ঈদ উপলক্ষে লালমনিরহাট সদর উপজেলার মহেন্দ্রনগর ইউনিয়নে হতদরিদ্রদের জন্য বিশেষ ভিজিএফ চাল বিতরণের তালিকায় দুস্থদের পরিবর্তে সচ্ছলদের নাম ওঠানোর অভিযোগে ঈদের চার দিন পরও বরাদ্দ চালের পুরোটা বিতরণ করা সম্ভব হয়নি। অথচ ঈদের আগেই সেই চাল নিয়ে গরিব মানুষের ঈদ করার কথা ছিল।
তালিকার দুই হাজার ৩০৩ জনের মধ্যে গতকাল বুধবার বিকেল পর্যন্ত তালিকাভুক্ত ৬৩৫ জন চাল নিতে আসেনি। এই ৬৩৫ জনই সচ্ছল কিংবা প্রভাবশালী বলে অভিযোগ উঠেছে। তাদের মধ্যে লালমনিরহাট জেলা পরিষদের সদস্য ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি তাহমিদুল ইসলাম বিপ্লবও রয়েছেন। তিনি আবার একটি কলেজের শিক্ষকও।
ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সূত্রে জানা গেছে, ঈদ উপলক্ষে মহেন্দ্রনগর ইউনিয়নে পরিবারপ্রতি ভিজিএফের ১০ কেজি করে চাল বিতরণের লক্ষ্যে মোট দুই হাজার ৩০৩টি দুস্থ পরিবারের তালিকা করা হয়। তালিকায় স্থানীয় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সরবরাহ করা ৬৫০ জনের নাম ছাড়াও সংরক্ষিতসহ ১২ জন ইউপি সদস্যের প্রতিজন ৯০টি করে মোট এক হাজার ৮০ জন, ইউপি চেয়ারম্যান ৫৪০ জন এবং পরিষদের চৌকিদাররা ৩৩ জন দুস্থ নারী-পুরুষের নাম দেন। ফলে ওই দুই হাজার ৩০৩ জনের বিপরীতে প্রতিজন ১০ কেজি করে মোট ২৩ হাজার ৩০ কেজি চাল বরাদ্দ হয়। অনিয়মের অভিযোগ ওঠায় ইউএনও জয়শ্রী রানী রায় সেখানে উপস্থিত হয়ে চাল বিতরণ স্থগিত করেন। পরদিন সেখানে নিজেই উপস্থিত থেকে পুনরায় বিতরণ কার্যক্রম শুরু করেন তিনি। কিন্তু ওই দিন তালিকায় থাকা অনেকেই চাল নিতে না আসায় সেদিনও বিতরণ কার্যক্রম শেষ হয়নি। সর্বশেষ গতকাল বিকেল পর্যন্ত ইউএনও সেখানে উপস্থিত থাকলেও তালিকাভুক্ত ৬৩৫ জন অনুপস্থিত ছিল। শেষ পর্যন্ত সেই চাল ইউনিয়ন পরিষদের গুদামে সিলগালা করে সেখান থেকে চলে যান ইউএনও।
সূত্র জানায়, বিভিন্ন ওয়ার্ডের দলীয় নেতাকর্মীরা নিজ নিজ এলাকার দুস্থদের নামের তালিকা জমা দিয়েছিল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি-সম্পাদকের কাছে। পরে ওই দুজন ৬৫০ জনের তালিকা চূড়ান্ত করে ইউনিয়ন পরিষদে জমা দেন। তবে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা আতোয়ার হোসেনের সরবরাহ করা ১০ জনের নাম তালিকায় না উঠলেও পূর্ণাঙ্গ তালিকায় নাম উঠেছে খোদ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও লালমনিরহাট জেলা পরিষদের সদস্য, কলেজ শিক্ষক তাহমিদুল ইসলাম বিপ্লবের। বাদ যায়নি তাঁর স্ত্রী শিরিনা সুলতানার নামও।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে মহেন্দ্রনগর ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আতোয়ার হোসেন বলেন, যারা চাল নিতে আসেনি তারা সবাই বড়লোক।
তাহমিদুল ইসলাম বিপ্লব দাবি করেন, তাঁকে রাজনৈতিকভাবে হেয় করার জন্যই তালিকায় তাঁর নাম তুলে দিয়েছেন ইউনিয়ন পরিষদ তথ্য সেবা কেন্দ্রের উদ্যোক্তা রিপন সরকার।
তবে মহেন্দ্রনগর ইউনিয়ন তথ্য সেবা কেন্দ্রের উদ্যোক্তা রিপন সরকার বলেন, ‘আমি তালিকা করার কেউ না।’
মহেন্দ্রনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মশিউর রহমান বসুনীয়া এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দেওয়া ৬৫০ জনের মধ্যে দুস্থ আছে, না সচ্ছল আছে, তা তারাই ভালো বলতে পারবেন। আমরা তালিকা অনুয়ায়ী যাদের জাতীয় পরিচয়পত্র ও জন্ম সনদ পেয়েছি তাদের নাম চূড়ান্ত করেছি।’ ইউএনও জয়শ্রী রানী রায় বলেন, চেয়ারম্যানকে শোকজ করার পাশাপাশি অবিতরণকৃত চালের বিষয়ে পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন