‘ও ভুল করেছিল, ওর ভুলের কারণে পরিবারের সবাই আমরা বিপদে অাছি, মাশুল দিতে হচ্ছে সবাইকে। ছোট দুইটা বাচ্চা নিয়ে আমি কী করব, বুঝতে পারছি না।’
শনিবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের মর্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হাসানের মরদেহ নিতে এসে স্ত্রী তানিয়া এভাবে আহাজারি করছিলেন।
তিনি বলেন, হাসান কিভাবে এই ভুল পথে পা বাড়ালো অামাদের কারো জানা ছিল না।
পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে স্বামী নিহতের ঘটনা প্রতিবেশিদের মাধ্যমে জানতে পারেন বলে জানান তানিয়া।
শনিবার দুপুরে নিহত হাসানের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয় ঢামেক হাসপাতাল মর্গে।
ময়নাতদন্ত শেষে ঢামেক হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রভাষক ডা. প্রদীপ বিশ্বাস জানিয়েছেন, একটি গুলি হাসানের কানের বাম পাশ দিয়ে ঢুকে ডান পাশের দিকে যায়। এই গুলিটি বের করা হয়েছে। আরেকটি গুলি বাম গালের পাশ দিয়ে ঢুকে অন্য পাশ দিয়ে বেরিয়ে গেছে।
ময়নাতদন্ত শেষে নিহতের লাশ স্ত্রী তানিয়ার কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মিরপুর থানার এসআই মঞ্জুর রাহি।
মিরপুরের মধ্য পীরেরবাগের ৬০ ফুট ভাঙা ব্রিজের কাছে গত ২২ মার্চ রাতে গোয়েন্দা পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয় হাসান। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় বেশ কয়েকটি মামলা ছিল।
গত ১৯ মার্চ রাতে অস্ত্র উদ্ধারের সময় হাসানের গুলিতে নিহত হন ডিবি পুলিশের পরিদর্শক জালালউদ্দিন। এসময় কিলার হাসানসহ তার সহযোগিরা পালিয়ে যায়। পরের দিন ২২ মার্চ রাতে হাসান গোয়েন্দা পুলিশের সাথে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়।
নিহত হাসানের লাশের পাশে মিরপুর থেকে দুই সার্জেন্টের চুরি হওয়া সরকারি দুটি অস্ত্র উদ্ধারসহ ঘটনাস্থল থেকে আরেকটি অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার হয়।
হাসানের সহযোগী মানিকসহ অন্যদের গ্রেফতারে অভিযান চালালেও কাউকে এখনও গ্রেফতার করতে পারেনি গোয়েন্দা পুলিশ।
ঘটনার পরপরই নিহতের স্ত্রীকে অাটক করার পর পরিদর্শক জালালউদ্দিনকে স্বামীই হত্যা করেছে বলে অাদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন তানিয়া।
ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে গত ২২ মার্চ সাক্ষি হিসেবে দেওয়া জবানবন্দিতে তিনি বলেন, ঘটনার দিন রাত সাড়ে ১১টায় আমি দুই মেয়েসহ নিজ ঘরে ঘুমাতে যাই। আমাদের ভাড়া বাসাটা দোতলা বিল্ডিংয়ের ছাদের ওপর টিনশেড। এ সময় আমার স্বামী হাসান (২৬) ও তার বন্ধু মানিক (২২) ঘরের বাইরে ছাদের ওপর মাদুর বিছিয়ে বসেছিল। এর কিছু সময় পর কুকুরের ডাক শব্দ শুনতে পাই। আমি ঘর থেকে বের হয়ে দেখি আমার স্বামী ও তার বন্ধু মানিক ছাদের কোনায় দাঁড়িয়ে একজন লোককে লক্ষ্য করে হাতে থাকা কালো রংয়ের পিস্তল দিয়ে গুলি করছে। গুলি লাগার পর গুলিবিদ্ধ লোকটি বলেন, ‘স্যার, আমাকে বাঁচান’। আমি ভয় পেয়ে তাড়াতাড়ি ঘরের ভেতরে চলে যাই। ওই সময় আরও কয়েক রাউন্ড গুলির শব্দ শুনি। আমার স্বামী ও তার বন্ধু ছাদের দক্ষিণ পাশ দিয়ে নিচে নেমে পালিয়ে যায়। পরে জানতে পারি হাসান যে লোকটিকে গুলি করেছে তিনি পুলিশের লোক এবং গুলিবিদ্ধ হয়ে তিনি মারা গেছেন।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন