জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ক্রমশ উত্তপ্ত হচ্ছে পৃথিবী। সেই উত্তাপ থেকে ঠান্ডা থাকার লড়াইয়ে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে আছে যেসব দেশ তার মধ্যে অন্যতম বাংলাদেশ। এসি ব্যবহার করে অথবা রিফ্রিজার ব্যবহার করে মানুষ কৃত্রিম উপায়ে ঠান্ডা থাকার চেষ্টা করছে। অসলো থেকে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে সোমবার।
এতে বলা হয়েছে, ক্রমাগত বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর হাত থেকে এয়ার কন্ডিশনিং, রিফ্রিজারেশনের মাধ্যমে মানুষ একটা ঠান্ডা থাকা ও খাদ্য, ওষুধ সংরক্ষণের অভাবে বড় ঝুঁকিতে রয়েছে। গবেষণায় দেখানো হয়েছে, এমন ঝুঁকিতে রয়েছে বিশ্বের একশত কোটিরও বেশি মানুষ।
যদি জীবাশ্ম জ্বালানির পরিবর্তে মানুষ জাতি ক্লিনার এনার্জি বা পরিচ্ছন্ন জ্বালানি ব্যবহার না করে বিদ্যুত উৎপাদনের জন্য তাহলে ফ্রিজন ফ্যান ও অন্যান্য বিদ্যুতচালিত যন্ত্রাংশ পরিচালিত করতে অধিক পরিমাণ বিদ্যুতের চাহিদা বাড়বে। এতে মনুষ্যসৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে এর পরিণতি যোগ হবে। অলাভজনক গ্রুপ সাসটেইনেবল এনার্জি ফর অল তাদের গবেষণা প্রতিবেদনে এসব কথা বলেছে। এতে বলা হয়, ১১০ কোটি মানুষের বসবাস এশিয়া, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকায়। এর মধ্যে ৪৭ কোটি মানুষের বসবাস গ্রামে। ৬৩ কোটির বসবাস শহরের বস্তিগুলোতে। বিশ্বের মোট ৭৬০ কোটি মানুষে মধ্যে এই বিপুল সংখ্যক মানুষ এমন ঝুঁকিতে রয়েছে। সাসটেইনেবল এনার্জি ফর অল-এর প্রধান এবং জাতিসংঘ মহাসচিবের সাসটেইনেবল এনার্জি ফর অল বিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি র্যাচেল কাইট বলেছেন, কুলিং বা ঠান্ডা হওয়ার বিষয়টি অধিক থেকে অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। গবেষণাটি করা হয় ৫২ টি দেশের ওপর। এর মধ্যে এক্ষেত্রে সবচেয়ে ঝুঁকিতে আছে যেসব দেশ তা হলো বাংলাদেশ, ভারত, চীন, মোজাম্বিক, সুদান, নাইজেরিয়া, ব্রাজিল, পাকিস্তান ও ইন্দোনেশিয়া। র্যাচেল কাইট বলেন, অত্যাধিক কার্যকর উপায়ে আমাদেরকে ঠান্ডা হওয়ার বিবেচনা করতে হবে।
ক্রান্তিয় দেঘগুলোতে মধ্যবিত্তের কাছে কার্যকর, কম দামী এয়ার কন্ডিশনার বিক্রির জন্য ব্যবস্থা নিতে পারে উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলো। তাতে তারা বড় একটি বাজার সৃষ্টি করতে পারে। অথবা এক্ষেত্রে একটি সহজ সমাধান হতে পারে যে, বাসাবাড়ির ছাদকে সাদা রঙে পেইন্ট করা যেতে পারে, যাতে সূর্য্যরশ্মি প্রতিফলিত হয়ে চলে যায় এবং তাপমাত্রা ঘরের ভিতরে আটকে না পড়ে। এ পদ্ধতিও সহায়তা করতে পারে। ২০৩০ থেকে ২০৫০ সালের মধ্যে জলবায়ুর পরিবর্তনের সঙ্গে সম্পর্কিত গরম থেকে বছরে ৩৮০০০ মানুষ মারা যেতে পারে বলে সতর্ক করেছে জাতিসংঘের স্বাস্থ্য বিষয়ক এজেন্সি। এই মে মাসে তাপদাহে পাকিস্তানের করাচিতে ৬০ জহনের বেশি মানুষ মারা গেছেন। ওই সময় সেখানে তাপমাত্রা উঠে যায় ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে। গ্রীষ্মমন্ডলীয় দেশগুলোতে বহু মানুষের কাছে বিদ্যুত নেই। ক্লিনিকগুলো টিকা ও জরুরি ওষুধ ফ্রিজে ঠান্ডায় রাখতে পারে না। অনেক ওষুধ ঠান্ডায় রাখার বাধ্যবাধকতা আছে। আবার শহরের বস্তিগুলোতে বিদ্যুতের সরবরাহ এই যায় এই আসে অবস্থা। বিদ্যুতের ঘাটতিতে বহু কৃষক ও জেলে একই সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন তারা তাদের পণ্য বা মাছ শীতলীকরণ ব্যবস্থায় সংরক্ষণ করে বাজারে সরবরাহ করতে পারেন না। স্বাভাবিক তাপমাত্রা যদি ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকে তাহলে এই তাপমাত্রায় টাটকা মাছ কয়েক ঘন্টা পর্যন্ত ভাল থাকে। অথবা ঠান্ডায় রাখলে তা অনেক দিন পর্যন্ত বাল থাকে।
গত সপ্তাহে বৃটেনের ইউনিভার্সিটি অব বার্মিংহাম এক গবেষণায় বলেছে, ২০৫০ সাল নাগাদ কুলিং এপ্লায়েন্সেস বা শীতলীকরণ যন্ত্রপাতির চাহিদা চারগুন বৃদ্ধি পেতে পারে। তা ব্যবহার করতে পারবে বিশ্বের ১৪০০ কোটি মানুষ।
শীর্ষ নিউজ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন