মহাখালী ফ্লাইওভারে পথচারী সেলিম ব্যাপারীকে চাপা দেয়া সেই গাড়িটির মালিকানা নিশ্চিত হলেও গাড়িটি কে চালাচ্ছিল এখন পর্যন্ত তা নিশ্চিত হতে পারেনি পুলিশ। ওই পথচারীর মৃত্যুর পরপর জানা যায় গাড়িটি সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরীর স্ত্রীর। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুর্ঘটনার সময় গাড়িটি চালাচ্ছিলেন তাদের ছেলে শাবাব চৌধুরী। যদিও এমপির পরিবারের দাবি ঘটনার সময় শাবাব গাড়িতে ছিল না। গাড়িটি চালাচ্ছিল তাদেরই এক গাড়িচালক।
এদিকে নিহতের পরিবার জানিয়েছে, এমপির পরিবারের পক্ষ থেকে বারবার তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে।
গত মঙ্গলবার রাত ১০টায় সারা দিনের কর্মব্যস্ততার পর বাসায় ফিরছিলেন সেলিম ব্যাপারী (৫২)। এ সময় রাজধানীর মহাখালী ফ্লাইওভারের ওপর বেপরোয়া গতির একটি প্রাইভেটকার তাকে চাপা দিলে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।
নিহত সেলিম ব্যাপারীর বাড়ি বরিশালে। তিনি মহাখালী ডিওএইচএসে এক ব্যক্তির গাড়ি চালাতেন।
দুর্ঘটনার পর প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজনের বরাতে সেলিমকে চাপা দেওয়া গাড়িটির নম্বর (ঢাকা মেট্রো গ-১৩-৭৬৫৫) জানতে পারে পুলিশ। গাড়িটির মালিকানা নিশ্চিত হতে বিআরটিতে খোঁজ নেয়া হয়। পরে জানা যায়, গাড়িটির মালিক নোয়াখালীর কবিরহাট উপজেলার চেয়ারম্যান কামরুন নাহার শিউলী। তার স্বামী একরামুল করিম চৌধুরী নোয়াখালী-৪ আসনের ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, গাড়ির ধাক্কায় সেলিম ব্যাপারী রাস্তায় পড়ে গেলে তার গায়ের ওপর সামনের দুই চাকা ওঠে যায়, ওই অবস্থায় ব্যাক গিয়ারে গাড়ি ঘুরাতে গিয়ে সেলিমকে দ্বিতীয়বার রাস্তায় পিষে ফেলা হয়, এরপর গাড়িটি পালিয়ে যায়।
পুলিশের মিরপুর বিভাগের সহকারী কমিশনার মামুন মোস্তফা পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, বিআরটিএ'র রেজিস্ট্রেশন অনুযায়ী গাড়িটির মালিক কে সে বিষয়ে আমরা নিশ্চিত হতে পেরেছি। তবে দুর্ঘটনার সময় গাড়িটি কে চালাচ্ছিল সেটি এখন পর্যন্ত জানা যায়নি। ওই ঘটনায় মামলা হয়েছে। মামলার তদন্তও চলছে, গাড়ি চালক কে ছিল সেটি জানার পরই আমরা তাকে গ্রেফতারে অভিযান চালাবো।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কাফরুল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সুজন চন্দ্র কর্মকার পরিবর্তন ডটকমকে জানান, মঙ্গলবার রাতেই ওই ঘটনায় থানায় একটি মামলা করা হয়। কিন্তু এখনো কাউকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি, চালকের সন্ধান চলছে।
মামলার বাদী নিহত সেলিমের মেয়ের জামাই আরিফ ভূঁইয়া বলেন, মামলা করার পর বিভিন্ন মাধ্যমে আমরা জানতে পেরেছি গাড়িটি নোয়াখালী-৪ আসনের সংসদ সদস্য মোহাম্মদ একরামুল করিম চৌধুরীর স্ত্রীর। আর আমার শ্বশুরকে চাপা দেয়ার সময় গাড়িটি এমপির ছেলে শাবাব চৌধুরী চালাচ্ছিল।
সেলিমের পারিবারিক সূত্র জানায়, এমপি একরামুল করিমের পরিবারের পক্ষ থেকে সমঝোতার জন্য নিহত সেলিম ব্যাপারীর পরিবারের সঙ্গে বারবার যোগাযোগ করা হচ্ছে। নিহতের পরিবারকে এ বিষয়ে অভিযোগ করতে নিষেধ করা হয়েছে।
শামীম আশরাফী নামে এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, দুর্ঘটনার পর তিনিসহ আরো কয়েকজন ঘাতক গাড়িটিকে অনুসরণ করেন। তারা দেখতে পান গাড়িটি মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ের ন্যাম ভবনের ভেতরে ঢোকে।
তিনি আরো জানান, ন্যাম ভবনের ভেতরে ঢোকার পরই গাড়ি থেকে এক তরুণ নেমে বলে, এটা আমার এলাকা, ‘কে কে আসবি আয়। এ সময় ওই তরুণের সঙ্গে তাদের কথাকাটাকাটি হয়। তখন আশপাশের লোকজন ছুটে আসে এবং তরুণটিকে শাবাব নাম ধরে ডাকতে থাকে।
যদিও এমপি একরামুল কবির চৌধুরীর দাবি ঘটনার সময় তার ছেলে গাড়িতে ছিলেন না।
এমপি একরাম বলেন, গাড়িটি আমাদেরই। তবে আমার ছেলে দুর্ঘটনার সময় গাড়িটি চালাচ্ছিল না। আমাদের পাঁচজন গাড়িচালক আছেন। তাদের মধ্যে কেউ একজন গাড়িটি চালাচ্ছিল। আমি এখন নোয়াখালীতে অবস্থান করছি, তাই বলতে পারছি না গাড়িটি কে চালাচ্ছিল।
একরাম চৌধুরীর স্ত্রী কামরুন নাহার শিউলী বলেন, দুর্ঘটনার সময় শাবাব বাসাতেই ছিল। গাড়িটি চালাচ্ছিল নুরুল আলম নামে আমাদেরই এক গাড়িচালক। উত্তরায় এক বান্ধবীর কাছে একটি পার্সেল পাঠিয়েছিলাম, সেটা নিয়ে যাচ্ছিল নুরুল আলম। তবে তাকে এখন খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন