গত আট মাসে টনপ্রতি রডের দাম বেড়েছে ১৯ হাজার টাকা। পাশাপাশি সিমেন্টেরও দাম বেড়েছে। দেশের আবাসন খাত ও চলমান বড় বড় প্রকল্পখাতে এটার প্রভাব পড়ছে। বিষয়টি নিয়ে খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বেগ প্রকাশ করে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বলে আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা তা ব্রেকিংনিউজকে নিশ্চিত করেছেন।
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, রড এবং সিমেন্টের দাম যেন অতি শীঘ্র কমানো হয় তার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন। প্রয়োজনে ট্যাক্স কমানোসহ শাস্তিমূলক ব্যবস্থার কথা চিন্তা করছেন। যেন অন্য উন্নয়নকাজ কোনক্রমেই ব্যাহত না হয়।
আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ রবিবার ব্রেকিংনিউজকে বলেন, গত কয়েক মাসে রডের দাম প্রতি টনে ২০ থেকে ২২ হাজার টাকা বৃদ্ধি করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা বলছেন। আন্তর্জাতিক বাজারে লোহার দাম এমন ভাবে বাড়েনি যে প্রতি টনে ২০ থেকে ২২ হাজার টাকা বাড়বে। যেহেতু শুস্ক মৌসুমে দেশে বেশির ভাগ উন্নয়ন কর্মকাণ্ড হয় তাই অতি লোভের আশায় একটি বিশেষ সিন্ডিকেট এই কাজ করছে। আবার সিমেন্টের দামও বেড়েছে যা যৌক্তিক নয়। এতে দেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড মারাত্মকভাবে ব্যহত হচ্ছে।
বাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে জানা গেছে, বিগত সাত আট মাস ধরে রড-সিমেন্টের দাম বাড়ছে। তবে ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, অস্বাভাবিকভাবে ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় রড ও সিমেন্টের দামও বেড়েই চলছে। কারণ এর কাঁচামাল আমদানি করতে হয়। রাজধানীতে মাস ছয় মাস আগেও ৬০ গ্রেড রডের দাম টনপ্রতি ৪৮ হাজার টাকা হলেও এখন প্রতি টন রড বিক্রি হচ্ছে ৭১ হাজার ৫০০ টাকায়। ঢাকার বাইরে আরও বেশি। অর্থাৎ ৮ মাসে বেড়েছে ১৯ হাজার টাকা।
অন্যদিকে ৬ মাসে প্রতি বস্তা (৫০ কেজি) সিমেন্টের দাম বেড়েছে ১০০ টাকা। এর ফলে আবাসন ও নির্মাণ খাতে ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। এছাড়া শুধু রড-সিমেন্ট নয়, ডলারের দাম ৪ টাকা বেড়ে যাওয়ায় প্রতিটি আমদানি পণ্যে সরাসরি এর প্রভাব পড়ছে। গুনতে হচ্ছে বাড়তি শুল্কহার। সাধারণ মানুষসহ যার প্রভাব পড়ছে সর্বত্র।
বাংলাদেশ অটো রি-রোলিং অ্যান্ড স্টিল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মানোয়ার হোসেন মিডিয়াকে বলেন, কোনো সিন্ডিকেট নয়, রডের মূল কাঁচামাল স্ক্র্যাপ লোহা আমদানির খরচ টনপ্রতি ৩০০ ডলার থেকে বেড়ে ৪৩৫ ডলার হয়েছে। এর একটা প্রধান কারণ চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য খালাসে দেরি হওয়ায় জাহাজ ভাড়া বৃদ্ধি। এছাড়া চট্টগ্রাম থেকে কাঁচামাল কারখানায় আনা এবং তৈরি পণ্য গ্রাহকের কাছে পৌঁছাতে টনপ্রতি আট হাজার টাকা পরিবহন ব্যয় বেড়েছে। যার কারণে রডের দাম বাড়ছে।
তবে আবাসন খাতের কর্তাব্যক্তিরা বলছেন, এখন রড-সিমেন্ট বিক্রির ভরা মৌসুম। তাই যৌক্তিক কোনো কারণ ছাড়াই দাম বাড়াচ্ছেন মিল মালিকরা। তারা সিন্ডিকেট করে অতিরিক্ত মুনাফা হাতিয়ে নিচ্ছে। আর সাধারণ ক্রেতাদের মতে, শুষ্ক মৌসুমে এ ধরনের মূল্যবৃদ্ধি ব্যবসায়ীদের পরিকল্পিত কারসাজি। কিন্তু ইস্পাত ও সিমেন্ট শিল্পসংশ্লিষ্টরা বলছেন, কাঁচামালের মূল্য ও পরিবহন খরচ বেড়ে গেছে।
ক্যাব সভাপতি ড. গোলাম রহমান বলেন, বাজারে কাঁচামালের দাম বৃদ্ধির অজুহাতে রডের দাম বাড়ানো হচ্ছে। ফলে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এছাড়া বেসরকারিভাবে যারা অবকাঠামো নির্মাণ করছে তাদের ওপর চাপ বাড়তে শুরু করেছে। যারা বাড়িঘর তৈরি করছে তাদেরও ব্যয় বাড়ছে। আর ভাড়াটিয়াদের এর ভার বহন করতে হবে। তাই সরকারের উচিত দাম বৃদ্ধির বিষয়টি এখনই খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়া।
এদিকে সিমেন্ট ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ৬ মাসে বিভিন্ন কোম্পানির সিমেন্টের বস্তা (৫০ কেজি) দাম বৃদ্ধি পেয়েছে ৮০ থেকে ১০০ টাকা। ৬ মাস আগে বিভিন্ন কোম্পানির সিমেন্ট প্রতি বস্তা বিক্রি হতো ৩৬০ থেকে ৩৯০ টাকা। বর্তমান বাজারে তা বিক্রি হচ্ছে ৪৬০ থেকে ৪৭০ টাকা।
ব্রেকিংনিউজ
পাঠক মন্তব্য
বিগত দিনগুলোতে নির্মান সেক্টরের অবস্থা নাজুক থাকাতে নির্মান কাজ তেমন হয় নাই।তখন রড সিমেন্টের দাম কম ছিল।বর্তমানে সুদের হার কম হওয়াতে নির্মান সেক্টরের প্রাণ কিছুটা ফিরে আসতে শুরু করে।এই সুযোগে ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন অযুহাত দাঁড় করিয়ে দাম বাড়াচ্ছে।
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন