সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনের কোনো যুক্তি খুঁজে পাচ্ছেন না প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘কোটা প্রথার বিরুদ্ধে হঠাৎ করে এভাবে আন্দোলনের পেছনে কারণ কী? আমরা বুঝতে পারছি না।’
১৭ জুলাই মঙ্গলবার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সামাজিক নিরাপত্তার অধীন বিভিন্ন ভাতা ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে (জিটুপি-গভর্নমেন্ট টু পারসন) সরাসরি উপকারভোগীদের ব্যাংক হিসাবে পাঠানোর কার্যক্রম উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘পিএসসির অধীনে পরীক্ষার মাধ্যমে সরকারি চাকরি পাওয়ার আগে অনেক যাচাই-বাছাইয়ের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। যারা এই পরীক্ষার মাধ্যমে পাস করে, তারা মেধাবী নয়? পিএসসির পরীক্ষা অনেক বেশি কঠিন। যারা এই পরীক্ষা দিয়ে পাস করে তারা সবাই মেধাবী।’
কেউ যদি মেধাবী না হয় তার পক্ষে পিএসসির পরীক্ষায় পাস করা সম্ভব নয় জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যারা অনেক বেশি মেধাবী, তারাই পিএসসির অধীনে পরীক্ষায় বসে এবং সরকারি চাকরি পায়।’
সরকার পিএসসির অধীনে নন-ক্যাডারের মাধ্যমে চাকরির সুযোগ সৃষ্টি করেছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘পিএসসির পরীক্ষা দিয়ে যারা চাকরি পায়, তারা মেধাবী নয়, এমন কথা বলার সাহস তারা পায় কোথায় থেকে?’
সাম্প্রতিক সময়ের আন্দোলন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আন্দোলন বুঝতে পারলাম, কিন্তু এই কোটা আন্দোলনের নামে মধ্যরাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির বাড়িতে, এমনকি তার বেডরুমে ঢুকে স্বর্ণালঙ্কার ও নগদ অর্থসহ মূল্যবান জিনসপত্র লুটপাট ও ভাঙচুরের অর্থ কী? আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিশ্বাস করি, ভিসির বাড়িতে কোনো শিক্ষার্থী হামলা চালাতে পারে না। এ ধরনের ঘটনায় আমি লজ্জিত, যারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে, তারা ঘৃণ্য কাজ করেছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘কোটাবিরোধী আন্দোলন পরোক্ষভাবে সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারকে সুযোগ সুবিধা প্রদানের বিরোধী। আওয়ামী লীগ সরকার মুক্তিযোদ্ধা এবং তাদের পরিবারের জন্য কোটা পদ্ধতি নিশ্চিত করেছে, যাতে করে তারা রাষ্ট্র পরিচালনায় অংশ নিতে পারে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যখন কোটাবিরোধী আন্দোলনের নামে সারা দেশে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল, সেই পরিস্থিতি আমি কোটা পদ্ধতি বিলুপ্তির ঘোষণা দিয়েছিলাম। কিন্তু আমাদের স্বাধীনতাবিরোধী চক্র ও যুদ্ধাপরাধীদের ব্যাপারেও নজর রাখতে হবে, যাতে করে তারা কোনো দিন ক্ষমতায় ফিরে আসতে না পারে এবং কোনো সরকারি চাকরি না পায়।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের প্রয়োজনীয় সংখ্যায় পাওয়া না গেলে সুপ্রিম কোটের একটি নির্দেশনার আলোকে তার সরকার মেধা তালিকা থেকে শূন্য পদ পূরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা আদালতের নির্দেশ অমান্য করতে পারি না এবং মুক্তিযোদ্ধাদের কোটা বাতিল করতে পারি না। কাজেই আমরা কেবিনেট সচিবের নেতৃত্ব একটি কমিটি গঠন করে দিয়েছি এই বিষয়টি দেখার জন্য।’
বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে প্রচলিত ব্যবস্থায় ৫৬ শতাংশ আসনে কোটায় নিয়োগ দেওয়া হয়ে থাকে। এর মধ্যে ৩০ শতাংশ রয়েছে মুক্তিযোদ্ধা কোটা। ১০ শতাংশ নারীদের জন্য, জেলাভিত্তিক ১০ শতাংশ, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জন্য ৫ শতাংশ ও প্রতিবন্ধীদের জন্য বরাদ্দ রয়েছে ১ শতাংশ কোটা। এ কোটাব্যবস্থার সংস্কার দাবিতে আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা।
আন্দোলনের একপর্যায়ে ৮ এপ্রিল ঢাকার শাহবাগে আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশ লাঠিপেটা ও কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুড়ে মারলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। পরে পরিস্থিতি শান্ত করতে ১১ এপ্রিল জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোটা বাতিলের ঘোষণা দেন। এরপর আন্দোলন স্থগিত করেন শিক্ষার্থীরা।
২৭ জুন জাতীয় সংসদে কোটা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কিছু বক্তব্য নতুন করে সংশয়ের জন্ম দিয়েছে বলে দাবি আন্দোলনকারীদের। ওই দিন বিরোধী দলের নেতা রওশন এরশাদ সংসদে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বহাল রাখার দাবি করলে এ বক্তব্যের প্রশংসা করেন প্রধানমন্ত্রী।
৩০ জুন কোটা সংস্কার আন্দোলনের সংগঠকরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগারের সামনে সংবাদ সম্মেলন করতে গেলে হামলা চালায় ছাত্রলীগ। রাজশাহী ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়েও শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা হয়। হামলার শিকার শিক্ষার্থীদের চিকিৎসাও নিতে দেওয়া হয়নি।
এরপর আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা-গ্রেফতারের প্রতিবাদে বিভিন্ন সময় শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবকরা প্রতিবাদ করতে গেলেও ছাত্রলীগ হামলা করে।
প্রিয়
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন