দেশের অর্থনীতি বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে টাকাওয়ালা শৌখিন মানুষের সংখ্যাও বাড়ছে। এসব মানুষ সবকিছুতেই একটু আভিজাত্যের ছোঁয়া লাগাতে চান। আসছে কোরবানি ঈদের পশু নির্বাচনের ক্ষেত্রেও আভিজাত্যের এ প্রভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
ঈদুল আজহায় আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য পশু কোরবানি করেন মুসলমানরা। এজন্য সুস্থ-সবল পশু বেছে নেয়া হয়। ধর্মীয় বিধানে আছে, ‘আল্লাহর সন্তুষ্টি ও নৈকট্য অর্জনের জন্য কোরবানির পশু হতে হবে প্রিয়, পছন্দনীয় এবং সুস্থ-সবল।’
সুস্থ-সবলের পাশাপাশি কোরবানির জন্য পশুটি আর দশজনের চেয়ে আকর্ষণীয় এবং এলাকার অন্য সবার পশুর চেয়ে গড়নে ও উচ্চতায় বেশি হওয়ার প্রতি জোর দেন শৌখিন অনেক মানুষ। আগামী কোরবানি ঈদ এখনও ঢের বাকি; কিন্তু এরই মধ্যে শৌখিন ক্রেতারা চাহিদা অনুযায়ী কোরবানির পশু সংগ্রহ করতে শুরু করেছেন। এছাড়া শৌখিন ক্রেতাদের কথা মাথায় রেখে খামারিরাও আমদানি শুরু করেছেন উন্নত জাতের গরু। এমনই একটি খামার ‘সাদিক অ্যাগ্রো ফার্ম’।
রাজধানীর মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধে অবস্থিত খামারটির মালিক হাজী ইমরান হোসেন। নিজেদের উৎপাদিত প্রায় ৭০০ গুরুর পাশাপাশি আসন্ন কোরবানি উপলক্ষে সুদূর যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিশালদেহী ও সুদর্শন সাতটি গরু আমদানি করেছেন। সরাসরি কার্গো উড়োজাহাজে আকাশপথে এসব গরু আনা হয়েছে। উড়োজাহাজ ভাড়াসহ সাতটি গরু আমদানিতে খরচ হয়েছে প্রায় এক কোটি ৩০ লাখ টাকা।
রোববার সাদিক অ্যাগ্রো ফার্মে সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা যায়, লাল এবং লাল-কালোর সংমিশ্রণে আমদানি করা সাতটি গরু সত্যিই আকর্ষণীয়। প্রায় গোল মাথায় নেই শিং। বিশাল দুটি কান ঘাড় পর্যন্ত নেমে এসেছে। সাধারণ গরুর চেয়ে এগুলো লম্বায় যেমন তেমন উচ্চতায়ও বিশাল। শরীরে বেশ মাংস তবে ফোলা নয়।
ফার্মের ম্যানেজার মোহাম্মদ শরিফ বলেন, গত বছর কোরবানি উপলক্ষে তার মালিক ব্রাহ্ম জাতের একটি গরু যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস থেকে আমদানি করেছিলেন। ওই গরুটি ১৬ লাখ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। গরুটির ওজন ছিল এক হাজার ১৫৬ কেজি।
jagonews24
এবার একই জাতের সাতটি গরু প্রায় এক মাস আগে আমদানি করা হয়েছে। এতে উড়োজাহাজ ভাড়াসহ মোট খরচ পড়েছে প্রায় এক কোটি ৩০ লাখ টাকা। ইতোমধ্যে দুটির বিক্রি হয়েছে। দুটিকে সংকরায়নের (উন্নত জাত তৈরি) জন্য ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিকট বিক্রির প্রক্রিয়া চলছে। বাকি তিনটি বিক্রি করা হবে। এগুলোর ওজনও প্রায় এক হাজার ১০০ কেজির কাছাকাছি।
তিনি বলেন, সাতটির মধ্যে সবচেয়ে বড়টির ওজন এক হাজার ২০০ কেজি। উচ্চতা সাত ফুট আর লম্বায় প্রায় ১২ ফুট। ইতোমধ্যে এটি ২৯ লাখ টাকায় এক ব্যবসায়ী কিনে নিয়েছেন। এক হাজার ১০০ কেজি ওজনের অন্য একটি বিক্রি করা হয়েছে ২৫ লাখ টাকায়।
‘তবে ফার্মের নিয়ম অনুযায়ী, কোরবানি ঈদ পর্যান্ত এসব গরু তাদের ফার্মেই থাকবে। ঈদের তিনদিন আগে ক্রেতার বাসায় তারা গরুগুলো পৌঁছে দেবেন।’
‘আমদানি করা এসব গরু দেশী গরুর চেয়ে বেশ শক্তিশালী। প্রথমে যখন আনা হয়েছিল তখন দেখলেই মারার জন্য তেড়ে আসত। পরে ফার্মের লোকজন পরিচিত হয়ে গেলে আর তেড়ে আসে না’- যোগ করেন ফার্ম ম্যানেজার।
কোন ধরনের খাবার দেয়া হয়- জানতে চাইলে শরিফ বলেন, ‘দেশী গরু যে খাবার খায় সেই খাবারই দেয়া হচ্চে। তবে প্রথম দিকে খাবার নিয়ে একটু সমস্যা হতো। এখন কোনো সমস্যা হয় না। গরুগুলোর পরিচর্যায় সবসময় চার/পাঁচজন কর্মচারী নিয়োজিত থাকেন।’
যুক্তরাষ্ট্র থেকে গরু আমদানির বিষয়ে সাদিক অ্যাগ্রো ফার্মের মালিক হাজী ইমরান হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ‘বাংলাদেশে অনেক শৌখিন লোক আছেন যারা ভালো ও সুন্দর গরু কোরবানি দিতে চান। তাদের চাহিদা পূরণে এসব গরু আমদানি করা। বাংলাদেশেও এসব দামি গরুর চাহিদা দিনদিন বাড়ছে।’
গরু আনতে উড়োজাহাজ ভাড়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘গরুর দামের চেয়ে বিমান ভাড়াই বেশি। সাতটা গরুর জন্য ভাড়া দিতে হয়েছে ৭৫ লাখ টাকা।’
উন্নত জাতের এ গরু থেকে বাংলাদেশে নতুন জাতের গরু তৈরি সম্ভব বলেও মত দেন তিনি।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন