রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলায় বাবার বাড়ি থেকে যৌতুকের টাকা এনে না দেওয়ায় সাথী বেগম নামে এক গৃহবধূকে হাত-পা বেঁধে মারধর করেছেন তার স্বামী গোলাম রব্বানী। এখানেই শেষ নয়, মারধরের একপর্যায়ে গোলাম রব্বানী কাঁচি দিয়ে স্ত্রী সাথী বেগমের মাথার চুলও কেটে দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার (২৪ মে) রাতে উপজেলার বালুয়া মাসুমপুর খেড়বাড়ি গ্রামে এ ঘটনা ঘটেছে। মিঠাপুকুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোজাম্মেল হক এ খবর নিশ্চিত করেছেন।
পুলিশ সূত্র জানায়, এ ঘটনায় শুক্রবার (২৫ মে) সকালে নিজে বাদী হয়ে গোলাম রব্বানীসহ তার শ্বশুরবাড়ির লোকজনের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা দায়ের করেছেন সাথী বেগম। এর পরপরই ঘটনার সঙ্গে জড়িত গোলাম রব্বানীর মামা আশরাফুলকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তবে গা-ঢাকা দেওয়ায় গোলাম রব্বানীকে গ্রেফতার করা যায়নি।
সাথী বেগম জামালপুর জেলার রামনগর এলাকার আলী আকবরের মেয়ে। মারধরে আহত হয়ে তিনি এখন মিঠাপুকুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। আর মূল অভিযুক্ত গোলাম রব্বানী রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার বালুয়া মাসুমপুর খেড়বাড়ি গ্রামের আব্দুল খালেকের ছেলে।
পুলিশ জানায়, একসময় ঢাকার একটি পোশাক কারখানায় কাজ করতেন সাথী বেগম। ওই সময় গোলাম রব্বানীর সঙ্গে তার পরিচয় হয়। পরে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্কও গড়ে উঠে। এতে প্রায় পাঁচ বছর আগে সাথী বেগম ও গোলাম রব্বানী বিয়ে করেন। বর্তমানে তাদের তিন বছর বয়সী একটি পুত্রসন্তানও রয়েছে।
পুলিশ আরও জানায়, গত ২৩ এপ্রিল ঢাকার চাকরি-বাকরি ছেড়ে সাথী বেগম ও গোলাম রব্বানী তাদের সন্তান নিয়ে মিঠাপুকুর উপজেলার বালুয়া মাসুমপুর খেরবাড়ি গ্রামে একেবারে চলে আসেন। এখানে আসার পর যৌতুকের জন্য স্ত্রীর ওপর নির্যাতন শুরু করেন গোলাম রব্বানী। আর তার এ কাজে প্ররোচনা দেন গোলাম রব্বানীর বাবা ও মামা। নির্যাতন থেকে বাঁচতে কিছু দিন আগে নিজের সব স্বর্ণের গয়না গোলাম রব্বানীর হাতে তুলে দেন সাথী বেগম, যার বাজারমূল্য লক্ষাধিক টাকা। এরপর সব আবার ভালোভাবে চলছিল। গত চার-পাঁচ দিন আগে থেকে আবারও যৌতুকের টাকার জন্য সাথী বেগমের ওপর নির্যাতন শুরু করেন গোলাম রব্বানী। গতকাল বৃহস্পতিবার স্থানীয় লোকজনসহ ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার-চেয়ারম্যানদের বিষয়টি জানান সাথী বেগম। এতে আরও ক্ষিপ্ত হয়ে রাতে সাথী বেগমের হাত-পা বেঁধে মারধর করেন গোলাম রব্বানী। আর তার এ কাজে সাহায্য করেন মামা আশরাফুল। মারধরের একপর্যায়ে তারা কাঁচি দিয়ে সাথী বেগমের মাথার চুল কেটে দেন।
শুক্রবার (২৫ মে) বিকালে সাথী বেগমকে দেখতে মিঠাপুকুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যান এ প্রতিবেদক। সাথী বেগম জানান, নির্যাতনের একপর্যায়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলেন তিনি। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসেন।
সাথী বেগম বলেন, ‘যৌতুক হিসেবে বাবার বাড়ি থেকে টাকা এনে না দেওয়ায় আমাকে নির্যাতন করা হয়েছে। একমাত্র ছেলের দিকে তাকিয়ে কয়েকবার বাবার বাড়ি থেকে টাকা এনেও তাকে (গোলাম রব্বানী) দিয়েছি। এমনকি, আমার সব গয়না নিয়েও সে বিক্রি করেছে।’
মিঠাপুকুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. শরীফ জানান, সাথী বেগমের শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তার চিকিৎসা চলছে।’
ওসি মোজাম্মেল হক জানান, এ ঘটনায় গোলাম রব্বানীসহ তার শ্বশুরবাড়ির লোকজনের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা দায়ের করেছেন সাথী বেগম। এরই মধ্যে ঘটনার সঙ্গে জড়িত একজনকে গ্রেফতারও করা হয়েছে। অন্য আসামিদের গ্রেফতারেরও চেষ্টা চলছে।’
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন