ঢাকার ধামরাই উপজেলায় রাস্তার উন্নয়নের জন্য ৯শ’ কোটি টাকা বরাদ্দ এসেছিলো এবং সেই অনুযায়ী কাজও করা হয়েছে। তবে এমনই কাজ করা হয়েছে যে, পথচারীদের চলাচলে দূর্ভোগ চরমে উঠেছে এবং রাস্তার নাম শুনলেই সবার মাঝে বিরাজ করছে আতংক!
উপজেলার ১৬টি ইউনিয়ন এবং ১টি পৌরসভা মিলিয়ে মোট ১৭ টী ইউনিটের জন্য ৯০০ কোটি টাকার বরাদ্দকে যদি সমানভাবে ভাগ করে দেয়া যায়, তবে প্রতিটি এলাকার জন্য প্রায় ৫৩ কোটি টাকার উন্নয়নমূলক কাজ হবার কথা। সেই অনুযায়ী হয়েছে কিনা এই প্রশ্ন উপজেলার পৌরসভা সহ প্রতিটি ইউনিয়নবাসীর মুখে মুখে।
এলাকার ধানতারা টু ধামরাই রাস্তার অবস্থা এমন যে, বিপদ সংকেত চিহ্ন দেয়া হয়েছে লাল নিশানা! টানা বৃষ্টিতে এ সড়কের অধিকাংশ জায়গায় সৃষ্টি হয়েছে খানা-খন্দে। কোথাও কোথাও এতই বেহাল দশা যে ঠিক মতো গাড়িই চলতে পারে না। চরম দুর্ভোগে আছেন এই ইউনিয়নের হাজার হাজার মানুষ। বর্ষা মৌসুম শুরুর হওয়ার পর থেকেই ধামরাইয়ে নিয়মিত বৃষ্টি হচ্ছে। আর এই টানা বর্ষণে অপেক্ষাকৃত ভালো রাস্তাগুলোও নষ্ট হয়ে গেছে। ছোট-বড় অসংখ্য গর্ত তৈরি হয়েছে সেখানেও।
এসব রাস্তা যান চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ভাঙা রাস্তা দিয়ে ভারী যানবাহন চলায় খানাখন্দ আরও বাড়ছে। স্থানীয় এলাকাবাসীরা জানান, ‘প্রায় সব রাস্তাই খারাপ। এসব রাস্তা দিয়ে রিকশা দিয়ে যাওয়া-আসা করতে আমাদের মতো বয়স্ক মানুষের বেশি সমস্যায় পড়তে হয়। দিনে হোঁচট খেতে হয় আর রাতে পড়তে হয় গর্তে- এমনই অবস্থা। নিয়মিত সংস্কার না করায় রাস্তাগুলোর এমন অবস্থা হয়েছে। বর্ষার আগেই সংস্কার হলে এমন দুর্ভোগ পোহাতে হতো না আমাদেরকে।’
ধানতারা এলাকার ৯টি রাস্তা সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, উপজেলার অন্য ইউনিয়নগুলোর রাস্তাগুলোর থেকে এখানের রাস্তা সবচেয়ে খারাপ। এসব রাস্তায় ছোট-বড় অসংখ্য গর্ত। পিচ উঠে পাথর ও ইট বেরিয়ে এসেছে, সেখানে ভয়ংকর পুকুরের মতো গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। টানা বৃষ্টিতে রাস্তাটিতে জলকাদা জমে যান চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এখন এ রাস্তা দিয়ে যান চলাচল তো দূরের কথা, লোকজনই ঠিকমতো হাঁটতে পারেন না।
ধামরাই পৌর এলাকার ছয়বাড়িয়ার রাস্তায় প্রবেশ করলে একই চিত্র দেখা যাবে। ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের বাইপাশ রোডের এই রাস্তার বেহাল দশায় চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন পৌরবাসীসহ আশপাশের ইউনিয়নের জনগণও। অবস্থা এখন এমন যে, এ রাস্তার নাম শোনামাত্রই রিক্সাওয়ালা থেকে শুরু করে যাতায়াতরত অনেক রোগী অজ্ঞান হয়ে যান! তূলনামূলকভাবে এ রাস্তার ভাড়াও বেশী। ভাড়া যেখানে ১০/১৫ টাকা সেখানে৩০/৪০ টাকা গুনতে হচ্ছে কেবল রাস্তার এই বেহাল দশার জন্যই। ফলে এ এলাকার জনগনের ভোগান্তির অন্ত নেই।
স্থানীয় এক বৃদ্ধ জানান, ‘জন্মলগ্ন থেকেই এ রাস্তাটিতে যাতায়াতরত মানুষ ভোগান্তি পোহাচ্ছে, এটা যে কবে শেষ হবে তার কোন দিক নাই। যেখানে সারা দেশে উন্নয়ন হচ্ছে আর আমরা তেজপাতা খাচ্চি। সরকারের কাছে দাবি আমাদের এ রাস্তাটি যেন সংস্কার করা হয়। আমরা খুব কঠিন অবস্থায় বসবাস করছি।’
অন্যদিকে, ধামরাইয়ের গাঙ্গুটিয়া ইউনিয়নের হাতকোড়ায় মরহুম আব্দুল হামিদ সড়ক নামে পরিচিত সড়কটির ব্যাপারে অভিযোগ উঠেছে যে, পর পর চার বার কাজ আসলেও গুরুত্বপূর্ণ এই রাস্তার কাজটি রহস্যজনকই ভাবেই কেন জানি করা হচ্ছে না।
তবে যেসব রাস্তায় বর্তমানে সংস্কার কাজ হচ্ছে, সেখানেও নামেমাত্র প্রলেপ দিয়ে লোকদেখানো কাজ করা হচ্ছে। উপজেলার কালামপুরে অবস্থিত ভালুম আতাউর রহমান খান স্কুল অ্যান্ড কলেজ গেটে এমন কাজ পরিলক্ষিত হয়েছে। এ যেন হচ্ছে শাক দিয়ে মাছ ঢাকার মতো। নষ্ট ইট আর মাটি মিশ্রিত বালু দিয়ে যে কাজ করা হচ্ছে, এতে কোন লাভ হবে না বলে মনে করছেন এলাকাবাসী। তারা জানালেন, এখন বর্ষাকাল, আর বালু এবং নষ্ট ইট দিয়ে সংস্কারকৃত সড়ক কীভাবে টিকবে?
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন