দুর্ঘটনাকবলিত এক ব্যক্তি দরকারি চিকিৎসার অভাবে যশোরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে মারা গেছেন বলে অভিযোগ করা হচ্ছে। শুধু তা-ই নয়, ওই ব্যক্তির শরীরে অস্ত্রোপচার করা হবে বলে জানালেও কর্তৃপক্ষ তা করেনি। এ কারণেই তিনি মারা যান বলে অভিযোগ রয়েছে। অথচ শুধু ব্যান্ডেজ করে ওই ব্যক্তির স্বজনদের কাছে ২২ হাজার টাকা বিল চাওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে বাদানুবাদ ও হট্টগোলও হয়েছে।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করে ভিন্ন বক্তব্য দিচ্ছে। গণমাধ্যমকর্মীরা জেনে যাওয়ায় ঘটনা চেপে যাওয়ারও চেষ্টা করে তারা।
শুক্রবার বিকেলে কুদরত আলী (৬০) নামে এক ব্যক্তি চৌগাছা পৌরসভার সামনে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হন। তিনি ওই উপজেলার পাতিবিলা ইউনিয়নের নিয়ামতপুর গ্রামের মৃত দরবেশ বিশ্বাসের ছেলে।
তার ছেলে হাসান আলী, সিরাজুল ও নাতিজামাই জনি মিয়া জানান, দুর্ঘটনায় কুদরতের মাথা, কোমর ও পায়ে গুরুতর আঘাত লাগে। পরিবারের লোকজন তাকে উদ্ধার করে ওই দিন সন্ধ্যার পর যশোর শহরের রেলগেট মুজিব সড়কে ডাক্তার আব্দুর রউফের মালিকানাধীন পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানে তখন অস্ত্রোপচারের যোগ্যতাসম্পন্ন কোনো ডাক্তার ছিলেন না। তা সত্ত্বেও হাসপাতালটির কর্মীরা অস্ত্রোপচারের নাম করে কুদরতকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যান। সেখানে কুদরকে তিন ঘণ্টা রাখা হয়। এ সময় তিন ব্যাগ ও পজেটিভ রক্ত আনতে বলেন তারা। স্বজনরা নগদ টাকায় রক্ত কিনে আনেন। ডিজিটাল এক্স-রেও করানো হয় মোটা টাকা খরচ করিয়ে। কিন্তু পরিবারটির কাউকে কুদরতের কাছে যেতে দেয়া হয়নি।
পরিবারটির সদস্যরা জানতে পেরেছেন, অপারেশন থিয়েটাওে কুদরতের শরীরে অস্ত্রোপচার করা হয়নি। ক্ষতস্থানে শুধু ড্রেসিং করে ব্যান্ডেজ দিয়ে রাখা হয়েছে। অথচ ২২ হাজার টাকা বিল দাবি করা হয়।
তারা জানান, দরকারি চিকিৎসা না পেয়ে কুদরতের অবস্থা খারাপের দিকে যায়। গভীর রাতে হাসপাতাল থেকে আহত ব্যক্তির স্বজনদের তা জানিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য অন্য কোনো হাসপাতালে স্থানান্তরের পরামর্শ দেয়া হয়।
‘উপায়ন্তর না পেয়ে রাত দেড়টার দিকে ছেলেরা আব্বাকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে নেয়। এখানকার ডাক্তার তাকে সার্জারি ওয়ার্ডে ভর্তি করেন। শনিবার সকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান,’ বলছিলেন কুদরতের ছেলে হাসান।
তার আরেক ছেলে সিরাজুল বলেন, ‘মৃত্যুর পর লাশ জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠায় কর্তৃপক্ষ। মর্গের সামনে চলে আসে পঙ্গু হাসপাতালের কর্মচারী মনিরুজ্জামান বাবু ও তার ভাই জাফর ইকবাল। তারা সেখানে টাকার জন্য হট্টগোল সৃষ্টি করে।’
এব্যাপাওে বেসরকারি পঙ্গু হাসপাতালের মালিক ডাক্তার আব্দুর রউফের নাম্বারে বারবার ফোন দিলেও তিনি কেটে দেন।
তবে হাসপাতালের শিফট ম্যানেজার ইদ্রিস আলী উল্লিখিত অভিযোগ অস্বীকার করেন। তার দাবি, কুদরতকে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। কিন্তু তার স্বজনরা হাসপাতালের পাওনা না মিটিয়ে চলে যান।
ডাক্তার আব্দুর রউফের ব্যক্তিগত সহকারী মনিরুজ্জামান বাবু বলেন, ‘ওরা আমাদের হাসপাতালে মাত্র দশ হাজার টাকা দিয়েছে। আর আমার ভাইয়ের ওষুধের দোকানে (মরিয়ম ফার্মেসী) বাকি থাকা ছয় হাজার টাকা দিয়েছে।’
জেনারেল হাসপাতালের সার্জারি ওয়ার্ডের সিনিয়র নার্স রহিমা খাতুন ইন্টার্ন ডাক্তার সজীবের উদ্ধৃতি দিয়ে জানান, সড়ক দুর্ঘটনায় আহত কুদরত নামে এক ব্যক্তি শনিনবার বেলা ১১টার দিকে মারা গেছেন।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন