টেকনাফ উখিয়ার ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের এমপি আব্দুর রহমান বদিকে নিয়ে সংবাদমাধ্যমে একের পর এক শিরোনাম হচ্ছে। মরণনেশা ইয়াবার সঙ্গে তার নাম আষ্টেপিষ্টে জড়িয়ে আছে। তবে এসব সংবাদ পরোয়া করেন না আব্দুর রহমান বদি। একটু বিচলিতও নন তিনি।
এমনকি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গত কয়েক দিনের ট্রল, পোস্ট কোনো কিছুকে পাত্তা দিচ্ছেন না আলোচিত এই এমপি। উল্টো দাবি করছেন, মাদক কারবারিরা গাটের টাকা খরচ করে তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছেন। এটি করে নিজেদের আড়াল করছেন।
অন্য অনেকের মতো কানাডার টরন্টো থেকে গোলাম কবির নিজের ফেসবুক ওয়ালে লিখেছেন, ‘যারা মাদক ব্যবসার মূল হোতা তারা সবার সামনে ঘুরছে। তখন পুলিশ ও সরকার নীরবতা প্রকাশ করছে। উদাহরণ: ইয়াবা সম্রাট বদি। সংসদ সদস্য, কক্সবাজার-৪। মাদক নিয়ন্ত্রণে শেখ হাসিনার প্রচেষ্টাকে জোর সমর্থন জানাই। কিন্তু, সবকিছু আইন মোতাবেক হোক, নিরীহ কোনো মানুষকে যেন হত্যা করা না হয়।’
বিগত কয়েক দিনে নেটিজেনরা এভাবে যেমন বদিকে ‘ইয়াবার গডফাদার’ আখ্যায়িত করে গ্রেফতার ও শাস্তি দাবি করছেন। তেমনি, অনেকেই চলমান মাদকবিরোধী অভিযানে যেমনটি হচ্ছে, এমন চূড়ান্ত পরিণতির কথাও বলছেন।
নেত্রকোনার আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত করুণ দিলাল মিয়া তার ফেসবুকে লিখেছেন, ‘একটা বদিকে ক্রসফায়ার দিলে আওয়ামী লীগের কোনো ক্ষতি হবে না বরং ভাবমূর্তি উজ্জল হবে। বদিকে ক্রসফায়ারে দেয়া হোক।’
তবে আব্দুর রহমান বদি মনে করেন, উখিয়া টেকনাফের মানুষ এসবের সঙ্গে যুক্ত নন। যেহেতু নিজ এলাকার মানুষ তাকে ইয়াবা ব্যবসায়ী হিসেবে বিশ্বাস করেন না। তাই মিডিয়া বা ফেসবুকে কে কি লিখলো না লিখলো তা নিয়ে চিন্তিত নন এই আইন প্রণেতা।
সোশ্যাল মিডিয়ার ট্রল বিষয়ে জানতে চাইলে আব্দুর রহমান বদি পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, ‘আমার অনুভূতি আছে। আমাকে উখিয়া টেকনাফের মানুষ ভোট দিয়ে এমপি বানাইছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় যা হচ্ছে, তা উখিয়া টেকনাফের মানুষ বিশ্বাস করে কিনা? যারা আমাকে বিশ্বাস করে সংসদে পাঠিয়েছেন, যাদের আস্তা নিয়ে আমি মহান সংসদে গেছি, তারা যদি আমার ওপর আস্থাহীন হতেন, তাহলে আমার দুঃখ লাগতো। তাদের বাইরে মিডিয়ায় কী বলে, কী লেখে, কী দেখানো হয়, তা নিয়ে আমার কোনো মাথা ব্যথা নেই। কোনো দিন এ নিয়ে মাথা ঘামাইওনি। ভবিষ্যতেও ঘামাতে চাই না। মিডিয়ার কাজই হলো লেখা।’
তিনি বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এখন আমাকে ক্রসফায়ারে দেয়াসহ যে কথাগুলো আসছে, মূলত একটি চক্র ইয়াবা ব্যবসায়ী ও সিন্ডিকেটের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা নিয়ে এসব করছে। তাদের মূল উদ্দেশ্য প্রশাসন এমপি বদির দিকে ধাবিত হলে নিজেরা দৃষ্টির বাইরে থাকতে পারবেন।’
আওয়ামী লীগের এই এমপি বলেন, ‘আমি এসব অপতৎপরতার বিরুদ্ধে আগে মামলা করেছি। দেশের প্রথমসারির দৈনিক পত্রিকাগুলোর বিরুদ্ধেও মামলা করেছি। ভবিষ্যতেও হয়তো পদক্ষেপ নিতে হবে।’
তবে তিনি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে বলেন, ‘আমি চ্যালেঞ্জ করে বলছি- ইয়াবা সম্পৃক্ততা নিয়ে কারও কাছে কোনো প্রমাণ থাকলে আমাকে তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে নিয়ে যেতে পারেন।’
আরেক প্রশ্নের জবাবে আব্দুর রহমান বদি বলেন, ‘মিডিয়া কী লিখেছে? কোন ফখরুদ্দিন (মূলত মির্জা ফখরুল হবে) কি বলেছেন তা নিয়ে আমার কোনো মাথা ব্যথা নেই, তেমন সময়ও আমার নেই।’
প্রসঙ্গত, মাদকবিরোধী সরকারের চলমান অভিযান শুরুর পরপরই বিএনপির নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে ইয়াবার বড় পৃষ্ঠপোষক হিসেবে এমপি আব্দুর রহমান বদির দিকে অভিযোগের আঙুল তুলেছিলেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
সেই প্রেক্ষাপটে ব্যঙ্গ করে মির্জা ফখরুলকে ফখরুদ্দিন বলেন এই আওয়ামী লীগ নেতা।
তিনি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘যদি কারও কাছে প্রমাণ থাকে তাহলে তা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার সঙ্গে চলুন। কোনো সাংবাদিকের যদি সৎ সাহস থাকে, বাংলাদেশের কোনো মিডিয়ার যদি সৎ সাহস থাকে তাহলে বলেন- বদি সাহেব, আপনার বিরুদ্ধে তথ্য-প্রমাণ পেয়েছি। সেগুলো মিডিয়ার মাধ্যমে জনগণকে দেখান। প্রয়োজনে আমাকে ডেকে নিয়ে যান, আমি এসব তথ্যের খণ্ডন করব। দেখি এমন সাহস কারও আছে কিনা।’
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন