নীলফামারীর সৈয়দপুরে স্ত্রীর মর্যাদার দাবিতে প্রেমিক চিকিৎসক স্বামীর পিতার বাড়িতে ৩৫ ঘণ্টা যাবৎ অবস্থান নিয়ে রয়েছেন ব্যাংকার স্ত্রী। শহরের অভিজাত এলাকার নতুন বাবুপাড়া সাদ্দাম মোড় সংলগ্ন এলাকার ধণাঢ্য ব্যবসায়ী জামাল উদ্দিনের বাড়িতে শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টা থেকে অবস্থান নিয়ে আছে সে।
জানা গেছে, সৈয়দপুরের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী জামাল উদ্দিনের ছেলে শহরের ডক্টরস ক্লিনিকের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডা. কামাল উদ্দিন রাজু। মুঠোফোনে মাধ্যমে তাঁর সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে শহরের বাঙালিপুর নিজপাড়া এলাকার অবসরপ্রাপ্ত মাদরাসা শিক্ষক মো. একরামুল হকের মেয়ে একটি বেসরকারি ব্যাংকের জুনিয়র কর্মকর্তা জেরিনা তাসনিম সিমির।
দীর্ঘদিনের এ প্রেমের সূত্র ধরে গত ২৭ জানুয়ারি প্রেমিক-প্রেমিকার যৌথ সম্মতিতে রংপুরের অভিজাত প্রতিষ্ঠান পর্যটন মোটেলে শরীয়ত মোতাবেক বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন তারা। এরপর থেকে তাদের মধ্যে নিয়মিত সাক্ষাৎ হলেও হঠাৎ করে সিমি’র সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয় ডা. রাজু। এ অবস্থায় তাদের মধ্যে দেখা দেয় নানা টানাপোড়েন।
এদিকে এর মধ্যে উভয় পরিবারের মাঝে রাজু ও সিমির বিয়ের ঘটনা জানাজানি হয়ে পড়ে। পরে ধনাঢ্য ব্যবসায়ী ছেলে রাজু সিমিকে তালাকপত্র পাঠায়। এ ঘটনায় তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব চরমে ওঠে। পরে গত শুক্রবার সন্ধ্যায় সমস্যা সমাধানে শহরের পুরাতন বাবুপাড়ার সিমির এক নিকটাত্মীয় বাসায় উভয়পক্ষকে নিয়ে একটি শালিস বৈঠক বসে। কিন্তু সে বৈঠকে কোনো সমাধান না হওয়ায় জেরিন তাসনিম সিমি ওইদিন রাতে স্ত্রী’র মর্যাদা আদায়ের দাবিতে প্রেমিক স্বামী ডা. রাজুর পিতা ধনাঢ্য ব্যবসায়ী জামাল উদ্দিনের বাড়ির সামনে অবস্থান নেয়। আর অল্প সময়েই শহরজুড়ে পুরো ঘটনাটি চাউর হয়ে পড়ে। পরে অবস্থান নেওয়া সিমিকে ওই বাড়ির সামনে থেকে সরিয়ে নেওয়ার জন্য রাজুর পরিবারের পক্ষ থেকে ম্যানেজ করা হয় একাধিক জনকে। কিন্তু স্ত্রীর মর্যাদা না দেওয়া পর্যন্ত এলাকা ত্যাগ করবে না জানিয়ে সিমির কঠোর অবস্থানের কারণে তাদের সে চেষ্টা ব্যর্থই পর্যবসিত হয়।
পরে অবস্থান নেওয়া সিমির নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে এমন আশংকায় এলাকাবাসীর চাপে ব্যবসায়ী জামাল উদ্দিন তার পরিত্যক্ত তালাবদ্ধ একটি বাড়ির দরজা খুলে দিলে গতকাল শনিবার বিকেল থেকে সেখানেই অবস্থান নেয় সে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত স্ত্রী’র মর্যাদার দাবিতে অবস্থান নেওয়া সিমি পরিত্যক্ত ওই বাসাতেই রয়েছেন।
ব্যাংকার জেরিন তাসনিম সিমি জানান, উভয়ের সম্মতিতেই বিয়ে হয়েছে। এখন তার শ্বশুরসহ অন্যান্যরা আমাদের বিয়ে মানছে না। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত সে এলাকা ত্যাগ করবে না বলে সাফ জানিয়ে দেয়।
সিমির পিতা একরামুল হক জানান, ইসলামী শরীয়াহ মোতাবেক রাজু ও সিমি স্বামী- স্ত্রী। কিন্তু এখন তার মেয়েকে স্ত্রীর মর্যাদা দিতে অস্বীকার করছে রাজু। তাই বাধ্য হয়ে সে শ্বশুর বাড়িতে অবস্থান নিয়েছে।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত রাজুর সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাকে না পাওয়ায় তার বাবা জামাল উদ্দিনের সাথে কথা হয়। তিনি জানান, এ বিয়েতে তাদের কোনো সম্মতি ছিল না। তার ছেলে রাজুকে বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করে মেয়ের পরিবার বিয়ের ঘটনা ঘটিয়েছেন।
এ নিয়ে কথা হলে সৈয়দপুর পৌরসভার ১৩, ১৪ ও ১৫ নম্বর সংরক্ষিত আসনের নারী কাউন্সিলর জ্যোস্না বেগম বলেন, ঘটনাটি সমাধানের চেষ্টা চলছে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন