে গত বছরের অক্টোবর থেকে অল আউট অ্যাকশনে নামে পুলিশ। অভিযান সফল করতে প্রথম পদক্ষেপে বদলি করা হয় কক্সবাজারের পুলিশ সুপার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, টেকনাফ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও টেকনাফ থানার ওসি রঞ্জিত বড়ুয়া সহ এক ডজন পুলিশ কর্মকর্তাকে।
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার করা হয় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের বিশেষ শাখার ডিসি মাসুদ হোসেনকে। আর টেকনাফ থানার ওসি হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয় সাহসী পুলিশ অফিস হিসেবে সুখ্যাতি পাওয়া ওসি প্রদিপ কুমার দাশকে। অক্টোবর থেকে ইয়াবার বিরুদ্ধে কক্সবাজার পুলিশের অল আউট অ্যাকশন শুরু হয়। অভিযান শুরুর পর থেকে গত তিন মাসে টেকনাফের ৪০ জন ইয়াবা ব্যবসায়ী ও গডফাদার নিহত হন। পুলিশের এই অভিযানে গুড়িয়ে দেয়া হয় ইয়াবা ব্যবসায়ী ও গডফাদারদের প্রসাদ। ধ্বংস করা হয় ইয়াবা পরিবহনে ব্যবহৃত ট্রলার।
পুলিশের এই অল আউট অ্যাকশনে টেকনাফের ইয়াবা ব্যবসায়ীরা গত এক যুগের ভেতরে সবচেয়ে বেশি কোনঠাসা হয়ে পড়েন। জীবন বাচাতে ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যান ইয়াবা ব্যবসায়ীরা। অনেকে দেশ ছেড়েও পালিয়ে যান।
দিন দিন অভিযানের গতি বাড়তে থাকায় জীবন বাচাতে আত্মসমর্পণের পথ খুঁজতে থাকেন টেকনাফের ইয়াবা ব্যবসায়ী ও গড ফাদাররা। অবশেষে আজ ১৬ ফেব্রুয়ারি টেকনাফে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে আত্মসমর্পণ করেন ১০২ জন ইয়াবা গডফাদার ও ইয়াবা ব্যবসায়ী।
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মাসুদ হোসেন পরিবর্তন ডটকমকে জানান, কক্সসবাজারে পুলিশের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো ইয়াবা। ইয়াবা ব্যবসায়ীদের নেটওয়ার্ক অনেক শক্তিশালী। কিন্তু সরকার ও পুলিশের সর্বোচ্চ মহলের নির্দেশেই কক্সবাজারে পুলিশ ইয়াবার বিরুদ্ধে অল আউট অ্যাকশনে শুরু করে।
১০২ জন ইয়াবা ব্যবসায়ীর আত্মসমর্পণেই এই অভিযান শেষ হবে না বলে জানান এসপি মাসুদ।
তিনি জানান, মিয়ানমার থেকে ইয়াবা পাচার বন্ধের জন্য এই অভিযান অব্যাহত থাকবে।
টেকনাফ থানার ওসি প্রদিপ কুমার দাশ পরিবর্তন ডটকমকে জানান, ইয়াবা সারা দেশের যুব সমাজ ধ্বংস করছে। ইয়াবা আসক্তির কারণে দেশের লাখ লাখ ঘরে অশান্তি বিরাজ করছে। টেকনাফ থেকে ইয়াবা নির্মূলের দায়িত্ব দিয়ে তাকে টেকনাফ থানার ওসির দায়িত্ব দেয়া হয়। শুরু থেকেই সকল বাধাকে তোয়াক্কা না করে ইয়াবা দমনে অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানে কাউকেই ছাড় দেয়া হয়নি।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন