ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মেঘনা সেতুর টোলপ্লাজার যানজট প্রায়ই নারায়ণগঞ্জের মোগড়াপাড়া চৌরাস্তা পর্যন্ত এসে ঠেকছে। এ যানজট আরো তীব্র করে তুলছে সড়কের ধারে থাকা বিদ্যুতের খুঁটি। বাস-বে না থাকায় সড়কে বাস দাঁড় করিয়ে যাত্রী ওঠানামার কারণেও যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।
ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের গাজীপুরের কালিয়াকৈর সেতু নির্মাণের কাজ চলায় যানবাহন চলছে দুই লেনে। নির্মাণাধীন এ সেতুর আশপাশে গাড়ির চাপ বাড়লেই দেখা দিচ্ছে তীব্র যানজট।
দেশের ব্যস্ততম দুই মহাসড়ক ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-টাঙ্গাইলে যানজট সৃষ্টিকারী এ ধরনের অন্তত ১১টি স্পট চিহ্নিত করেছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ। যান চলাচল নির্বিঘ্ন করতে এসব স্পটের প্রতিবন্ধকতাগুলো দূর করার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে সংস্থাটি। তবে কাজের যে অগ্রগতি, তাতে ঈদের আগে এসব প্রতিবন্ধকতা দূর করা সম্ভব হবে কিনা, সন্দিহান সংশ্লিষ্টরা। ফলে ঈদযাত্রায় এসব স্থানে ভোগান্তির আশঙ্কা থাকছেই।
সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানজটপ্রবণ স্পট রয়েছে অন্তত সাতটি। এর প্রথমটি নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড চৌরাস্তা। এ এলাকার যানজট নিরসনে সড়কের খালি জায়গায় মাটি ভরাট করে বাস-বে নির্মাণ, রিজিড পেভমেন্ট ও প্রয়োজনে ডাইভারশন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হলেও কাজের তেমন অগ্রগতি নেই।
সাইনবোর্ডের পর যানজটের শঙ্কা রয়েছে নারায়ণগঞ্জের শিমরাইল এলাকায়। সড়কের ওপর বাস দাঁড় করিয়ে যাত্রী ওঠানো-নামানোর কারণেই মূলত যানজট হচ্ছে এখানে। এজন্য একটি বাস-বে নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ। তবে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ এখনো নেয়া হয়নি।
অবৈধ দখলের কারণে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কাঁচপুর অংশে যানজট নিয়মিত ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ অংশের যানজট দূর করতে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করে রাস্তা ১০ ফুট পর্যন্ত চওড়া ও একটি বাস-বে নির্মাণের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। দুই লেনের কাঁচপুর সেতুও এখানে যানজট বাড়িয়ে দিচ্ছে।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জের মদনপুরে যানজট নিরসনে এরই মধ্যে সড়কের প্রশস্ততা বাড়ানো হয়েছে; উচ্ছেদ করা হয়েছে অবৈধ দখলদারদেরও। তবে মদনপুর বাজারে পথচারী চলাচলের জন্য কোনো ফুটওভার ব্রিজ না থাকায় ঈদযাত্রায় এ স্থানে যানজটের আশঙ্কা থাকছে।
মহাসড়কের আরেকটি যানজটপ্রবণ এলাকা নারায়ণগঞ্জের মোগড়াপাড়া চৌরাস্তা। মেঘনা সেতুর টোলপ্লাজার যানজট মাঝেমধ্যেই এখানে এসে ঠেকছে। এ যানজটকে আরো তীব্র করে তুলছে রাস্তার ধারে থাকা বিদ্যুতের খুঁটি। মোগড়াপাড়া এলাকার যানজট দূর করতে ৩০ মের মধ্যে এসব খুঁটি সরানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ।
মোগড়াপাড়ার যানজট দূর করা হলেও শঙ্কা জাগাচ্ছে মেঘনা সেতুর টোলপ্লাজা। নব্বইয়ের দশকের শুরুতে নির্মিত দুই লেনের এ সেতুর কারণে চার লেনের ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে প্রায়ই যানজট হচ্ছে। গাড়ির চাপ বাড়লে তা তীব্র আকার ধারণ করে। এবারের ঈদযাত্রায় যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে এখানে টোলবুথের সংখ্যা আরেকটি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। টোলবুথ বাড়ানো হলেও তা যানজট নিরসনে ভূমিকা রাখার বদলে পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটাতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
টোলবুথের সংখ্যা বাড়িয়ে এখানকার যানজট নিরসন সম্ভব নয় বলে জানান বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মাহবুব আলম তালুকদার। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের এ দুই সেতুতে টোল আদায়ের কারণে কিছুটা যানজট সৃষ্টি হয়, এটা ঠিক। চার লেনের সুফল পেতে হলে বিষয়টি নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে। কারণ সেতু তো দুই লেনের। ফলে নির্দিষ্টসংখ্যক যানবাহনই পার হবে। বুথ বাড়ালে বিশৃঙ্খলা আরো বাড়বে।
সরেজমিন সেতু এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বর্তমানে আটটি টোলবুথ দিয়ে যানবাহন চলাচল করছে। বুথ আটটি হলেও সেতু দিয়ে এক লেনে যানবাহন আসে, অন্য লেনে যায়। মহাসড়কের দাউদকান্দির মেঘনা-গোমতী সেতুতেও ঠিক একই কারণে যানজট তৈরি হচ্ছে।
কয়েকদিন ধরে নির্মাণাধীন ফেনী রেলওয়ে ওভারপাসের কারণে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দীর্ঘ যানজট তৈরি হচ্ছে। সম্প্রতি ওভারপাস দিয়ে যান চলাচল উন্মুক্ত করে দেয়ায় যানজট পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে ঈদযাত্রায় যানবাহনের চাপ বাড়লে এ অংশেও যানজটের আশঙ্কা করা হচ্ছে।
চার লেনের কাজ চলছে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে। কাজ শেষ হবে ২০২০ সালের জুনে। নির্মাণকাজের কারণে মহাসড়কের বিভিন্ন অংশে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। মহাসড়কটির অন্তত চারটি স্পটে তীব্র যানজটের আশঙ্কা করা হচ্ছে। এর প্রথমটি সাভার ইপিজেডের সামনে। এখানকার যানজট নিরসনে সার্ভিস লেন বৃদ্ধির কাজ করছে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর। তবে ঈদের আগে কাজ শেষ করতে বৃষ্টিকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা।
মহাসড়কের কালিয়াকৈর সেতুর কাছে বর্তমানে দুই লেন দিয়ে যান চলাচল করছে। এখানেও ঈদযাত্রায় তীব্র যানজটের আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। মহাসড়কের টাঙ্গাইল এলেঙ্গা বাজারসংলগ্ন সড়কটির ভাঙাচোরা দশার কারণেও যানজট হচ্ছে। সড়কটি উন্নয়নে ৬০ লাখ টাকার একটি প্রকল্প প্রস্তাব সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী বরাবর পাঠানো হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে অনুমোদন হলে উন্নয়নকাজ শুরু হবে বলে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে।
অন্যদিকে টঙ্গী-আব্দুল্লাহপুর-আশুলিয়া-গাজীপুর চৌরাস্তা সড়কে চলছে বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের কাজ। প্রকল্পের কাজের জন্য সড়কটির বিভিন্ন স্থান অপ্রশস্ত হয়ে পড়েছে। এ কারণেও মহাসড়কের বেশ কয়েকটি পয়েন্টে যান চলাচল করছে থেমে থেমে। ঈদ ঘিরে যানবাহনের চাপ বাড়লে পরিস্থিতি আরো খারাপ হবে বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
মহাসড়কের এসব স্পটের পাশাপাশি বিভিন্ন কালভার্টও যানজট সৃষ্টি করছে বলে জানান সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের কর্মকর্তারা। তা সত্ত্বেও ঈদযাত্রায় যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে সব প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে বলে জানান সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, এবার ঈদে দেশের সড়ক-মহাসড়কগুলোয় যেন মানুষের ভোগান্তি না হয়, সে লক্ষ্যে কাজ করছি আমরা। ভাঙাচোরা স্থানগুলোয় সংস্কারকাজ চলছে। রোজার মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে বিভিন্ন স্থানের ভাঙাচোরা অংশের সংস্কার কাজ শেষ হবে। তবে বৈরী আবহাওয়ার (বৃষ্টি) কারণে সংস্কারকাজ কিছুটা বিলম্বিত হচ্ছে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন