তারা ১১ জন। কারো বয়স ১৫ বছর, কারো ১৬, কারো ১৭, কারো ১৮। বয়সের এ অল্প ব্যবধান প্রভাব পড়েনি তাদের বন্ধুত্বে। এ বন্ধুত্ব আড্ডা দেওয়ার। সেই আড্ডা থেকে সুযোগ পেলে পথচারীদের থেকে হাতিয়ে নিত টাকা ও মোবাইল। কিন্তু কখনো খুন করেনি, তবে ছুরি নিয়ে ভয় দেখাতো। ভয় দেখাতে গিয়েই গত রোববার (১৭ জুন) রাতে খুন করে বসে তারা।
বুধবার (২০ জুন) এমন একটি গ্রুপের ১০ জনকে গ্রেফতার করেছে নগর গোয়েন্দা পুলিশ। গ্রেফতার ১০ জন হলেন, মো. আল আমিন (১৬), মো. ফজলে রাব্বি (১৬), মো, আরমান (১৮), মো. মোস্তফা রবিন (১৮), মো. ফাহিম (১৮), মো. রাহাত মোমেন (১৫), মো. জনি (১৫), মো. কামরুল হাসান (১৬), মো. ফয়সাল (১৭) এবং মো. মিজান (১৭)। তারা সকলেই হালিশহরের বিভিন্ন এলাকায় থাকেন।
নগরের হালিশহর আর্টিলারি রোডে ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে মোহাম্মদ সুমন (১৭) নামে এক কিশোর নিহতের ঘটনায় হালিশহরের বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় ছিনতাই হওয়া ২টি মোবাইল ও রক্তমাখা ছুরি।
নগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার এএএম হুমায়ুন কবির, পুলিশ পরিদর্শক আফতাব হোসেন, উপ পুলিশ পরিদর্শক শিবেন বিশ্বাস ও সঞ্জয় গুহের নেতৃত্বে একটি টিম নিহত সুমনের ছিনতাই হওয়া মোবাইল ফোনের সূত্র ধরে তাদের গ্রেফতারে সক্ষম হন।
প্রথমে মো. কামরুল হাসানকে হালিশহর আই ব্লক থেকে কৌশলে গ্রেফতার করে গোয়েন্দা পুলিশ। পরে তার দেওয়া তথ্যে বাকি নয়জনকে তাদের প্রত্যেকের বাসা থেকে গ্রেফতার করে।
অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার এএএম হুমায়ুন কবির বাংলানিউজকে বলেন, গ্রেফতার ১০ জন কোনো পেশাদার ছিনতাইকারী নয় তবে তারা সুযোগ পেলেই ভয় দেখিয়ে মানুষের মোবাইল, টাকা হাতিয়ে নেয়। কারো কাছ থেকে ১০০ বা কারো কাছ থেকে ২০০ বা কারো কাছ থেকে মোবাইল নিয়ে ফেলে তবে তা মানুষ বুঝে করে। হালিশহর এলাকার বা পরিচিত
কেউ হলে এ কাজ করে না।
এএএম হুমায়ুন কবির বলেন, রোববার (১৭ জুন) রাতে হালিশহর আর্টিলারি ব্রিজে তারা মোট ১১ জন আড্ডা দিচ্ছিল। নিহত সুমন ও তার দুই বন্ধু নুরুল আলম (১৭) এবং পারভেজ মোহাম্মদ প্রান্ত (১৫) বিজিবি সিনেমা হল থেকে সিনেমা দেখে ফিরছিল। আর্টিলারি ব্রিজের পশ্চিম পাশে পৌঁছালে ১১ জন মিলে ঘিরে ধরে সুমন ও তার বন্ধুদের। পরে রাস্তার একপাশে নিয়ে ছুরি দিয়ে ভয় দেখিয়ে মোবাইল ও টাকা হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে ধস্তাধস্তি হয় এবং তিনজনকে ছুরিকাঘাত করে মোবাইল নিয়ে পালিয়ে যায় ১১ জন। হাসপাতালে মৃত্যু হয় সুমনের।
নিহত সুমন বন্দর থানার আজিজপাড়া এলাকার হেদায়েত উল্লাহর ছেলে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
এএএম হুমায়ুন কবির বলেন, গ্রেফতার ১০ জনের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী তারা সবাই খুবই দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের পরিবারের সন্তান। তাদের কারো কারো বাবা নেই আবার কারো কারো নেই মা। মূলত তাদের শাসন করার বা দেখভাল করার মতো কেউ নেই। তারা কেউ স্কুল বা কলেজে পড়ে না বরং একপ্রকার বেঁকে যাওয়া সন্তান তারা।
এই গ্রুপে ১১ জনের মধ্যে বাকি একজনকে গ্রেফতারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানান এএএম হুমায়ুন কবির। তবে সেই একজনের নাম প্রকাশ করেননি এ পুলিশ কর্মকর্তা।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন