‘যে রাঁধে, সে চুলও বাঁধে’—প্রবাদের একটা জুতসই উদাহরণ হতে পারেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্রী ফারজানা শিরিন। রান্নার প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে সেরা পাঁচে ছিলেন। আবার পড়ালেখায় তাঁর দখল এত ভালো যে বৃত্তি পাওয়াটা মোটামুটি অভ্যাসে পরিণত করে ফেলেছেন। আক্ষরিক অর্থে চুল না বাঁধলেও, এখন গাট্টি-বোঁচকা বাঁধছেন শিরিন। যেতে হবে অনেক দূরে! কৃষি অর্থনীতি নিয়ে গবেষণা করার স্বপ্ন তাঁর। স্বপ্ন পূরণ করতে শিগগিরই রওনা হবেন যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ইলিনয়—আরবানা শ্যাম্পেনের পথে।
গল্পটা বরং একটু পেছন থেকে শুরু করি।
‘ম্যাপল লিফ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল থেকে ২০১০ সালে ও লেভেল এবং ২০১২ সালে এ লেভেল দিয়েছি। ও লেভেলে ভালো ফলাফলের জন্য পেয়েছি ডেইলি স্টার অ্যাওয়ার্ড। সেই বৃত্তি দিয়ে এ লেভেল শেষ করেছি’, বলছিলেন শিরিন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘ঘ’ ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে অর্জন করলেন ৫৭তম স্থান। পেয়ে গেলেন পছন্দসই বিষয়, অর্থনীতি।
স্নাতকের দ্বিতীয় বর্ষে সাউথ এশিয়ান ইকোনমিকস স্টুডেন্টস মিট (সেইজেম) সম্মেলনে অংশগ্রহণের সুযোগ এল। ২০১৪ সালে সাত দিনের সেই সম্মেলনে যোগ দিতে তিনি গিয়েছিলেন ভুটানে। ‘ডেইলি স্টার-রুপচাঁদা অ্যামেচার শেফ’ নামে রান্নার প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেন সে বছরই। রান্না করতে ভালোবাসেন। ভালোবাসার জোরেই শীর্ষ পাঁচে স্থান করে নিয়েছিলেন তিনি। দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষায় ভালো ফলাফলের জন্য পরের বছর পেলেন ‘বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নরস স্কলারশিপ’। বৃত্তির ৪০ হাজার টাকা তাঁর উৎসাহ বাড়িয়ে দেয় আরও।
স্নাতকোত্তরে ভর্তির সময়ই মূলত ইউনিভার্সিটি অব ইলিনয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিলেন। কিন্তু ভালো ছাত্রী শিরিন জানতেন, এক লাফে স্বপ্ন পূরণ হয় না। স্বপ্নের সিঁড়ি বেয়ে ধাপে ধাপে এগোতে হয়। অতএব প্রথম ধাপ হিসাবে শিরিন খোঁজখবর নেওয়া শুরু করলেন। কোন কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করা যায়, কী কী যোগ্যতা লাগে...ইত্যাদি। প্রস্তুতি নিয়ে টোয়েফল আর জিআরই—দুটো পরীক্ষাই দিলেন। ফল বেশ ভালো হলো। এরপর ফারজানা শিরিন আবেদন করলেন আটটি বিশ্ববিদ্যালয়ে—ইউনিভার্সিটি অব ইলিনয়, ইউনিভার্সিটি অব ভার্জিনিয়া, ভার্জিনিয়া টেক, নর্থ ক্যারোলিনা স্টেট ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব ডেলাওয়্যার, ইউনিভার্সিটি অব অ্যারিজোনা, জর্জিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটি এবং ওয়াশিংটন স্টেট ইউনিভার্সিটি।
আবেদন করার প্রক্রিয়াটা সহজ নয়। অনলাইনে ভিনদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ফরম পূরণ করাও এক কঠিন পরীক্ষার মতো। নানা কাগজপত্র জমা দিতে হয়। অনেকগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ে একসঙ্গে আবেদন করেছিলেন বলে শিরিন প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য আলাদা আলাদা ফাইলে গুছিয়ে রেখেছেন। নয়তো সবগুলোর আবেদনের শেষ তারিখ নিয়ে হিমশিম খেতে হতো। স্নাতকোত্তর শেষ করার আগেই বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করা শুরু করেছিলেন তিনি। কেন? বললেন, ‘পড়াশোনায় বিরতি চলে এলে পরে আর পড়ার স্পৃহা থাকে না। তাই বিরতি দিতে চাইনি।’
আটটি বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করলেও, শিরিন এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বাছাই করেছিলেন খুব ভেবেচিন্তে। যেখানে তাঁর বৃত্তি পাওয়ার সুযোগ আছে, সেসব বিশ্ববিদ্যালয়েই তিনি কাগজপত্র জমা দিয়েছেন। তবে এই পুরো প্রক্রিয়ায় খরচ হয়েছে অনেকগুলো টাকা। জিআরই, টোয়েফল পরীক্ষা দেওয়ার খরচ তো আছেন, একেকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করতেও লাগে ৮০ থেকে ১০০ মার্কিন ডলার। অতএব আবেদন-প্রক্রিয়ার মধ্যেই শিরিনের খরচ হয়েছে প্রায় লাখখানেক টাকা। তিনি মনে করেন, যাঁদের বিদেশে পড়তে যাওয়ার ইচ্ছে আছে, আগে থেকেই টাকা সঞ্চয় শুরু করা উচিত।
আবেদন করার পর অপেক্ষার পালা। ভীষণ রোমাঞ্চ নিয়ে কেটেছে শিরিনের দিন-রাত। এরপর হঠাৎ একের পর এক ফল আসতে লাগল। বিস্ময় নিয়ে আবিষ্কার করলেন, একে একে আটটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই ডাক পেয়েছেন তিনি; তাও পূর্ণবৃত্তিতে! কোনটা রেখে কোথায় যাবেন, সে এক মধুর সমস্যা। ভেবেচিন্তে অটল রইলেন স্বপ্নের ইলিনয়ে।
আটটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে চারটিতে তিনি আবেদন করেছিলেন পিএইচডির জন্য, আর বাকি চারটিতে স্নাতকোত্তরের জন্য। দেশের বাইরে এতগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পাওয়া কিন্তু স্রেফ ভাগ্যের ব্যাপার ভাবলে ভুল হবে। সাধ্য আর সামর্থ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে পরিকল্পনা সাজিয়েছিলেন বলেই ফারজানা শিরিন স্বপ্ন পূরণের পথ খুঁজে পেয়েছেন।
শিরিন মনে করেন, স্বপ্নের সিঁড়ি বেয়ে তাঁর পথচলা কেবল শুরু। যুক্তরাষ্ট্রে পড়ালেখা শেষ করে দেশে ফিরবেন। দেশের কৃষি খাত নিয়ে কাজ করবেন। এখন আবারও নতুন করে পরিকল্পনা সাজানোর পালা।
পাঠক মন্তব্য
Assalamualikum Dear Shirin I am very delighted to read the news about you.Contact me at kalamde@ gmail.com if I could be of any help for you in any respect, which I am doing for Bangladeshi students in UD(University of Delaware.Khorshed Alam.
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন