'ভোর ৫/৬টায় গাড়ির স্টিয়ারিংয়ে বসি, নামি রাত ১২টায়। সকালের নাস্তা, দুপুরের খাবার সবই হয় গাড়িতে বসে। নামি মাঝে মধ্যে। টানা গাড়ি চালালে প্রেসার পড়ে। যানজট, গরম, যাত্রীর চিল্লাপাল্লা সব মিলে মাথা ঠিক থাকে না।'
গাজীপুর-টঙ্গী থেকে সদরঘাট রুটে চলাচলকারী সুপ্রভাত স্পেশাল সার্ভিসের একটি বাসের চালকের আসনে বসা মো. রাসেল এভাবেই জানালেন দিনের ব্যস্ততা ও নিত্যদিনের কার্যসূচি।
কথা বলতে বলতে ব্রেকে চাপ দিলেন রাসেল। পড়ন্ত বিকালের কড়া রোদ ডান দিক থেকে প্রচণ্ড তাপের পুরোটাই রাসেলের মুখের উপর পড়ছে। এরই মাঝে পকেটের ফোন বেজে উঠলো তার। এক কর্মদিবসে গুলিস্তান-বংশালের যানজটে পড়ে ব্রেক চেপেই কথা বলছিলেন রাসেল।
আলাপচারিতায় বোঝা গেলো পরিবারের কারও সঙ্গে কথা বলছিলেন তিনি। বলছিলেন, আমার আসতে রাইত ১২টার বেশি বাজবো।
গাড়ি তখনও ছাড়েনি; রাসেল বলছিলেন, আমাদের খবর কে রাখে। ভোর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত গাড়ি চালাই, গাড়িতেই কাটে দিনের বেশির ভাগ সময়, চালালে টাকা নইলে না।
শুধু শেখ হাসিনা খবর রাখেন বলেই ৫ ঘণ্টার কথা বলেছেন। দূরের যাত্রায় হলেও সেটা সবার জন্য প্রযোজ্য হওয়া উচিত।
সড়ক দুর্ঘটনা রোধে চালক ও যাত্রীদের নির্দেশনা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানিয়েছেন, কোনোভাবেই যেন কোন চালক দূরপাল্লায় পাঁচ ঘণ্টার বেশি গাড়ি না চালান। পাশাপাশি চালকদের প্রশিক্ষণ ও দীর্ঘ চলাচলে বিশ্রামের ব্যবস্থা করতে হবে।
গত ২৫ জুন সচিবালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে এসব নির্দেশনা দিয়ে চালক ও যাত্রীদের বেল্ট ব্যবহার করারও নির্দেশনা দেন তিনি।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং নৌ পরিবহন মন্ত্রীকে এসব বিষয় তদারকির দায়িত্ব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা পেয়ে খুশি সুপ্রভাত (ঢাকা মেট্রো-জ ১১-২৫১৬) চালক রাসেল। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়নে জোর দিয়ে তিনি বলেন, মালিকেরা কখনও চাইবেন না পাঁচ ঘণ্টা। ঢাকা শহরের যে জ্যাম তাতে রাস্তায় জীবন টেকা দায়। রাস্তায় ঝক্কি-ঝামেলা বেশি, বেশি সময় গাড়ি চালালে অ্যাকসিডেন্ট হয় বেশি।
বরগুনা শহরের বাসিন্দা রাসেল প্রায় ১০ বছর ধরে ঢাকায় থাকেন। ঢাকার বাড্ডায় থাকেন পরিবার নিয়ে। ত্রিশ বছর বয়সী রাসেলের দুই সন্তান, বড় ছেলে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে। ছোট মেয়ে এখনও স্কুলে যাওয়া শুরু করেনি। পরিবারে স্ত্রী ছাড়াও আছেন বাবা-মা।
ছয়জনের সংসারের ব্যয়ের হিসাব রাসেলকেই করতে হয়। গাড়ি চালিয়ে দিনে আয় হয় প্রায় এক হাজার টাকা, মাসে ত্রিশ হাজার। এক দিন বাদ পড়লে সেই ত্রিশ হাজারের হিসেবে টান পড়ে। দিন চুক্তিতে গাড়ি চালান রাসেলেরা, এক দিন বাদ পড়া তো আয়ে ঘাটতি।
'ছুটি নাই, বোনাস নাই; এভাবে দিন চুক্তিতে চলে আমাদের জীবন, দেখার কেউ নাই', প্রধানমন্ত্রীকে আপনাকে ধন্যবাদ।’
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন