মিয়ানমারের রাখাইন থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের মানবিক সেবা দেয়ার নামে বিভিন্ন এনজিও কাজ করছে। দিন দিন এ ধরনের এনজিও’র সংখ্যা বাড়ছে।
ক্যাম্পগুলোয় কত সংখ্যক এনজিও কাজ করছে, তার সঠিক তথ্য-উপাত্ত কারও কাছে নেই। যদিও প্রশাসনের লোকজন বলছেন, ১০৫টি এনজিও কাজ করছে। এসব এনজিও’র পদস্থ কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালনকারীর বেশিরভাগ বিদেশি নাগরিক। তারা ট্যুরিস্ট ভিসা নিয়ে এসে স্থায়ীভাবে চাকরি করছেন। আর এ সুযোগে জড়িয়ে পড়ছে নানা অনিয়মে।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংগ্রাম কমিটির নেতাদের অভিযোগ এসব বিদেশিরা প্রত্যাবাসনবিরোধী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত। এ কারণেই প্রত্যাবাসন বিলম্ব হচ্ছে। কক্সবাজার র্যাব-৭ এর পৃথক অভিযানে আটক এ পর্যন্ত ৭৬ জন বিদেশি নাগরিক বিভিন্ন শর্তে মুচলেকা নিয়ে ছাড়া পেলেও যথারীতি তারা বিভিন্ন এনজিওতে দায়িত্ব পালন করে চলেছেন।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংগ্রাম কমিটির সাধারণ সম্পাদক পালংখালী ইউপি চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, ‘সরকারি ও গোয়েন্দা নজরদারি না থাকার কারণে কিছু এনজিওতে কর্মরত বিদেশিরা অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছেন।
সম্প্রতি তুমব্রুসীমান্তের শূন্যরেখায় আশ্রয় নেয়া প্রায় ৬ হাজার রোহিঙ্গা থেকে এক পরিবারের ৫ সদস্য মিয়ানমারে পালিয়ে যাওয়ার নেপথ্যে কতিপয় এনজিও’র ইন্ধন রয়েছে। তারা রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া বিলম্বিত করার কূটকৌশল অবলম্বন করে নিজেদের আখের গোছানোর চেষ্টা করছে।
প্রত্যাবাসন বিলম্ব হলে তাদের চাকরির মেয়াদ বাড়বে- এ কারণেই তারা অপকর্ম করে চলেছে। এদের আটক করে নিজ নিজ দেশে পাঠিয়ে দেয়া না হলে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া আরও জটিল হবে।
উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নিকারুজ্জামান চৌধুরী জানান, ক্যাম্পে কর্মরত এনজিওগুলোয় দায়িত্ববান বিদেশিদের শনাক্তকরণ ও তাদের বৈধতা আছে কিনা, তা খতিয়ে দেখার জন্য প্রতি মাসে একটি করে সমন্বয় সভার আয়োজন করা হয়। কিন্তু ওই সভায় বিদেশিরা উপস্থিত থাকেন না। প্রতিনিধি পাঠিয়ে তারা দায়িত্ব শেষ করেন।
কক্সবাজার র্যাব-৭ এর কোম্পানি কমান্ডার মেজর রুহুল আমিন জানান, ২৩ ফেব্র“য়ারি সড়কপথে অভিযান চালিয়ে বৈধ কাগজপত্র না থাকায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কর্মরত ১১ বিদেশি নাগরিককে আটক করে থানায় সোপর্দ করা হয়। ১১ মার্চ আরও ৩৯ বিদেশি নাগরিককে আটক করা হয়। বৈধ কাগজপত্র না থাকায় তাদের থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। সর্বশেষ ১৯ এপ্রিল সড়কপথে ক্যাম্পে কর্মরত যানবাহনে তল্লাশি চালিয়ে ১৬ বিদেশিকে আটক করা হয়।
তারা হচ্ছেন জার্মানির নাগরিক ও নাফ রেডিও কমিউনিটি ৯৯.২ এফএম’র মার্শাল ও অ্যান্ড্রুস লাঙ্গ, আমেরিকার নাগরিক ও বেসরকারি সেবা সংস্থা এসএএলটিএফএলআই’র এনটওনিটি মেরি ও আন্দ্রে লুনিসিয়া, যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক ও হেল্প দ্য নিডির স্যামুয়েল কে হাসলাম, মেডিলাইন বেলী হাসলাম এবং টাটুম এডলি নেলসন, ট্রাসি মিচেল হাসলাম, মালাইসা ডান নেলসন, জন স্টিভেন ইভলিন; যুক্তরাজ্যের নিজার নাগিব দাহান, মার্কাস জেমস ভ্যালান্সি, মাজাফার, খালিদ হোসাইন, ইফতেখার মাসুদ এবং ড্যানিশ রিফিউজি কাউন্সিলের লিন্ডসে গ্রিম সু।
বাংলাদেশের প্রচলিত আইন মেনে চলবে, যাতায়াতের সময় প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সঙ্গে রাখবে ও বিকাল ৫টায় ক্যাম্প ত্যাগ করবে- এ শর্তে লিখিত মুচলেকা নিয়ে তাদের ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল খায়ের বলেন, ‘বিদেশি নাগরিকরা এদেশের আইনের প্রতি যাতে শ্রদ্ধাশীল থাকেন, সে কারণেই মাঝেমধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অভিযান চালায়। র্যাবের হাতে আটক ১৬ বিদেশি নাগরিকের কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে এবং তিনটি লিখিত শর্তে মুচলেকা নিয়ে তাদের ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন