বায়তুল্লাহ। আল্লহর ঘর। শুনলেই তো মনটা ভরে ওঠে। আর যারা নিজের চোখে দেখেছে তাদের কেমন অনুভূতি সেটা সত্যিই আগ্রহের বিষয়।
অাল্লাহ তায়ালার ঘরের দিকে তাকালেই গুনাহগুলো মাপ হতে থাকে। বায়তুল্লাহর মুসাফিরগণ কতই না সোভাগ্যবান।
আল্লাহ তায়ালা যাদেরকে আল্লাহর ঘর, নবী কারিম সা. এর রওজা মুবারক নিজের চোখে দেখার তাওফিক দান করেছেন তারা কতই না সোভাগ্যবান।
সাধারণ মানুষের চোখে আর আল্লাহ পাগলদের চোখে এ বায়তুল্লাহ দেখার মধ্যে অনেক তফাত আছে। আল্লাহর পাগলরা পাগলের মত হয়ে থাকে বায়তুল্লাহর যিয়ারতে।
নবীর আশেকরা দূর থেকে মদিনা দেখতে পেয়েই পাগলের মত আচরণ করে। চোখের নদীতে বুকভাসায় নবীর প্রেমে। নবীর ভালোবাসায়।
বায়তুল্লাহ প্রথম দেখার অনুভূতি জানতে চেয়েছিলাম মরহুম নানুপুর পীর সাহেব জমিরুদ্দীন রহ. ও তাবলিগ জামাআতের মুরব্বি হযরত শায়েখ যাকারিয়্যাহ রহ. এর বিশিষ্ট খলিফা শাইখুল আরব ওয়াল আজম মালিক আবদুল হাফিয আল মাক্কি ও পীরে কামেল মাওলানা সুলাইমান নোমানি রহ. এর খলিফা পীরে কামেল ড. মাওলানা মুশতাক আহমদ এর কাছে।
তিনি বলেন, ব্যক্তিগতভাবে আমার অবস্থাটা বলা আমি পছন্দ করি না। তবে কেউ যদি লাভবান হয় তাই বলছি।
আমি প্রথম বায়তুল্লাহর সফরে যাই ১৯৯৭ সালে। সেটা এক রকম আমার পাগলামির জোরেই যাওয়া হয়েছিলো।
আমার অনেক পরিকল্পনা ছিলো যখন বায়তুল্লাহ দেখবো এভাবে দোয়া করবো, এভাবে প্রার্থনা করবো। অন্যকেউ আমি এভাবে দোয়া করতে শিখিয়েও দিয়েছি। কিন্তু আমার সাথীরা পরে বলেছেন, আমি যখন প্রথম বায়তুল্লাহ দেখেছি চিৎকার দিয়ে বেহুশ হয়ে গিয়েছিলাম।
কিসের দোয়া করবো, আমাকে ধরে দুইজন কাঁধে নিয়ে বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করছিলো। চতুর্থ চক্কর দেয়ার সময় আমার জ্ঞান ফিরে আসে। আমি জিজ্ঞেস করি আমি কোথায়? তারা বললো আমরা তাওয়াফ করছি।
তো মূল বিষয় হলো তাকওয়া আর আল্লাহর মুহাব্বত যার যত বেশি হবে আল্লাহ তায়ালা তাকে ততবেশি নৈরকট্য অর্জনের সুযোগ দেবেন।
বায়তুল্লাহ প্রথম দেখলে কী করণীয় এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, হাদিসে নবী কারিম সা. এ বিষয়ে অনেক গুরুত্ব দিয়েছেন। আল্লাহ তায়ালা কসম করে বলেছেন, বান্দা প্রথম বায়তুল্লাহ দেখে যে দোয়া করবে সে দোয়াই আল্লাহর দরবারে কবুল হবে।
এ জন্য যখনই বায়তুল্লাহ দেখবে সঙ্গে সঙ্গে দাঁড়িয়ে যাবে। আবেগ আর মুহাব্বত ভালোবাসা জড়িয়ে থেকে বায়তুল্লাহর দিকে অপলক তাকিয়ে থাকবে। লাব্বাইক বলা বন্ধ করে কাঁদতে থাকবে। চোখের পানি ফেলতে থাকবে।
বুজুর্গরা বলেন, দোয়ার মধ্যে এ কথাটাও বললে ভালো, হে আল্লাহ আমার জীবনে যত দোয়া করবো আপনি সেগুলো কুবল করবেন।
আর বিশেষ করে বাঙলিদের বলবো, অল্প সময়ের জন্য যাওয়া হয় সে দেশে। সময়টাকে কাজে লাগানো। গিবত সেকায়াত ঝগড়া বিবাদে সময় যেনো নষ্ট না হয়। মনে রাখতে হবে বায়তুল্লাহ সাধারণ আমল অন্য জায়গার তুলুনায় এক লক্ষ সওয়াব বেশি হয়ে থাকে।
তাই ইবাদতের পরিকল্পনা করা। মুয়াল্লিমগণ তাদের মধ্যে ইবাদতের প্রতিযোগিতা তৈরি করে দিবে। যাতে তারা পরস্পর ইবাদতে লিপ্ত থাকে।
কতবার তাওয়াফ করবে কতটি ওমরাহ করবে এগুলো আগেই হিসেব করে নিয়ে যাবে। তাহলে ইবাদতের মধ্যে বরকত হবে বলে মনে করি। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকল হাজি সাহেবের হজ কবুল মঞ্জুর করুন।
বাংলাদেশ কুরআন শিক্ষাবোর্ডের মহাসচিব, চরমোনাই পীর মাওলানা ফজলুল করীম রহ. এর অন্যতম খলিফা, পীরে কামেল মাওলানা নূরুল হুদা ফয়জীকে প্রথম বায়তুল্লাহ দেখার অনুভুতি জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, আসলে এ অনুভূতির কথা মুখে বলা যায় না।
আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা যার যতবেশি তার দিলের ও মনের অবস্থা যে কী হয় একমাত্র সেটা আল্লাহ ও তার সেই খাস বান্দাই বলতে পারবেন।
মূলত হারামাইন শরিফাইন। দুই শ্রেণির লোক যায়। কারো উপর হজ ফরজ কারো উপর ফরজ নয়। খাস বান্দারা যায় যিয়ারতে বায়তুল্লাহ। আল্লাহর নৈকট্য অর্জনে যার আগ্রহ যত বেশি তার অনুভূতিও সে রকমই হয়ে থাকে।
আল্লাহকে ভয় করলে আল্লাহর প্রতি ভালোবাসার নজিরই হয় আলাদা। আল্লাহ ওয়ালাদের খাওয়া দাওয়া বন্ধ হয়ে যায়। এসব শুধু হয় আল্লাহর সঙ্গে মুহাব্বত থাকার কারণেই।
মুরব্বিদের কাছে শুনেছি আল্লাহর দুইটা অফিস আছে। একটা সময়ভিত্তিক অফিস, যেমন আজানের সময় দোয়া করলে দোয়া কবুল হয়।
আরেকটা স্থান ভিত্তিক অফিস। বায়তুল্লাহসহ ১৫/১৬টা জায়গা আছে যেখানে বান্দা আল্লাহকে পাবে। যার ঈমান যত মজবুত তার ঈমান যত বেশি। সে আল্লাহকে তত সহজে পাবে।
সে যখন আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক’ বলে তখন আল্লাহও তার ডাকে সাড়া দেয়। খুশি হয়। তার গুনাহ ক্ষমা করেন।
হাতিমে কাবা, মিজাবে রহমত, হাজরে আসওয়াদসহ মুসলমানকে কষ্ট না দিয়ে মুলতাজেম, রুকনে ইমানে, জমজমের কুপের, মুজদালিফা মিনা, অনেক জায়গা আছে এগুলোতে দোয়া করলে আল্লাহ তায়ালা সঙ্গে সঙ্গে দোয়া কুবল করেন।
তবে শর্ত হলো অনুভূতি থাকতে হবে। ভালোবাসার সম্পর্কের গভিরতা জাগ্রত হতে হবে। তাহলেই আল্লাহকে পাওয়া সহজ হবে।
তবে বর্তমানে আধুনিকতার কারণে শরিয়ত গর্হিত কাজ দেখা যায় বায়তুল্লাহয়। বড় বিষয় হলো বর্তমান মিডিয়া চিত্র সংরক্ষণ করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে মানুষ। এটা নিষিদ্ধ করা প্রয়োজন। তাহলে মানুষ গুনাহ ছাড়া হজ আদায় করতে সক্ষম হবে।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে বায়তুল্লাহ যিয়ারতের তাওফিক দান করুন। আমিন।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন