সাত মাস বয়সী কোলের শিশু তরিকুল। মুখে ঘা। স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা কাজে আসেনি। পরে তাকে শরীয়তপুর থেকে ঢাকার সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ভর্তি করেন মা-বাবা।কিন্তু, হঠাৎ ঘটে যাওয়া এক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারাতে হলো পৃথিবীর আলো দেখা এই শিশুকে।
গত বৃহস্পতিবার বিকেলে আগুন লাগলে পুরো সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল ধোঁয়ায় ভরে যায়। ভয়-আতঙ্কে সেখানকার রোগীরা বের হয়ে যান।
হাসপাতালের ১১ নম্বর শিশু ওয়ার্ডের ২৬ নম্বর বেডে শিশু তরিকুলকে অক্সিজেন মাস্ক ও স্যালাইন দিয়ে রাখা হয়েছিল। অন্য রোগীদের ছুটতে দেখে শিশুটির মা-বাবাও অক্সিজেন মাস্ক ও সেলাইন খুলে শিশুটিকে নিয়ে বের হয়ে যান। পরে অন্য হাসপাতালে নেয়া হলেও বাঁচানো যায়নি তরিকুলকে।
শনিবার দুপুরে মুঠোফোনে শিশুটির বাবা তারা মিয়া পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, ‘মুখের ঘা সারাতে ৮ ফেব্রুয়ারি সোহরাওয়ার্দী মেডিকেলের শিশু ওয়ার্ডে তরিকুলকে ভর্তি করি। পরে চিকিৎসকরা তার লিভারে সমস্যা পান।’
কথা বলতে বলতেই কান্নায় ভেঙে পড়েন তারা মিয়া। বলেন, ‘আগুন লাগার পর আমিও অন্যদের মতো আতঙ্কে তরিকুলকে নিয়ে নিচে নেমে যাই। অক্সিজেন মাস্ক ও স্যালাইন খুলে রেখে গিয়েছিলাম। রাস্তার অন্যপাশের কেয়ার হাসপাতালে নিতেই আমাদের আধা-ঘণ্টা লেগে যায়। সেখানে যেতেই দেখি তরিকুল আমার কোলে নেতিয়ে পড়েছে।’
তারা মিয়া আক্ষেপ করে বলেন, ‘ভাল করতে কোলের বাচ্চাটাকে হাসপাতালে এনেছিলাম। একটি দুর্ঘটনা আমার বুকের ধনকে কেড়ে নিল। এই কষ্ট আমি কিভাবে সইব! সারা জীবনের জন্য ও আমার বুকটা ফাঁকা করে গেল।’
কেয়ার হাসপাতালের মহাব্যবস্থাপক মো. আবদুল্লাহ খান পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, ‘শিশুটিকে মৃত অবস্থায় আমাদের এখানে আনা হয়েছিল। অক্সিজেন মাস্ক না থাকায় মূলত তার মৃত্যু হয়েছে।’
উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নতুন ভবনে আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিসের ১৬টি ইউনিট রাত সাড়ে ৮টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন